কবিতা : কবি চন্দ্রাবতী ও চন্দ্রকুমার দে || ঋদেনদিক মিত্রো
|| ৪৪২ পংক্তি ||
|| আগে নিচে নেমে কবিতার শুরু ও একদম নিচে নেমে শেষ অবধি দেখে নিয়ে মন ঠিক করে পড়তে শুরু করুন। সময় নিয়ে-নিয়ে পড়ুন। তাতে তৃপ্তি। লেখার মাঝে-মাঝে বিজ্ঞাপন আছে, সেটা শেষ নয়। লেখার মাঝে-মাঝে বিজ্ঞাপন এটা ভালো, কিন্তু পরপর দেখে নিচে গিয়ে দেখুন এই লেখার শেষ কোথায়। ইন্টারনেটে যে কোনো লেখা পড়তে গেলে এইভাবে পড়বেন। নইলে পুরো লেখা পড়া যাবে না। ||
|| বাংলায় প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতী। ষোড়শো শতকের কবি, বর্তমান বাংলাদেশের ময়মনসিংহতে জন্ম ও মৃত্যু। আনুমানিক সময় কাল ১৫৫০-১৬০০। মীরাবাঈ, রজকিনী, মাধবী, এঁরা চন্দ্রাবতীর আগে বাংলাভাষায় মহিলা কবি হলেও সামাজিক ভাবনার আধুনিকতায় চন্দ্রাবতীকে প্রথম আধুনিক মহিলা বাংলা কবি বলা যায়। কারোর মতে এসব তর্ক বাদ দিয়ে তাঁকে বাংলাদেশের প্রথম মহিলা বাংলা কবি বললে কোনো বিতর্ক থাকে না। এসব তর্ক এখন পাশে রেখে আমরা দেখব, ষোড়শো শতকের জটিল সংস্কার ঘেরা সমাজের এক নারীর সংস্কার মুক্ত সাহসী প্রেম ও একক ইচ্ছায় বড় কবি হয়ে ওঠার কাহিনী পড়লে চমকে উঠবেন।
পাশাপাশি সেই ইতিহাসকে খুঁজে ফিরে ও সেটা নিয়ে গবেষনা করে আমাদের সমৃদ্ধ করেছেন একজন মানুষ, যিনি দারিদ্রের কারণে পড়াশুনা করতে পারেননি। পরে নিজ চেষ্টায় বই পড়া শিখে ও নিজের মত চুপিচুপি পড়াশুনা করে জ্ঞান বাড়াতে থাকেন। পরে কাজ করে খাবার তাগাদায় একটি মুদি দোকানের কর্মচারী হন। তারপরে ওই দোকান থেকে চাকুরি চলে গেল। এবার স্থানীয় একজন ধনীর তহশিলদারের চাকরি নিয়েছিলেন। তারপর থেকে পুঁথি গবেষনায় আসেন ও পরে স্ত্রীর রূপোর গহনা বিক্রি করে কলকাতায় যাওয়া আসা করে কিকরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হয়ে আমাদের আলোকিত করলেন, এই দুরন্ত কাহিনী আমাদের চোখে জল এনে দেয়। সেই গবেষক ময়মনসিংহ এলাকার চন্দ্রকুমার দে। “চন্দ্রকুমার” একত্রে লেখা দেখলাম। কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয়ে গবেষনার এত উন্নতি করেও দারিদ্রের চাপে অকালে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ও নানা বিপন্নতায় আরো কিছু শরীরের সমস্যায় হাসপালে মৃত্যু বরন করেন ১৯৪৬ সালে, স্বাধীনতার এক বছর আগে। তাঁর জন্ম ১৮৮৯ সালে। যাঁর দুটি গবেষনা গ্রন্থ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে বেরিয়েছিল ও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যাঁর নাম অনিবার্য অমরতা লাভ করেছে, সেই চন্দ্রকুমার দে মানুষটি জ্ঞান চর্চার পরিশ্রমে নানা শারীরিক অসুবিধেয় হাসপাতালে মারা গিয়েছিলেন। এবং সেটা ১৯৪৬ সাল। এই মহান আত্মত্যাগি গবেষকের জন্ম ১৮৮৯ সাল, মৃত্যু ১৯৪৬ সাল।
