বটু কৃষ্ণ হালদার
বর্তমান সময়ে হিন্দুদের উপর অত্যাচারের ফলে সোনার বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি উত্তাল ও চাঞ্চল্যপূর্ণ। কুমিল্লার এক দুর্গা মন্দিরে হনুমানের কোলে কোরআন শরীফে রেখে অবমাননার দায়ে এক শ্রেণীর বর্বর ও অসভ্যরা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে হত্যাকাণ্ডে মেতে উঠেছে। যা বর্তমান সময়ে এই ঘটনায় লজ্জিত ও স্তম্ভিত বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ও মানব সভ্যতা। আজকের দিনে আমরা যে সময় দাঁড়িয়ে আছি তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক। বিজ্ঞানকে হাতিয়ার করে মানুষ চাঁদে পর্যন্ত অবতরণ করতে শুরু করেছে। সেই অত্যাধুনিক সুসভ্যতার যুগের এখনো একশ্রেণীর বর্বররা তলোয়ার হাতে নিয়ে মানুষ কুপিয়ে বেড়াচ্ছে ধর্মের নামে। কারণ হিন্দুদের ধর্ম স্থানে কোরআন কেন রাখা হয়েছে? মূল উদ্দেশ্য কি এটাই? যাইহোক এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বর্তমানে বাংলাদেশের কুমিল্লা পার্শ্ববর্তী বহু এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। বহু মন্দির ভাঙ্গা হয়েছে,এমনকি ইসকনের সাধুদের হত্যা করা হয়েছে।ধীরে ধীরে তুষের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের সর্বত্র জায়গায়। একের পর এক ঘরবাড়ি জ্বলছে। তবুও এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বর্তমান এই ভয়াবহ পরিস্থিতি কিন্তু আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ১৯৪৬ সালের ঘটে যাওয়া সেই ভয়ঙ্কর দাঙ্গার ঘটনা।যেখানে ও ছিল পূর্ব পরিকল্পনার চক্রান্ত।
স্বাধীনতা লাভের ঠিক এক বছর আগে যে ঘটনা ঘটেছিল হয়তো বা আমাদের অনেকের জানা আবার অজানা।এক্ষেত্রে পুরানো স্মৃতি একটু উস্কে নেওয়া দরকার হয়েছে। কেন হয়েছিল সেই দাঙ্গা? ১৯৪০ এর দশকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের তুরুপের তাস হয়ে উঠেছিল দুটি রাজনৈতিক দল। এক, ভারতের জাতীয় কংগ্রেস, দ্বিতীয় টি মুসলিম লীগ। একদিকে মহাত্মা গান্ধী ও জহরলাল নেহেরু তাদের দল বল, অন্যদিকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে মুসলিম লীগ এগিয়ে চলেছে সুদুরপ্রসারি চিন্তাভাবনা নিয়ে।দুই দলের লক্ষ্য মাত্রা এক ছিল, যেকোনো মূল্যে দেশকে ব্রিটিশদের কবল থেকে মুক্তি দিতে হবে। আর দেশ স্বাধীন হলে কারও না কারও হাতে উঠবে দেশের লাগাম। সমস্যার সূত্রপাত এখান থেকেই। ব্রিটিশ সরকার অবশেষে ১৯৪৬ সালে সিদ্ধান্ত নিলেন ভারতকে ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে আরও বলা যায় যেটি ছিল ব্রিটিশদের চক্রান্ত। কারণ তারা জানত দুটি দল যেভাবে ঝাপিয়ে পড়েছে তাদের কেউ না কেউ দেশের লাগাম হাতে নিতে চাইবে। ঠিক তেমনটাই ঘটলো। ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস প্রদানে ব্রিটিশরা কার উপর দেশের দায়িত্ব ছাড়বে তা ঠিক করার জন্য দুই রাজনৈতিক দলকে তাদের সিদ্ধান্ত জানাতে বললেন। কিন্তু জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ কেউ কারো জায়গা থেকে একচুলও নড়ল না।একটি দেশে দুই জন প্রধানমন্ত্রী দাবিদার হয়ে উঠল। যদি মোহম্মদ আলী জিন্নাহ প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে জহরলাল নেহেরু বিপদ নেবেন? আর সেজন্যই জাতীয় কংগ্রেসের কাছে দেশভাগ টা খুব জরুরী হয়ে উঠেছিল।সেই পূর্ব পরিকল্পনামাফিক দেশ ভাগাভাগি হলো। জহরলাল নেহেরু ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উভয়ের স্বার্থ পূরণ হলো। এদের নোংরা চক্রান্তে নৃশংসভাবে মারা গেল লক্ষ লক্ষ মানুষ। কিন্তু আরও একটা প্রশ্ন সে সময় ঘোরাঘুরি করছিল যে স্বাধীনতায় অংশগ্রহণ করেছিল বলে লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে মুসলমানরা পাকিস্তান পেল কিন্তু এই ভারতবর্ষের বুকে অবাঞ্চিত,লাঞ্ছিত,অত্যাচারিত, উপেক্ষিত হিন্দুরা কি পেল?
ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের এক বছর আগে থেকেই অবিভক্ত বাংলা প্রদেশ ছিল অগ্নিগর্ভ। হিন্দু ও মুসলমান সমাজের পারষ্পরিক সন্দেহ, অবিশ্বাস আর ঘৃণা এমন এক অবিশ্বাস্য পর্যায়ে পৌঁছেছিল যার জেরে ১৬ই অগাস্ট, ১৯৪৬ ঘটে যায় পূর্ব ভারতের ইতিহাসের কুখ্যাত সাম্প্রদায়িক হত্যাযজ্ঞ – ‘দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস’।দাঙ্গা শুরুর প্রথম ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাণ হারান ৪,০০০ নিরীহ হিন্দু ও মুসলমান, এবং গৃহহীন হন এক লক্ষেরও বেশি মানুষ। শুধু হত্যাকান্ড নয় চলেছিল চরম অত্যাচার।অবশেষে বাধ্য হয়ে হিন্দুরা তুলে নিলেন হাতিয়ার। সমগ্র কলকাতায় বর্বর মুসলমানদের হাত থেকে হিন্দুদের বাঁচানোর জন্য মসিহা হয়ে উঠলেন গোপাল মুখার্জি গোপাল পাঁঠা। তবে এখানে বলে রাখা ভালো এই দাঙ্গা ছিল পূর্বপরিকল্পিত মাফিক। তৎকালীন কিছু স্বার্থান্বেষী কংগ্রেসের চেয়ে ছিলেন এই দাঙ্গা না হলে দেশ ভাগ হবে না। দেশভাগ না হলে জহরলাল নেহেরুর প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না। তাই সেই পরিকল্পনামাফিক কলকাতার বুকে তাবড় তাবড় হিন্দু পুলিশ অফিসারদের সরিয়ে দিয়ে মুসলমান অফিসার নিয়োগ করা চলছিল বেশ কয়েক মাস যাবত। তখনো কিন্তু সম্প্রীতির বার্তা বাহক হিন্দুরা বুঝতে পারেনি যে তাদের কপালে নামতে চলেছে চরম দুর্ভোগ। যাই হোক হিন্দুরা যখন গােপাল মখার্জির নেতত্বে শিখ ও বিহারি গােয়ালাদের সহযােগিতায় রুখে দাঁডালাে তখন জেহাদিরা রণে ভঙ্গ দিল। এরপর তারা লক্ষীপূজার রাতে নােয়াখালি জেলাকে বেছে নিল। তৎকালীন সেখানে হিন্দুর সংখ্যা ১৮ শতাংশ, মুসলমানের সংখ্যা ৮২ শতাংশ। এখানেও একটু বলে রাখা দরকার যারা নিজেদেের স্বার্থে
শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে গদি লাভ করেছিল তাদেরকে ইতিহাস যথাযোগ্য সম্মান দিয়েছে, অথচ তৎকালীন সময়ে যে মানুষগুলো বিভীষিকাময় ধ্বংসযজ্ঞের হাত থেকে কলকাতা কে বাঁচিয়ে ছিলো তিনি রয়ে গেলেন ইতিহাসের আড়ালে। বিশেষ করে কলকাতাবাসীদের গোপাল মুখার্জি কথা তো ভুলে যাওয়ার কথাই নয়।
যাই হোক,হিন্দুদের উপর এই গণহত্যার শুরু হয়েছিল ১৯৪৬ সালের ১০ অক্টোবর কোজাগরি লক্ষ্মী পূজার দিন এবং প্রায় চার সপ্তাহ ধরে অব্যাহত ছিল। তাতে প্রায় কমপক্ষে ৫০,০০০ হিন্দু হত্যা করা হয়েছে বলে অনুমান করা হয়।তাছাড়া অনেক হিন্দু নারী ধর্ষণের শিকার হন এবং হাজার হাজার হিন্দু নার পুরুষদের জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়।প্রায় ৫,০০০ থেকে ৭,৫০০ বেঁচে থাকা হতভাগ্যকে কুমিল্লা, চাঁদপুর, আগরতলা ও অন্যান্য জায়গার অস্থায়ী আশ্রয় শিবির গুলোতে আশ্রয় দেয়া হয়। তাছাড়া প্রায় ৫০,০০০ হিন্দু আক্রান্ত এলাকায় মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকে। কিছু এলাকায় হিন্দুদেরকে স্থানীয় মুসলিম নেতাদের অনুমতি নিয়ে চলা ফেরা করতে হত। জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তরিতদের