কবি-ঔপন্যাসিক-গীতিকার উমাকিরণ শংকর আভিধানিক শব্দ-জাগরণে ও বিশেষ প্রকরণে বিশ্ব-প্রতিভা [ Poet – Novelist- Songwriter Umakiran Sankar, West Bengal, India, an indescribable talent in the writing field ] —
কাব্যপট সংবাদদাতা : এই সংবাদের মাঝে আসা পুরানো রাখাল ছেলেটি বিশ্বাস করতে পারছে না, সে পৃথিবীর একজন সেরা কবি লেখকদের একজন ! কিংবা সে এখনো বেঁচে আছে পৃথিবীতে! এই কাহিনীর নায়ক একটা সময় কখনো-কখনো ফুটপাথেও রাত কাটিয়েছেন!
সোনারপুর, কলকাতার ছেলে উমাকিরণ শংকর, বাংলা কবিতা, সনেট ও উপন্যাসের এমন একজন নক্ষত্র, যিনি এখন 2020 অব্দি প্রকাশিত মাত্র 5-6 (পাঁচ -ছয় ) টা বই দিয়েই বিশ্ব বাংলা সাহিত্যে কালজয়ী অবস্থানে আসার উপযুক্ত ! যদিও তিনি বহু মুখি বিপন্নতার মধ্য দিয়েও করে চলেছেন তাঁর সাহিত্যের কাজ ! আমাদের এই অধিকাংশ ভুল প্রকরণের ব্যবস্থায় তাঁর উপযুক্ত মূল্যায়ন এখনো হচ্ছেনা সার্বিক ভাবে, সেজন্য আমরা উপযুক্ত পাঠক -বোদ্ধার দল তো আঘাত পাচ্ছি !
আসুন তাঁর দু একটি কাহিনী শোনাই ! আই -এফ -এ শ্যামবাজার ফোর্থ ডিভিশনে খেলতেন, পেশায় ফুটবলার হবেন বলে ! অবস্থা সম্পন্ন ধারায় জন্মালেও — পারিবারিক নানা দুর্ঘটনার কারণে এতোই দরিদ্র হয়ে যান যে, ওনার মা লোকের বাড়িতে কাঁথা কেচে পয়সা নিয়ে ছেলে বর্ণপরিচয় কিনে দিলে সেটা থেকেই শিক্ষা শুরু ! শৈশবে বাবা মা মারা গেলে বিপন্ন শিশুটি লোকের বাড়িতে বারমেসে জনমজুরের কাজ করে পেট চালাতো !
একদিন গরু বের করতে দেরি হতে দশ বছরের শিশুকে তাক করে মালিকের ছেলে একটি ইটের খন্ড সজোরে ছুঁড়ে মারে রেগে গিয়ে, শিশুটি তৎপরতার সাথে মাথা সরিয়ে নিতেই ইটের টুকরোটি পেছনের দরোজায় লেগে গর্ত হয়ে যায় ! শিশুটি পরে ওই দরজার দিকে তাকিয়ে আঁতকে ওঠে — ওটা মাথায় লাগলে কী হতো তার দুর্দশা !
শিশুটি বই নিয়ে পড়তে চাইতে মালিকের ছেলে ওই বই নিয়ে গোবরের গাদায় ঢুকিয়ে দেয়, কারণ চাকর ছেলের আবার পড়ার কী দরকার !
এইভাবে কী ভাবে যেন শিশুটি বেড়ে ওঠে কে জানে ! পরপর সাইকেলে পেপার ও দুধ বিক্রি ঘরে -ঘরে, এইভাবে বাঁচা ! কখনো বা রেকর্ডিং কোম্পানি অফিস-চাকর হিসেবে কাজ করা !দুরন্ত ফুটবল খেলতো, অনেকে বলতো যে সে খুব তাড়াতাড়ি মোহনবাগান -ইস্টবেঙ্গল -মোহমেডান দলে খেলবে ! পলিটেকনিকে ঢুকলো, কিন্তু বাড়ির নানা দুর্দশায় খেলা আর প্রথামামিক উচ্চ শিক্ষা কোনোটাই হলোনা ! ঢুকলো এল -আই -সি -আই কোম্পানিতে এজেন্ট হিসেবে, জোড়াতালি দেওয়া প্যান্ট জামা পরে কঠিন পরিশ্রমের জোরে এল -আই -সি – আই এর উচ্চ পদগুলি একে -একে পেতে থাকেন ও পেট ভরে খাবার পথ তৈরী হয় ! এই সময় যুবকটি সংগীত রচনা লেখা শিখতে শুরু করে, ও এইভাবেই চলতে থাকে !
