কাজী নজরুল ইসলাম অখন্ড ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখতেন
বটু কৃষ্ণ হালদার
১৯২৯ সালে কলকাতা এ্যালবার্ট হলে এক অনুষ্ঠানে ‘কাজী নজরুল ইসলাম’ যখন বজ্রকন্ঠে তার বিখ্যাত কবিতা দুর্গম গিরি কান্তার মরু আবৃতি করে শোনাচ্ছিলেন, সেসময় মঞ্চে উপস্থিতি ‘নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু’ নজরুলের কাঁধে হাত রেখে বলেছিলেন –ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্যে আমি সারা ভারতবর্ষ ঘুরেছি কিন্তু ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরুর’ মত কোন গান আর একটা আমি খুঁজে পাইনি। এই গানের উপরে ভর করেই আমি ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে আসবো। নজরুলের গান ও কবিতা আমাদের বিপ্লবী চেতনাকে আরো শক্তিশালী করেছে।
নেতাজী চন্দ্র বসু দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন,যেদিন দেশ স্বাধীন হবে সেদিন বাঙালীর জাতীয়-কবি হবেন কাজী নজরুল ইসলাম।নেতাজীর অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতার স্বপ্ন যদিও আজও অপূর্ণই থেকে গেছে। কিন্তু পরবর্তিতে স্বাধীন বাংলাদেশে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি সম্মান দেওয়া হয়।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নজরুল ইসলাম কে প্রায়ই বলতেন,দেখ উন্মাদ তোর জীবন শেলীর মত, জন কিটসের মত খুব বড় একটা ট্রাজেডি আছে।তুই প্রস্তুত হ।গুরুদেবের বাণী এতটুকু মিথ্যা হওয়ার নয়।কারণ তিনি অন্তর থেকে অনুধাবন করে কথা বলতেন।বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তখন “নবযুগ’ পত্রিকার সম্পাদক। ঠিক সে সময়ে চলছিল ভারত বিভাজনের প্রক্রিয়া। তৎকালীন সময়ে সমস্ত ক্ষমতা কলকাতার শিক্ষিত শ্রেণীর হাতে।তরুণ মুসলিম লীগ নেতা বদরুদ্দোজা,আলম হোসেন, জুলফিকার হায়দাররা তখন ভারত বিভাজনের জন্য আন্দোলন করছেন। কিন্তু বিদ্রোহী কবি নজরুল বিভাজন আন্দোলনে বাধার সৃষ্টি করলেন। তিনি কখনোই চাইতেন না ভারত বর্ষ দ্বিখণ্ডিত হোক। তিনি বললেন এ টি মেকি,ভুয়া আন্দোলন।পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ নিরক্ষর মুসলমানদের মুখের গ্রাস করে এরা নেতা হতে চান।তাদের পুরো চক্রান্ত তিনি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছিলেন।তার সমকালীন বহু বিশিষ্ট সাহিত্যিক রা বুঝেও মুখ খোলেননি।সেটাই কবির জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ালো। নবযুগ’ পত্রিকায় কবি তখন স্বাক্ষরযুক্ত সম্পাদকীয় সংখ্যায় তিনি সম্পাদকীয় কলমে লিখলেন“পাকিস্তান না ফাঁকি স্থান”। ব্যাস এটুকুতেই যেন দাবানল সৃষ্টি হয়ে গেল। ভারত বিভাজনের যে সমস্ত আন্দোলনকারীরা সমর্থন করতেন তারা নজরুলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলেন। একদিন কবি পত্রিকা অফিসের কাজ ছেড়ে অনেক রাতে ফিরছিলেন।কবিকে সামনাসামনি ধরাশায়ী করা যাবে না, তাই আন্দোলনকারীরা কাপুরুষের মত পেছন থেকে আক্রমণ করলেন। এক সময় যারা কবি নজরুল ইসলামের স্থানীয় নিয়ে কলকাতার বুকে দাপটের সাথে চলতেন তারাই তার জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ালেন।