কালো মেয়ের কান্না
অশোক কুমার আচার্য্য
পৃথিবীর যত কালো সব আমার দেহে
ছোট থেকেই শুনে আসছি আমি কালো,
পাড়া পড়শি আত্মীয় অনাত্মীয় থেকে
বাড়ির সবাই আমাকে ডাকে কালী বলে।
আমার ঠাকুরমা আদর করে বলতো –
কালো সোনা;ঠাকুরদা তার ভুঁড়ির উপর
দাঁড় করিয়ে বলতো জিভ বার করো,
তুমি কালী আর আমি তোমার শিব।
আমার নাম যে মৃণালিনী তা আমি
ভুলতে বসেছি,কালী ডাক শুনতে শুনতে –
মাঝে মাঝে মাথাটা গরম হয়ে যায়
চুলগুলো ছিঁড়তে ইচ্ছা করে, কান্না আসে।
পৃথিবীর যত কালো সব আমার দেহে
একটুও অবশিষ্ট নেই অন্য কারোর জন্য,
স্কুল থেকে বাড়ি ফিরলে ঠাকুরদা বলতো-
কালী দিদি একবার আমার কাছে এসো।
বয়সের সাথে দেহের রেখাগুলো স্পষ্ট হচ্ছে
স্কুলের বন্ধুরা টিফিনের সময় আড্ডা মারে,
ক্লাসে আমি একাকী বসে থাকি মনের দুঃখে।
বন্ধুদের সংগে কথা বলতে বাঁধো বাঁধো লাগে,
অজানা আতঙ্কে সবসময় সিঁটিয়ে থাকি-
কালী ডাকটা নিজের কানে শোনার আতঙ্কে।
টিফিন বক্সের মধ্যে সাজানো থাকে খাবার
ভাগ করে খেতে পারি না সহপাঠীদের সাথে।