আমি মুক্ত চিন্তার সাহস নিয়ে সব কিছু চিন্তা করি ও কাজ করি। কারণ, সেই কাজ হয় সঠিকতার উপরে নির্ভরশীল। তাই ময়মনসিংহে জন্ম বাংলার প্রথম আধুনিক চিন্তার মহিলা কবি ষোড়শো শতকের কবি চন্দ্রাবতীর উপরে কবিতা লিখবার সময়ে চন্দ্রকুমার দে নিয়ে কবিতার প্রকরণগত বিষয়কে একত্র করে সম মর্যাদায় দুজনকে রাখা হল। কোথাও মিশ্র আকারে। এবং ‘দ্বিতীয় পর্ব’ আলাদা করেও সেটা করলাম।
চারপাশে এত শিক্ষা, ডিগ্রি, পদমর্যাদা, অনেক টাকা আয়, পরিচয়ের অহংকার, এসব কাদের তৈরি? সেই সব হারিয়ে যাওয়া ঘটনার নায়ক নায়িকারা আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসেন আড়াল থেকে। জ্ঞান চর্চা ও সমাজকে উন্নত করার পিছনে যাঁরা নিভৃতে নিজেদের শেষ করেছেন, তাঁদেরকে নিয়ে আমরা নীরব। এই অজ্ঞতার জেদ থেকে আমরা বেরিয়ে না এলে আমাদের মর্যাদা মূল্যহীন। আসুন, তাঁদেরকে পড়ে ও গভীরে অনুভব করে, শ্রদ্ধা করে আমরা আত্মবোধে সুখি হই।
একই সাথে এই কবিতায় আছে কবি চন্দ্রাবতীকে নিয়ে বাংলাদেশে সিনেমার কথা। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের সংযোগ। এঁদের এনেছি, এর ফলে চন্দ্রাবতীকে নিয়ে যে অনেক কাজ হয়েছে ও হবে, সেটাই প্রমাণ। সকলেই তাঁদের কর্মকৃত মর্যাদা পেলে, সেটাই তো দরকার। ||
|| উৎসর্গ তোকে ‘কাম’ সোনা। তুই সহ তোর সব হারানো এইরকম বন্ধুদের ||
এই কবিতাটি লেখার সময় আমাদের বেড়াল “কাম” হারিয়ে গিয়েছিল ও কয়েকদিন পর জানা যায় এই মিষ্টি বন্ধুকে পাড়ার কেউ-কেউ মিলে মেরেছে। বাপি মানে বাবা এবং মা ওকে ডাকতো “বড় সোনা”, আর, ওর সাথে ইংরেজিতে কথা বলার সময় ডাকতাম Come. সেই থেকে ওর নাম “কাম” ( Come.)। যদি কোনোভাবে কোনোদিন সে ফিরে আসে তাহলে সেই খুশি বোঝাতে পারবো না। ২০২১ সালে ওর বেড়াল বন্ধু রাস্তায় মোটরসাইকেলে ধাক্কা লেগে মারা গিয়েছিল। এই রকম অনেক কাহিনী আছে। সেই হারিয়ে যাওয়া ও অকালে মারা যাওয়া আমাদের পোষা ও অতিথি সব বেড়াল, কুকুর, পাখি, ইঁদুর, কীট, সব বন্ধুদেরকে এই কবিতা উৎসর্গ করলাম। তাদের অনেক ছবি ও ভিডিও করেছিলাম। ফোন হারিয়ে যাবার জন্য সেগুলি হারিয়ে গেছে। এই ছবি নতুন ফোনে তুলে রেখেছিলাম। খুঁজে পেলাম। বাপি ও মায়ের কত কান্না ও মন খারাপ এইসব কারণে। এই ছবি তাদের কাছে বিরাট শান্তনা।
“কাম” সোনা, তুই ও তোরা যেখানেই থাক, আমরা তোদের একই রকম ভালোবাসবো। এখন দেখ, তোকে কত মানুষ দেখছে। তুই আমার কবিতা পড়। খুব কষ্ট হচ্ছে তোর। এই সমাজ এই রকম রে। কিন্তু আমাদের ভালোবাসা তোদের কষ্টকে অনেক স্বস্থি দেবে।
[ A research Bengali poem like “Kabi Chandravati o Chandrakumar De”, a poem on poetess Chandrabati, the first poetess in Bengali language, 1550-1600, Moymansingha, now in Bangladesh. Also it includes the life of Chandrakumar de (1889-1846) , first discovered the story on Chandravati. This story poem reveals their dedication along with psychological effects of them. Written by Ridendick Mitro, India.]
