১) বন্ধু
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
ডাকি নাই যারে আমি
কোনদিন ভুলে,
অধমেরে ভালোবেসে
সে তো আসে চলে ।
দেখায় সে পথ মোরে
আমি হেঁটে যাই,
দিবা নিশি তারে যেন
অনুভবে পাই ।
অধম জনের তরে
কত কৃপা তার,
আপদে বিপদে সদা
করে উদ্ধার ।
সাহস জোগায় মনে
বুকে দেয় বল,
হাসি খুশি রই আমি
সদা চঞ্চল ।
কোনদিন কিছু তারে
চাহি নাই ভুলে
প্রয়োজনে সব কিছু
হাতে দেয় তুলে ।
লঙ্ঘায় পাহাড় নদী
আর মরুভূমি,
সকলি করে সে যে
কি করি আমি !
দেখি নাই তারে কভু
কিবা রূপ তার,
দীনের সুজন বন্ধু
কত আপনার ।
_______
২) অবদান
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
আজ আছি কাল নেই
কেন অহংকার ?
জমি জমা ধন জন
কোনটা তোমার ?
হীরে বলে পরে থাকো
কাঁচমালা গলে,
সংসার পরিজনে
সব যাও ভুলে !
এনেছিলে কিবা তুমি
ভেবে দেখ ভাই,
নিয়ে যাবে কিবা আর
ধরা হতে তাই ?
রয়ে যায় প্রেম শুধু
পৃথিবীর পরে,
বাকি সব ছাই হয়ে
আশমানে ওড়ে ।
ভালবেসে মানুষেরে
কর কিছু দান,
থেকে যাবে চিরদিন
সেই অবদান ।
_________
৩) আজেবাজে
ভুবন দা
সব বলে আজে বাজে
লিখি ছড়া পদ্য,
কেউ বলে গাঁজা খায়
কেউ বলে মদ্য ।
পাগল না হলে আর
কেউ বকে ভুল ?
খ্যাপা খ্যাপা চেহারাটা
দাড়ি আর চুল ।
কেউ বলে ওই সব
নয় জানি বটে,
আসলে চরিত্রটাই
ঠিক নাই মোটে ।
ভুল কথা ভুল কথা
বলে কেউ এসে,
রহস্য লুকিয়ে রেখে
থাকে সাধু বেশে ।
গায়ে কাদা নেই তার
একদম মোটে,
থাকে সে কাদায় ভাই
কাদা মাছ বটে ।
কত জনে কত কথা
বলে মন গড়া,
ভুলভাল হোক তবু
লিখি পদ্য ছড়া ।
_________
৪) ভূত
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
ঝাড় ফুঁক করে ওঝা
যায় কই ভূত !
লোকে বলে মন্ত্র ভুল
নয় আছে খুঁত ।
ওঝা বলে সব ঠিক
আছে একদম,
বিশ টন সরষেটা
হয়ে গেছে কম ।
পাঁচ টন গাওয়া ঘি
একদম খাঁটি,
চাই যে যজ্ঞটাতে
নয় সব মাটি ।
নিয়ে এস এক লাখ
মুরগির ছানা,
কারণ হাজার পেটি
ভূতেদের খানা ।
হাজার দুয়েক বড়ো
চিমটেটা চাই,
দিতে হবে দক্ষিণা
শত কোটি ভাই ।
যত আছে ভূত সব
কচি কাঁচা ধেড়ে,
চলে যাবে একদম
এই দেশ ছেড়ে ।
________
৫) নতুন জামা
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
বায়না করে খোকন সোনা
মায়ের কাছে ওই,
কালকে নতুন বর্ষ আমার
নতুন জামা কই ।
বিলু কানাই বিশু বলাই
কিনেছে মা সবাই
যেমন তেমন কম দামি
আমার জামা চাই ।
লোকের বাড়ি বাসন মাজে
মা যে রোজ তার,
কোথায় গেছে বাবাই চলে
পায়নি খোজ আর ।
চোখেতে জল গড়িয়ে আসে
বলে খোকন ওরে,
সাবানে কেচে এই জামাটাই
পরিয়ে দেব তোরে ।
আমরা গরীব হত দরিদ্র
নেইকো জমি জমা,
কোথায় পাব কিনতে বল
নতুন বর্ষে জামা ।
মায়ের চোখে জল মুছিয়ে
খোকন সোনা বলে,
চাইব না আর কিচ্ছু আমি
তোমার কাছে ভুলে ।
_________
৬) বাবা
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
যে লোকটির শিরদাঁড়া বাঁকা,
মাথায় উসখো খুসকো
কাঁচা পাকা চুল,
গাল ভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি,
চোখদুটি কোটরাগত
পরনে মলিন ছিন্ন পোশাক
সেই হচ্ছে বাবা ।
যে লোকটির পিঠের চামড়া
রোদে পুড়ে কালসিটে দাগ,
আর জলে ভিজে বুকে
থকথকে কফ জমা
খুক্ খুকে কাশি বারোমাস
সেই হচ্ছে বাবা ।
যে লোকটির মাথায় চিন্তার ভার ।
যার নিজের খিদে লাগেনা
খিদে মিটাতেই ব্যস্ত, সংসারে
সবার দিকেই সজাগ দৃষ্টি,
নিজেকে দেখার ফুরসৎ নেই যার
সেই হচ্ছে বাবা ।
যে লোকটি রোজ
নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে,
যার অসুখ হয়না কখনো, ওষুধ
খায়না কিনে দোকানে ।
যে রাত জাগে একা একা,
নিশি রাতে কথা বলে নিজের সাথে
সেই হচ্ছে বাবা ।
যে লোকটির সব প্রত্যাশা
একে একে ঝরে যায় ফুলের মত ধুলোয় ।
যে শুধু নদীর মত ছুটতে জানে আপন বেগে, কখনো ক্লান্ত হয়না, দুর্বল হয়না,
লড়াই করে বাঁচতে জানে,
সেই হচ্ছে বাবা ।
যে লোকটির চোখের ভাষা
কেউ পড়তে পারেনা । যার
পাঁজরের ব্যথা, বুকের আগুন
কেউ কোনদিন অনুভব করেনা, যার পিপাসিত বুকে কোন
মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরে না ।
সেই হচ্ছে বাবা ।
________
৭) বৈশাখ মানে
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
বৈশাখ মানে রবীন্দ্রনাথ
গদ্য, কবিতা, গান,
জন্ম তিথি পালন করার
উদ্যম অফুরান ।
বৈশাখ মানে রবীন্দ্রনাথ
ভাবা নতুন করে,
সাগর বুকে লুপ্ত হওয়া
শুধুই বারে বারে !