কাছ থেকে জোর করে লিখিত রাখা হয়েছিল যেখানে লেখা ছিল তারা স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়েছে। তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট বাড়িতে বা ঘরে আবদ্ধ করে রাখা হত এবং যখন কোন আনুষ্ঠানিক পরিদর্শক দল পরিদর্শনে আসত তখন তাদেরকে ওই নির্দিষ্ট বাড়িতে যাবার অনুমতি দেয়া হত। হিন্দুদেরকে ওই সময় মুসলিম লীগকে চাঁদা দিতে হত যাকে বলা হত জিজিয়া যা একসময় ভারতবর্ষে প্রচলিত ছিল। মুসলিম শাসন আমলে হিন্দুরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য তৎকালিন শাসকদের জিজিয়া নামক বাড়তি প্রদান করত।
নৃশংসতার কথা ভাবুন একবার, খুন জখম হত্যা ধর্ষণ, এমনকি মানুষের মুন্ডু কেটে ফুটবল খেলা হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষ তো উদ্বাস্তু হয়েছিল, এমনকি রাস্তায় আটক করে তাদের উপরে চলেছিল নির্বিচারে গুলি। নারীদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ক্যাম্পগুলোতে। সেখানে চলত পাশবিক অত্যাচার, ধর্ষণের পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে যোনিপথ খুঁচিয়ে দেওয়া হতো।কাটা হত নারীদের স্তন।ভাবতে পারছেন, সভ্য সমাজের জীবনে এমন নৃশংস ঘটনা কা রা ঘটাতে পারতেন? শুনেছি বনের হিংস্র জন্তুর এর মধ্যেও মায়া-মমতা ছিল। কিন্তু এমন অসভ্য বর্বর হায়নাদের মধ্যে তা ছিল না। বর্তমান বাংলাদেশের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের এবার ভাবার সময় এসেছে। তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশে প্রায় ৩০ শতাংশ হিন্দু ছিল,২০২১ সালে এসে পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ, হিসাব কি বাংলাদেশের কোন সরকারই জানতো না? সবই জানে তবু শুধু শুধু নাটক করা।পশ্চিম বাংলার হিন্দু রা যদি না ভাবেন ত একদিন তারাই এখান থেকে উদ্বাস্তু তে পরিণত হবে ভবিষ্যতে, এই বিষয়টা নিশ্চিত ভাবে বোঝা যাচ্ছে।
বটু কৃষ্ণ হালদার, কবর ডাঙ্গা,কল১০৪,ফোন৮৬১৭২৫৫৯৫৮
কুমিল্লায় ঘটে যাওয়া নরকীয় হত্যাকাণ্ড ১৯৪৬ সালে দাঙ্গার পরিকল্পিত পূর্বাভাস
বটু কৃষ্ণ হালদার
বর্তমান সময়ে হিন্দুদের উপর অত্যাচারের ফলে সোনার বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি উত্তাল ও চাঞ্চল্যপূর্ণ। কুমিল্লার এক দুর্গা মন্দিরে হনুমানের কোলে কোরআন শরীফে রেখে অবমাননার দায়ে এক শ্রেণীর বর্বর ও অসভ্যরা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে হত্যাকাণ্ডে মেতে উঠেছে। যা বর্তমান সময়ে এই ঘটনায় লজ্জিত ও স্তম্ভিত বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ও মানব সভ্যতা। আজকের দিনে আমরা যে সময় দাঁড়িয়ে আছি তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক। বিজ্ঞানকে হাতিয়ার করে মানুষ চাঁদে পর্যন্ত অবতরণ করতে শুরু করেছে। সেই অত্যাধুনিক সুসভ্যতার যুগের এখনো একশ্রেণীর বর্বররা তলোয়ার হাতে নিয়ে মানুষ কুপিয়ে বেড়াচ্ছে ধর্মের নামে। কারণ হিন্দুদের ধর্ম স্থানে কোরআন কেন রাখা হয়েছে? মূল উদ্দেশ্য কি এটাই? যাইহোক এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বর্তমানে বাংলাদেশের কুমিল্লা পার্শ্ববর্তী বহু এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। বহু মন্দির ভাঙ্গা হয়েছে,এমনকি ইসকনের সাধুদের হত্যা করা হয়েছে।