আক্রমণের পর ১৯৪২ সালের মাঝামাঝি কবি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন।তার পিঠে সেই আঘাতের চিহ্ন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কবি বহন করেছিলেন। বাংলাদেশে কবির ব্যক্তিগত সহকারি শফি চাকলাদার সে কথা অকপটে স্বীকার করেছেন।তিনি ছবি তুলে রেখেছিলেন কিন্তু প্রকাশ্যে আনেননি।তাঁর চিকিৎসার সুব্যবস্থা করার জন্য তৈরি হল “নজরুল রোগ নিরাময় সমিতি”। কিন্তু সেখানেও ঢুকে গেল দু-একজন পাকিস্তানপন্থী। তারাই কবির চিকিৎসা, দেখাশোনা, অর্থ সংরক্ষন সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করলেন। তারা ইচ্ছা করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিলম্ব করতে আরম্ভ করলেন। ধীরে ধীরে সেই রোগ নিরাময়ের অযোগ্য হয়ে উঠলো।জুলফিকার লুম্বিনী হাসপাতালে শেকল দিয়ে বেঁধে লোক আড়ালে কবিকে নিঃশেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হল। পঞ্চাশের প্রথমদিকে ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় নজরুল ইসলামের চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন। রবি উদ্দিন কে সাথে নিয়ে কবিকে ভিয়েনায় পাঠানো হলো। কিন্তু ততদিনে নিভেছে দেউটি। কবি আর ভালো হলেন না,মস্তিষ্কের পিছনের বেশ কিছু শিরা উপশিরা শুকিয়ে মরে গেছে। এভাবে শিক্ষিত সুশীল সমাজ ব্যবস্থার সামনে একজন নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমী জীবনকে শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা সফল হয়ে গেল। না এর প্রতিবাদ কিন্তু হয়নি। এমন এক প্রতিভা দিনে দিনে চোখের সামনে প্রদীপের সলতের মত নিভে যেতে দেখেও তেমনভাবে সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে আসেনি।এটাই হল বিশ্বের বিখ্যাত ট্রাজেডি।
দেশকে স্বাধীন করতে ভারতবর্ষে কে বহু রক্ত ঝরানো পথ হাঁটতে হয়েছে। মায়েরা বুকে পাথর চেপে রেখে সন্তানদের আদেশ দিয়েছিলেন দেশ সেবায় নিয়োজিত করার জন্য। শিক্ষা,পরিবারের কথা ভুলে গিয়ে শুধুমাত্র দেশের কথা ভেবে, একশ্রেণীর জনগণ,যুবসমাজ হাতে তুলে নিয়েছিল, বন্দুক,বোমা,লাঠি।আবার অনেকেই পরিবারের রাজ ঐশ্বর্য মহাসুখ ছেড়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। সশস্ত্র আন্দোলনের পথে এসেছিল দেশের স্বাধীনতা, চরকা কেটে নয়, এর প্রমাণ বহুবার পেয়েছি।তবুও ইতিহাসের পাতা থেকে বঞ্চিত নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমীক রা।আর যারা বরাবর অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেয়েছে,তারা হয়ে গেল দেশের সর্বসর্বা। রক্ত ঝরানো পথে দেশের স্বাধীনতা এলেও ভারত বর্ষ পূণভূমিতে পরিণত হতে পারেনি।কারণ এই দেশের মাটি সব সন্তানদের সঠিক সম্মান দেয়নি। আর স্বাধীনতার পরে যে সমস্ত দেশপ্রেমিকরা আখন্ড ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তাদের কপালে নেমে এসেছিল চরম দুর্ভোগ। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রাসবিহারী বসু,কাজী নজরুল ইসলাম সহ অনেকেই। বটু কৃষ্ণ হালদার,কবর ডাঙ্গা,কল১০৪,ফোন_৮৬১৭২৫৫৯৫৮
https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104 (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});