তৈমুর খানের তিনটি কবিতা
১
গোধূলি
_________
এখন গোধূলিতে দিন খুঁজে দেখি
কতটুকু দিন আর ?
লীলাময় হাসি , অসত্য গহনে উড়ে যায় পাখি
মেঘেদের বক নিয়ে খেলা আকাশের
গভীর কালো জল
ঢেউ ভাঙে, থরে থরে সাজায় হীরামতি
বেহুলার নৌকা ভেসে যায়
ঈশ্বরচন্দ্রের কাছ থেকে আবার ফিরে আসি
বাংলার সবুজ ধানের কাছে
ক্ষেত ভরা শস্য দেখি বর্ণমালার
একটি যুগের সেতু অন্যযুগ পার হয়ে যায়
গোধূলি এখন কাঠের আগুনের পাশে
শীতের মতো
জীবন শুধু তাপ নিতে থাকে
তাপেরই প্রার্থনা তার গোধূলির বিমূঢ় আলোতে
২
কাঙালবাড়ি
_______________
গ্রাম ঢুকেই বাবার কবরের পাশ দিয়ে যেতে হয়
সেই কাঙালবাড়ি
এখনও মায়ের মৃত আত্মা এসে ডুগডুগি বাজায়
আমরা সব বাঁদর, ফুটো থালা হাতে
রাত্রে বাঁশের ডালে পেঁচা এসে ডাকে
দু একটা কূজন শুধু ষোলো কী সতেরোর তরুণীর মতো
আলাদা করে রাখি
এখনও দেখি এঁদো পুকুরটি মায়ের সব আলতা ধুয়ে
ঢেউ তোলে
বাবার হাত ফসকে পালায় মাগুর মাছ
আমি ন্যাড়া মাথা, বাবলা তলায় পায়ে কাঁটা ফুটে যাওয়া
যন্ত্রণায় চিৎকার করি
এইসব বহুযুগ পর ফিরে আসে
আর ফিসফিস করে বলে রাত্রির চাঁদ
—এখন আর ঝগড়া নেই তোর মা-বাবার…!
৩
আত্মনির্বাহ
_____________
একটি শুধু নিঃস্ব জীবন কাঁপে
ভাত-কাপড়ে মেপে মেপে দেখি তার পরিধি
সূর্যরশ্মি দিন আনে না
কষ্টের মীন সাঁতার কাটে তাতে
তবুও নীল ওড়না ওড়ে
বাতাস বইতে থাকে
মাঝে মাঝে কোকিল ডেকে ওঠে
চাঁদ হাসে আকাশে
একটি জীবন অশ্রুসাগর
নোনাবালির চড়ায় দুপুর কাঁদে
পিপাসারা হাঁফিয়ে ওঠে
ছায়া খুঁজতে থাকে
মায়ার ঘর, মায়ার রাত্রি
নির্ঘুমেরা দুঃখের প্রদীপ জ্বালে…
তৈমুর খান : জন্ম ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৭, বীরভূম জেলার রামপুরহাট সংলগ্ন পানিসাইল গ্রামে। শিক্ষা : বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে এবং প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা নিয়ে পি এইচ ডি প্রাপ্তি। পেশা : উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহশিক্ষক। মুলত নব্বই দশকের কবি হিসেবে পরিচিত। প্রকাশিত গ্রন্থ আটটি : কোথায় পা রাখি, বৃষ্টিতরু, খা শূন্য আমাকে খা, আয়নার ভেতর তু যন্ত্রণা, জ্বরের তাঁবুর নীচে বসন্তের ডাকঘর, একটা সাপ আর কুয়াশার সংলাপ, প্রত্নচরিত, নির্বাচিত কবিতা ইত্যাদি। পুরস্কার : কবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার, দৌড় সাহিত্য সম্মান এবং সুখচাঁদ সরকার স্মৃতি পুরস্কার ইত্যাদি। ঠিকানা : রামরামপুর, শান্তিপাড়া, রামপুরহাট, বীরভূম, পিন কোড ৭৩১২২৪, পশ্চিমবঙ্গ