ধীরে ধীরে তুষের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের সর্বত্র জায়গায়। একের পর এক ঘরবাড়ি জ্বলছে। তবুও এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বর্তমান এই ভয়াবহ পরিস্থিতি কিন্তু আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ১৯৪৬ সালের ঘটে যাওয়া সেই ভয়ঙ্কর দাঙ্গার ঘটনা।যেখানে ও ছিল পূর্ব পরিকল্পনার চক্রান্ত।
স্বাধীনতা লাভের ঠিক এক বছর আগে যে ঘটনা ঘটেছিল হয়তো বা আমাদের অনেকের জানা আবার অজানা।এক্ষেত্রে পুরানো স্মৃতি একটু উস্কে নেওয়া দরকার হয়েছে। কেন হয়েছিল সেই দাঙ্গা? ১৯৪০ এর দশকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের তুরুপের তাস হয়ে উঠেছিল দুটি রাজনৈতিক দল। এক, ভারতের জাতীয় কংগ্রেস, দ্বিতীয় টি মুসলিম লীগ। একদিকে মহাত্মা গান্ধী ও জহরলাল নেহেরু তাদের দল বল, অন্যদিকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে মুসলিম লীগ এগিয়ে চলেছে সুদুরপ্রসারি চিন্তাভাবনা নিয়ে।দুই দলের লক্ষ্য মাত্রা এক ছিল, যেকোনো মূল্যে দেশকে ব্রিটিশদের কবল থেকে মুক্তি দিতে হবে। আর দেশ স্বাধীন হলে কারও না কারও হাতে উঠবে দেশের লাগাম। সমস্যার সূত্রপাত এখান থেকেই। ব্রিটিশ সরকার অবশেষে ১৯৪৬ সালে সিদ্ধান্ত নিলেন ভারতকে ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে আরও বলা যায় যেটি ছিল ব্রিটিশদের চক্রান্ত। কারণ তারা জানত দুটি দল যেভাবে ঝাপিয়ে পড়েছে তাদের কেউ না কেউ দেশের লাগাম হাতে নিতে চাইবে। ঠিক তেমনটাই ঘটলো। ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস প্রদানে ব্রিটিশরা কার উপর দেশের দায়িত্ব ছাড়বে তা ঠিক করার জন্য দুই রাজনৈতিক দলকে তাদের সিদ্ধান্ত জানাতে বললেন। কিন্তু জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ কেউ কারো জায়গা থেকে একচুলও নড়ল না।একটি দেশে দুই জন প্রধানমন্ত্রী দাবিদার হয়ে উঠল। যদি মোহম্মদ আলী জিন্নাহ প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে জহরলাল নেহেরু বিপদ নেবেন? আর সেজন্যই জাতীয় কংগ্রেসের কাছে দেশভাগ টা খুব জরুরী হয়ে উঠেছিল।সেই পূর্ব পরিকল্পনামাফিক দেশ ভাগাভাগি হলো। জহরলাল নেহেরু ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উভয়ের স্বার্থ পূরণ হলো। এদের নোংরা চক্রান্তে নৃশংসভাবে মারা গেল লক্ষ লক্ষ মানুষ। কিন্তু আরও একটা প্রশ্ন সে সময় ঘোরাঘুরি করছিল যে স্বাধীনতায় অংশগ্রহণ করেছিল বলে লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে মুসলমানরা পাকিস্তান পেল কিন্তু এই ভারতবর্ষের বুকে অবাঞ্চিত,লাঞ্ছিত,অত্যাচারিত, উপেক্ষিত হিন্দুরা কি পেল?
ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের এক বছর আগে থেকেই অবিভক্ত বাংলা প্রদেশ ছিল অগ্নিগর্ভ। হিন্দু ও মুসলমান সমাজের পারষ্পরিক সন্দেহ, অবিশ্বাস আর ঘৃণা এমন এক অবিশ্বাস্য পর্যায়ে পৌঁছেছিল যার জেরে ১৬ই অগাস্ট, ১৯৪৬ ঘটে যায় পূর্ব ভারতের ইতিহাসের কুখ্যাত সাম্প্রদায়িক হত্যাযজ্ঞ – ‘দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস’।দাঙ্গা শুরুর প্রথম ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাণ হারান ৪,০০০ নিরীহ হিন্দু ও মুসলমান, এবং গৃহহীন হন এক লক্ষেরও বেশি মানুষ। শুধু হত্যাকান্ড নয় চলেছিল চরম অত্যাচার।অবশেষে বাধ্য হয়ে হিন্দুরা তুলে নিলেন হাতিয়ার। সমগ্র কলকাতায় বর্বর মুসলমানদের হাত থেকে হিন্দুদের বাঁচানোর জন্য মসিহা হয়ে উঠলেন গোপাল মুখার্জি গোপাল পাঁঠা। তবে এখানে বলে রাখা ভালো এই দাঙ্গা ছিল পূর্বপরিকল্পিত মাফিক। তৎকালীন কিছু স্বার্থান্বেষী কংগ্রেসের চেয়ে ছিলেন এই দাঙ্গা না হলে দেশ ভাগ হবে না। দেশভাগ না হলে জহরলাল নেহেরুর প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না। তাই সেই পরিকল্পনামাফিক কলকাতার বুকে তাবড় তাবড় হিন্দু পুলিশ অফিসারদের সরিয়ে দিয়ে মুসলমান অফিসার নিয়োগ করা চলছিল বেশ কয়েক মাস যাবত। তখনো কিন্তু সম্প্রীতির বার্তা বাহক হিন্দুরা বুঝতে পারেনি যে তাদের কপালে নামতে চলেছে চরম দুর্ভোগ। যাই হোক হিন্দুরা যখন গােপাল মখার্জির নেতত্বে শিখ ও বিহারি গােয়ালাদের সহযােগিতায় রুখে দাঁডালাে তখন জেহাদিরা রণে ভঙ্গ দিল। এরপর তারা লক্ষীপূজার রাতে নােয়াখালি জেলাকে বেছে নিল। তৎকালীন সেখানে হিন্দুর সংখ্যা ১৮ শতাংশ, মুসলমানের সংখ্যা ৮২ শতাংশ। এখানেও একটু বলে রাখা দরকার যারা নিজেদেের স্বার্থে
শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে গদি লাভ করেছিল তাদেরকে ইতিহাস যথাযোগ্য সম্মান দিয়েছে, অথচ তৎকালীন সময়ে যে মানুষগুলো বিভীষিকাময় ধ্বংসযজ্ঞের হাত থেকে কলকাতা কে বাঁচিয়ে ছিলো তিনি রয়ে গেলেন ইতিহাসের আড়ালে। বিশেষ করে কলকাতাবাসীদের গোপাল মুখার্জি কথা তো ভুলে যাওয়ার কথাই নয়।