বৈশাখ মানে রবীন্দ্রনাথ
সুর, লয় ও ছন্দ,
মুখরিত আকাশ বাতাস
হৃদয়ে আনন্দ ।
বৈশাখ মানে রবীন্দ্রনাথ
চেতনার উন্মেষ,
জাগ্রত প্রেম ভক্তি সুধা
বিষণ্ণতার শেষ ।
_________
৮) যদি ফিরে আসি
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
ওগো নদী,
ফিরে আসি কোনদিন যদি,
বালি হাঁস অথবা
পানকৌরি রূপে
তোমার স্রোতে করি খেলা,
তুমি কি সেদিন চিনবে আমায় ?
ওগো পাহাড়,
আবার যদি আসি পুনর্বার
তোমার শরীর ঘেঁসা
কোন এক জংলি গাছে
জংলি পাখি হয়ে বাসা বাঁধি,
তুমি কি সেদিন চিনবে আমায় ?
ওগো পারাবার,
যদি আমি ফিরে আসি আবার,
তোমার সৈকতে শঙ্খচিল
কিম্বা গাঙ শালিকের বেশে,
তুমি কি সেদিন চিনবে আমায় ?
ওগো মায়া শশী,
যদি কখনো আমি ফিরে আসি,
এই ধরণীর বুকে, কামিনী
নয় রজনীগন্ধা হয়ে
নিশি জাগি একা একা,
তুমি কি সেদিন চিনবে আমায় ?
ওগো সমীরণ,
আবার যদি আসি অকারণ,
কোন বসন্ত দিনে
পলাশ শিমুল বনে, ভ্রমর
কিম্বা কোকিলের রূপ ধরে,
তুমি কি সেদিন চিনবে আমায় ?
__________
৯) আক্ষেপ
ভুবন দা
চাল ডাল তেল নুন
বেড়ে চলে দাম,
চোখ বুজে নেতা সব
থাকে অবিরাম
লুটে যায় ফায়দাটা
ব্যবসায়ী যত,
লাখ টাকা চাঁদা দিয়ে
তুলে নেয় কত !
ভোট শুধু আসে যায়
কিবা হয় তাতে,
পলাশ তো চিরকাল
থাকে তিন পাতে ।
কেউ ভাঙে কেউ গড়ে
ভানুমতি খেল,
হক কথা বলো যদি
ঠাঁই হবে জেল ।
__________
১০) সেদিন দু’জনে
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
এই অজয় নদের বালুচরে
বসে বসে কাগজের নৌকা
ভাসিয়েছি স্রোতে কত
সেদিন দু’জনে ।
এই কাশ বনে অবলীলায়
দু’ হাত ভরে তুলেছি ফুল,
খেলেছি লুকোচুরি খেলা
সেদিন দু’জনে ।
ওই জংলা পাহাড়ে
জংলি ফুলের গন্ধ গায়ে মেখে
হাত ধরে হেঁটে গেছি কত পথ
সেদিন দু’জনে ।
এই শিরিষ গাছের ছায়ায়
মুখোমুখি বসে, কত কথা
কত গান গেয়েছিলাম
সেদিন দু’জনে ।
ওই মাঝি পাড়ার ভূত বিলে
দুপুর বেলা নির্জনে জলে নেমে
তুলেছি কত লাল শালুক
সেদিন দু’জনে ।
বসন্ত বেলায়
পলাশ ও শিমূলের লালিমায়
স্বপ্ন দেখেছি, রঙ মেখেছি
সেদিন দু’জনে ।
আজ সব কিছু দেখি
ঠিকঠাক আছে তেমনি,
দূরত্ব বেড়ে গেছে শুধু
আমাদের দু’জনার ।
___________