2003 ( দু হাজার তিন ) সালের দিকে হঠাৎ করে লেখাকে পেশা হিসেবে নিতে গিয়ে এল -আই -সি -আই এর কাজটা কোনো রকম ধরে রেখে নিজের ইচ্ছেতেই অর্থনৈতিক সংকটে ঢুকে পড়ে লেখায় পুরো মন দিলেন ! আগের বই একটি ছিল, সংগীত-সংকলন এর একটি বই ও দু একটি গানের রেকর্ডিং ! কিন্তু পাকা কাজ ! তারপর 2003 থেকে নিজেকে নিংড়ে দিলেন সাহিত্যে ! বেরুলো ” তৃতীয় পান্ডব ” , আর সাথে -সাথে ছড়িয়ে পড়লো ওঁর নাম, অভিধান এর শব্দ নিয়ে এই যুগে এমন কবিতা লেখা যায়, কারোর মাথায় আসে নি ! অথচ আধুনিকতা বজায় রেখেই ! অসম্ভব জাদুকরী দক্ষতায় বিবিধ প্রকাশনী থেকে বেরুলো পরপর কয়েকটি বই ! বিভিন্ন মাত্রার পংক্তির সনেট গুচ্ছ, বেরুলো শুধু 36 ( ছত্রিশ ) মাত্রার প্রতি পংক্তির সনেট গুচ্ছ ! কী নিখুঁত কাজ, ভাবা যায় না ! যাঁর লেখা নিয়ে হাজার জন ডক্টরেট করতে পারে, যিনি লেখার বিনিময়ে দু চারটে রাজপ্রাসাদ বানাতে পারতেন, তাঁর অবস্থা যাচ্ছে কঠিন অর্থনৈতিক সংকটে ! কারণ, অনুপযুক্ত প্রকাশকদের ভিড় বেশী বাংলা সাহিত্য জগতে — অনেক পাঠক এইটাই বলছেন !
ওনার ” তৃতীয় পান্ডব ” বইটা পুরোটা ছেড়েই দিন , শুধু টাইটেল কবিতা প্রথম কবিতা ” তৃতীয় পান্ডব ” কবিতাটা পড়ে মনে হবে এর চেয়ে কি ক্লাসিকাল বিপ্লবের কবিতা পৃথিবীতে আর লেখা হয়েছে ! কবি অর্জুনকে আমন্ত্রণ করেছেন পৃথিবীকে বদলে দেবার জন্য !
উনি উমা শংকর নামেও লিখতেন, কিন্তু ওই নামে অন্য এক লেখক থাকায় উমাকিরণ শংকর নামেই পরে লিখতে থাকেন !
যদি একটি কবিতায় নোবেল দেবার নিয়ম থাকতো ও বাংলা ভাষায় নোবেল দেওয়া হতো, তাহলে এই কবি তাঁর ” তৃতীয় পান্ডব ” কাব্যগ্রন্থের ” তৃতীয় পান্ডব ” কবিতার জন্য নোবেল পেতেন, আর এটা না দিয়ে হয়তো নোবেল কমিটি স্বস্তি পেতেন না ! বইয়ে ছাপা ছয় -সাত পৃষ্ঠার দীর্ঘ কবিতাটি পরে সম্ভব হলে wabesite এ আনা যাবে ! উমাকিরণ শংকর এর ” তৃতীয় পান্ডব ” কবিতাটায় চোখ পড়লেই শুরু থেকে আপনাকে ঘোড়ার মত ছুটিয়ে নিয়ে যাবে, এটি এমন কবিতা !
অভিধানের কঠিন শব্দগুলিকে কবিতা ও উপন্যাসে বিশেষ শৈলীতে এনে উমাকিরণ শংকর বাংলা অভিধানকে সমগ্র বাঙালিদের কাছে, ও যেসব বিদেশী পন্ডিত বাংলাসাহিত্য নিয়ে গবেষণা করছেন, তাঁদের কাছে পৌঁছে দিয়ে বাংলাভাষাকে সমৃদ্ধ করছেন, এবং এমন ভাবে কঠিন শব্দগুলিকে প্রয়োগ করছেন, যা পাঠকের কাছে আপন হয়ে উঠছে সাবলীল ভাবে ! এই পদ্ধতি মাইকেল, সুধীন দত্ত, কালিদাস রায় প্রমুখ মাত্র কয়েকজন চালিত করেছেন সাহিত্যে, এবং এই যুগে সেই কাজকে একদম চরমে পৌঁছে দিয়েছেন উমাকিরণ শংকর !
বিভিন্ন কবি-লেখক বিভিন্ন ভাবে সাহিত্য ও ভাষাকে আলোকিত করেছেন ও করছেন, উমাকিরণ শংকর তাঁর নিজস্ব ধারায় তাঁর মত কাজ করে চলেছেন, এটাই বলতে চাই ! এটাকে কেউ ভুল ব্যাখ্যা করবেন না!
