কবি কমল চক্রবর্তী, লেখক কমল চক্রবর্তী, বৃক্ষনাথ, একজন শ্রদ্ধার মানুষ কমল চক্রবর্তী
**********************
স্মৃতি রোমন্থনে রাজকুমার সরকার (ঝাড়খন্ড)
==================
কমলদা’র সাথে কখন প্রথম দেখা বা পরিচয় হয়েছে তা ঠিক এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না।তবে অনেকবার দেখা হয়েছে;কথা হয়েছে বেশ কয়েকবার।পাশাপাশি বসার সুযোগ হয়েছে একবার ধানবাদ লিটল ম্যাগাজিন মেলায় তা বেশ মনে আছে।তিনি সুতপা’র স্টলেই বসেছিলেন এবং স্বাভাবিকভাবেই আমার স্টলটিই সেই সময় হয়ে গেছিল মেলাটির কেন্দ্রবিন্দু।
কমলদা আমাদের গর্ব।
যেহেতু কমলদা’র কর্মভুমি লৌহনগরী জামশেদপুর তাই কমলদা আমাদের অত্যন্ত কাছের মানুষ।
আমি যখন টাটা মেন হসপিটাল-এর ক্যান্টিন ম্যানেজার ছিলাম তখন বেশ কয়েকবার জামশেদপুর শহরে দেখা হয়েছে তাঁর সাথে।অনেকবার ছুটে গেছি তাঁর কর্মভুমি আদরের “ভালোপাহাড়”
তারপর অনেকবার।অনেকবার।
‘ভালোপাহাড়’ আমাকে ভীষণভাবে টানে।সবুজ চাদরে মোড়া এক অনন্য প্রতিষ্ঠান। কমলদা’র অদ্ভুত এক চুম্বকীয় শক্তি আছে যা আমাকে বারবার কাছে টানে।
মোটরসাইকেল নিয়ে অনেকবার ছুটে গেছি সবুজের কাছে।একদিন এমন সময় পৌঁছলাম তখন দেখি কমলদা, বান্দোয়ান যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। আমাকে বললেন – মোটরসাইকেল রেখে দে এবং আমার গাড়িতে চেপে পড়।তাই করলাম। গাড়ির বাঁদিকে কমলদা ডানদিকে আমি।দু’জন জানালার ধারে সবুজ প্রকৃতি দেখতে দেখতে বান্দোয়ানের পথে…….
গান ধরেছেন কমলদা ।আহা, অপূর্ব গলা।পাকা চুল, পাকা দাড়ি, খাটো ধুতি, সাদা গেঞ্জি, একটি কাঁধে ঝোলা।দেখলেই ভক্তি এসে যায়।বঙ্কিম পুরস্কার প্রাপ্ত সাহিত্যিক কমলদা ও আমি পাশাপাশি বসে যাচ্ছি ; ভাবা যায় ……..
সবুজের বুক চিরে পৌঁছে গেলাম বান্দোয়ান। হ্যাঁ, কমলদা বরাবরই আমাকে স্নেহ করেন। বরাবর আমাকে লেখার জন্য উৎসাহ দেন।আমাকে নিয়ে গর্ব করেন।বান্দোয়ানে ব্যাঙ্কের কাজ,গ্যাস ভরানো, সব্জি কেনা,গাড়িতে তেল ভরানো সহ নানান কাজ সেরে বিকেলে ফিরলাম ভালোপাহাড়।ভালোপাহাড়ে মাছের ঝোল ভাত খেয়ে চলে এলাম পুরুলিয়া।তখন ঘড়ির কাঁটায় রাত ন’টা।
আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগে একবার ভালোপাহাড় গেছিলাম কমলদা’র সাক্ষাৎকার নিতে।মোটরসাইকেলে ধানবাদ থেকে পুরুলিয়া।পুরুলিয়া থেকে বরাবাজার হয়ে বান্দোয়ান। সেখান থেকে গালুডি গামী রাস্তায় ১০ কিলোমিটার গেলেই ভালোপাহাড়।এই ভালোপাহাড়েই থাকেন বঙ্কিম পুরস্কার প্রাপ্ত কবি ও সাহিত্যিক কমল চক্রবর্তী মহাশয়।ডানদিকে বিশাল একটা গেট, লেখা রয়েছে ভালোপাহাড়।
পাহাড় কখনও ভালো বা মন্দ হয় তা জানা ছিল না।
আসলে ভালোপাহাড়ের নাম স্বয়ং কমলদা’র দেওয়া নাম।
মনে পড়ে সেসময়ের কথা।দরজার কড়া নাড়তেই একটি কুকুরের বীভৎস আওয়াজ চমকে যাই। ততক্ষণে কমলদা বুঝে গেছেন আমার অবস্থান।
উনি ভেতর থেকে
বলছেন – রাজকুমার চলে এসো চিন্তার কিছু নেই।
ও কিছু করবে না।
ঢুকতেই দেখি পুরোনো সাদা হাতওয়ালা গেঞ্জি, ধুতি পরা এক মানুষ ; পায়ে হাওয়াই চপ্পল, একমুখ পাকা দাড়ি — হ্যাঁ, ইনিই কমল চক্রবর্তী।কোনো লোক দেখলে বিশ্বাসই করবেন না ইনিই বঙ্কিম পুরস্কার প্রাপ্ত একজন খ্যাতনামা কবি – সাহিত্যিক।অতি সাধারণ আটপৌরে জীবন যাপন কমলদা’র।
শ্রদ্ধা এসে যায়।জামশেদপুরে টেলকো’র চাকরি ছেড়ে কেন এই অরণ্যে?