যাই হোক,হিন্দুদের উপর এই গণহত্যার শুরু হয়েছিল ১৯৪৬ সালের ১০ অক্টোবর কোজাগরি লক্ষ্মী পূজার দিন এবং প্রায় চার সপ্তাহ ধরে অব্যাহত ছিল। তাতে প্রায় কমপক্ষে ৫০,০০০ হিন্দু হত্যা করা হয়েছে বলে অনুমান করা হয়।তাছাড়া অনেক হিন্দু নারী ধর্ষণের শিকার হন এবং হাজার হাজার হিন্দু নার পুরুষদের জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়।প্রায় ৫,০০০ থেকে ৭,৫০০ বেঁচে থাকা হতভাগ্যকে কুমিল্লা, চাঁদপুর, আগরতলা ও অন্যান্য জায়গার অস্থায়ী আশ্রয় শিবির গুলোতে আশ্রয় দেয়া হয়। তাছাড়া প্রায় ৫০,০০০ হিন্দু আক্রান্ত এলাকায় মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকে। কিছু এলাকায় হিন্দুদেরকে স্থানীয় মুসলিম নেতাদের অনুমতি নিয়ে চলা ফেরা করতে হত। জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তরিতদের কাছ থেকে জোর করে লিখিত রাখা হয়েছিল যেখানে লেখা ছিল তারা স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়েছে। তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট বাড়িতে বা ঘরে আবদ্ধ করে রাখা হত এবং যখন কোন আনুষ্ঠানিক পরিদর্শক দল পরিদর্শনে আসত তখন তাদেরকে ওই নির্দিষ্ট বাড়িতে যাবার অনুমতি দেয়া হত। হিন্দুদেরকে ওই সময় মুসলিম লীগকে চাঁদা দিতে হত যাকে বলা হত জিজিয়া যা একসময় ভারতবর্ষে প্রচলিত ছিল। মুসলিম শাসন আমলে হিন্দুরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য তৎকালিন শাসকদের জিজিয়া নামক বাড়তি প্রদান করত।
নৃশংসতার কথা ভাবুন একবার, খুন জখম হত্যা ধর্ষণ, এমনকি মানুষের মুন্ডু কেটে ফুটবল খেলা হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষ তো উদ্বাস্তু হয়েছিল, এমনকি রাস্তায় আটক করে তাদের উপরে চলেছিল নির্বিচারে গুলি। নারীদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ক্যাম্পগুলোতে। সেখানে চলত পাশবিক অত্যাচার, ধর্ষণের পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে যোনিপথ খুঁচিয়ে দেওয়া হতো।কাটা হত নারীদের স্তন।ভাবতে পারছেন, সভ্য সমাজের জীবনে এমন নৃশংস ঘটনা কা রা ঘটাতে পারতেন? শুনেছি বনের হিংস্র জন্তুর এর মধ্যেও মায়া-মমতা ছিল। কিন্তু এমন অসভ্য বর্বর হায়নাদের মধ্যে তা ছিল না। বর্তমান বাংলাদেশের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের এবার ভাবার সময় এসেছে। তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশে প্রায় ৩০ শতাংশ হিন্দু ছিল,২০২১ সালে এসে পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ, হিসাব কি বাংলাদেশের কোন সরকারই জানতো না? সবই জানে তবু শুধু শুধু নাটক করা।পশ্চিম বাংলার হিন্দু রা যদি না ভাবেন ত একদিন তারাই এখান থেকে উদ্বাস্তু তে পরিণত হবে ভবিষ্যতে, এই বিষয়টা নিশ্চিত ভাবে বোঝা যাচ্ছে।
বটু কৃষ্ণ হালদার, কবর ডাঙ্গা,কল১০৪,ফোন৮৬১৭২৫৫৯৫৮