ওনার ” জলতরঙ্গ ” উপন্যাস পৃথিবীর যেকোনো সেরা উপন্যাসের সমকক্ষ ! পরোপকারী মানুষটি, মানুষকে খাওয়াতে ভালোবাসেন, এই মানুষটি বারবার বিপন্ন হয়েছেন নিজস্ব সরলতার জন্য, কে দেবে এই মানুষটির মূল্য ! এখন কাউকে খাওয়ানোর সামর্থ ও ইচ্ছে কেড়ে নিয়েছে এই বিদঘুটে সমাজ ও পরিবেশ !
বাংলাদেশের ওপর লেখা ” সোনার বাংলা ” কাব্যগ্রন্থের সমালোচনা দেখবো আনন্দ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ এর থেকে প্রকাশিত ” বইয়ের দেশ ” পত্রিকায় !
এপ্রিল -জুন সংখ্যা 2018 ( দু হাজার আঠেরো ) সংখ্যা 141 ( একশত একচল্লিশ ) পৃষ্ঠায় ” বইয়ের দেশ ” পত্রিকাতে সমালোচক লিখেছেন ” রূপময়ী বাংলাকে কবিতায় নতুনভাবে আবিষ্কার করেছেন কবি !…” , ” সোনার বাংলা ” গ্রন্থটি বেরিয়েছিল ” বুক বেঙ্গল পাবলিশার ” ( কর্ণধার : সোমিন্দ্র কুমার ) থেকে ! এই লেখকের লেখা বুক বেঙ্গল পাবলিশার থেকে এটাই ওনার প্রথম বই ! যদিও বইয়ের ধারাবাহিক সংখ্যায় পাঁচ বা ছয় হবে ! এবং ” বুক বেঙ্গল পাবলিশার ” থেকে উমাকিরণের প্রথম বই “সোনার বাংলা “! এই প্রকাশকের কাছে কবি এসেছেন অনেক দেরিতে, তাই এই পর্যন্ত এই ভাবেই চলেছে !
যদিও কবি ” বইয়ের দেশ ” পত্রিকার এই মতামতে মুগ্ধ হয়েছেন, এবং বইটাকে আরো খাঁটি সুন্দর করতে বিশেষ -বিশেষ স্থানে আরো পরিমার্জন ও সংযোজন -বিয়োজন ঘটিয়ে নতুন আঙ্গিক দিয়েছেন, দ্বিতীয় মুদ্রণে নতুন রূপে গুণে ” সোনার বাংলা ” বেরুচ্ছে ! করোনা অতিমারির জন্য এই সংস্করণ বেরুতে দেরি হচ্ছে ! বুক বেঙ্গল পাবলিশার চেষ্টা করছে কবিকে যতটা সম্ভব উপযুক্ত জায়গায় পৌঁছে দিতে ! কিন্তু, বাংলার সামগ্রিক সাহিত্য-জগৎ কবি ও প্রকাশক — দু পক্ষকেই হতাশ করছে ! জানিনা, এই দুঃখ জনক পরিস্থিতি থেকে কবে বেরুবো আমরা !
এদিকে একটা কথা বলে রাখি, রাজনৈতিক নিরপেক্ষ এই কবি – ঔপন্যাসিক বছর দেড় -দুই আগে ভারতরত্ন অটল বিহারী বাজপেয়ির ওপর হিন্দি সংগীত লিখেছেন, যেটি গেয়েছেন বিশিষ্ট গায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় ! এই কবির যতগুলি গান রেকর্ডিং হয়েছে আজোবধি, সব গুলিই জনপ্রিয়তা পেয়েছে ! একই সাথে তন্ময় চ্যাটার্জি সহ বিশেষ মর্যাদার গায়ক গণ ওনার লেখা গান গেয়েছেন ! সুর দিয়েছেনও বিশিষ্ট সুরকারগণ !
আমরা সাহিত্যের জগতের শ্রদ্ধেয় কন্ট্রোলারদের প্রশ্ন করি, কেন উপযুক্ত কবি লেখকেরা এভাবে বেপাত্তা হবেন, বা কোনঠাসা হয়ে জীবন যাপন করবেন এই বাংলায় ও ভারতবর্ষে !
সাহিত্য -সংস্কৃতির জন্য বরাদ্দ কোটি -কোটি টাকা কোথায় যায়?
*** বিঃদ্রঃ : সংযোজিত করা হলো (1) ” সোনার বাংলা ” কাব্যগ্রন্থের দুদিকের দুটো ছবি ! (2) আনন্দ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ থেকে প্রকাশিত ” বইয়ের দেশ ” এর ভিতরে প্রকাশিত ওই বইটি নিয়ে সমালোচনার ফোটো কপি !