কিসের নেশায়?
কিসের আশায়?
ভাবতে থাকি বেশ কিছুক্ষণ….
চমকে উঠবেন যে কেউ। ভাবতে অবাক লাগে,এখন মানুষ যেখানে গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, পরিবার নিয়ে এ. সি. রুমে বাস করে বিলাসিতার জীবন অতিবাহিত করতে চান সেখানে এই মানুষটি কেন এ পাহাড় জঙ্গলঘেরা জনশূণ্য এলাকায়?
অতিথি আপ্যায়নে কমলদা’র জুড়ি মেলা ভার।বিভিন্ন তরকারি, মাছের ঝোল সহযোগে ভাত।তারপর টেবিলে মুখোমুখি আমি ও কমলদা।কি নেই ভালোপাহাড়ে?
সমস্ত ধরনের গাছ রয়েছে।
স্বাস্থ্য কেন্দ্র, শিক্ষা কেন্দ্র, কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মৎস চাষ, পশুপালন কেন্দ্র, বনসৃজন তো রয়েছেই।
কবি-সাহিত্যিক কমল চক্রবর্তীর লেখা অনেক পড়েছি।একদম ভিন্ন স্বাদের, ভিন্ন মেজাজের, ভিন্ন আঙ্গিকের।একদম ভিন্নতর মনে হয়।তাঁর প্রকাশিত বইগুলি আমাদের কাছে সম্পদ।বাংলা সাহিত্যের সম্পদ।
আজ থেকে আট ন’বছর আগে ‘ভালোপাহাড়ে’ উনি আমাকে বেশ কিছু বই উপহার দিয়েছিলেন তাঁর মধ্যে “মিথ্যে কথা” বইটি খুব ভালো লেগেছে।প্রতিটি কবিতা
সম্পূর্ণ ভিন্ন শৈলীর।
খুনী ফিরে আসছে,ইঁদুর কল, সমুদ্রে বেড়াতে এসেছেন এক দার্শনিক,সহজ হাঁড়িয়া প্রস্তুত প্রণালী,শিমূলবাড়ি টি এস্টেটে সকাল ও জিরো জিরো সেভেন তোমাকে ভালবাসি, খুব ভালো লেগেছে।
কমলদা’র লেখা বই – চার নম্বর ফার্নেস চার্জড, স্বপ্ন,সরলরেখা,মদের দোকানের সেই ছেলেটি, আস্তে চলো গার্লফ্রেন্ড,জল,জিতেন্দ্র, একশো কমল, ভালোপাহাড়, মিথ্যে কথা ইত্যাদির কথা মনে রাখবে বাংলা সাহিত্য জগত সে কথা হলপ করে বলতেই পারি।গতশতকের সাতের দশকের দুরন্ত যৌবন কবি কমল চক্রবর্তীকে বাংলা কবিতার জগত মুগ্ধ বিস্ময়ে বরণ করে নিয়েছিল তাঁর ‘জল’,
‘চার নম্বর ফার্নেস চার্জড’ কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত কবিতাগুলো জন্য…….
‘কৌরব’ পত্রিকার কথা কে জানেন না?
যাঁর প্রধান সেনাপতি আমাদের কমলদা।বাঘা বাঘা লেখকরা লিখেছেন
কৌরব- এ।বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ‘কৌরব’ এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
আমি একজন ভাষা কর্মী, সাধারণ পাঠক হিসেবে যতটুকু কমলদাকে পড়েছি, দেখেছি,কাছ থেকে জেনেছি তা নিজস্ব শৈলীতে লিখে তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা নিবেদন করলাম।
====================
স্মৃতি রোমন্থনে ‘রাজকুমার সরকার (ঝাড়খণ্ড)
বাহ্।খুব সুন্দর প্রতিবেদন।