——————————
কবিতা ঃ কবি চন্দ্রাবতী ও চন্দ্রকুমার দে
( ৪৪২ পংক্তি )
[ ছন্দ : ১৪ মাত্রার মিশ্র পর্ব অক্ষরবৃত্ত। পয়ারেও পড়া চলবে। একটু পড়ে নিয়ে উচ্চারণ গতির ভারসাম্য বুঝে নিন। সুবিধে হবে। ]
——————————-
ঋদেনদিক মিত্রো ( ভারত )
[ প্রথম পর্ব ]
( ১ )
চন্দ্রাবতী লিখেছিলে নিজ রামায়নে,
ভূমিকায় নিজ কথা পুঁথির প্রথমে।
“খরশ্রোতে ফুলেশ্বরী নদী বহি যায়।
বসতি যাদবানন্দ করেন তথায়।।
দ্বিজবংশী পুত্র হৈল মনসার বরে।
ভাসান গাইয়া যিনি বিখ্যাত সংসারে।।”
বাড়াতে দারিদ্র-জ্বালা কষ্টের কাহিনী।
তাঁর ঘরে জন্ম নিলা চন্দ্রা অভাগিনী।।”
ষোড়শো শতকের সেই যে বাংলাভাষা —
তাতে তুমি লিখেছিলে অন্তর পিপাসা।
এতটা সুন্দর করে আধুনিক রূপে,
অভাবনীয়, অনন্য, মেখে যায় বুকে।
এই পংক্তিগুলি দেখে চলে যাই সেথা,
কুটির ঘরেতে বসে লিখছ কী লেখা।
এভাবেই পরেপরে মুগ্ধ হই আমি,
সাম্রাজ্য না, জ্ঞানী নারী সব চেয়ে দামি।
সত্য রূপে জ্ঞানী যে, গুণে সে উচ্চ,
সস্তার সুখ, বিলাস তার কাছে তুচ্ছ।
দেহ সুখে সে হয় অতীব দূর প্রাজ্ঞা,
অন্তপ্রান শুনতে চায় তারি তো আজ্ঞা।
( ২ )
বাংলা ভাষায় প্রথম কবি চন্দ্রাবতী,
ষোড়শ শতকে নারী কবি নামে খ্যাতি।
তোমায় আজকে ডাকি দিয়ো গো সময়,
তোমার জীবনী খোঁজে চাই যে প্রশ্রয়।
শুধু কি জীবনী নাকি, সেই সাথে প্রেম,
অনন্ত হৃদয়ের কত কী লেনদেন।
এইসব নিয়ে চাই তোমার সকল,
প্রাচীনকে বর্তমানে করি গো উজ্জ্বল।
সে যুগে অখন্ড বঙ্গে ময়মনসিংহ,
কিশোরগঞ্জে পাতুয়ার গ্রামে জন্ম।
জন্মেছিলে ইংরেজি পনেরোশো পঞ্চাশে,
ষোলশো খ্রীষ্টাব্দে মৃত্যু প্রেমে দীর্ঘশ্বাসে।
আনুমানিক সময়ের হিসেবে ধরা,
জন্ম, মৃত্যু সালটাই এইভাবে করা।
কিন্তু ওই সময়ে তোমার উপস্থিতি,
যেমন গিয়েছে পাওয়া তোমার স্মৃতি
( ৩ )
মনসামঙ্গল কাব্যের কবি কজন,
তাঁদের মাঝে অনন্য যাঁদের সৃজন,
তাঁদের মাঝে দ্বিজ বংশী দাসের নাম,
অতি খ্যাত রূপে গন্য, ইতিহাসে স্থান।
সেই সাথে দ্বিজ দাস ছিলেন গায়ক,
মনসা ভাসান গানে ছিল খুব ঝোঁক।
সেই গান রপ্ত করে হল খুব নাম,
তাতেই সংসার চলে, করতেন গান।
তাঁর কন্যা তুমি ছিলে কবি চন্দ্রাবতী,
সেই শুদ্ধ আলোকে সিক্ত চিন্তনে সতী।
মাতা সুলোচনা ছিলেন সেই রূপ সিদ্ধা,
তাঁদের অনন্যা তুমি রূপে গুণে স্নিগ্ধা।
পিতা দ্বিজ দাস পরে হন শিব ভক্ত,
দরিদ্র ব্রাহ্মণ তিনি, মুখে শুদ্ধ সত্য।
পাতিয়ারি গ্রামে পাশে ফুলেশ্বরী নদী,
সেই হাওয়া, ঢেউ, আজ নেই সে ছবি।
পর্ণকুটিরসম অতিব ছোট বাড়ি,
কখোনো বা থাকতে হয়েছে একাহারী।
( ৪ )
নয়নচাঁদ ঘোষের পালাগানে পাই —
তোমার জীবনী সহ অনেক কিছুই।
চন্দ্রকুমার দে নামে এক গবেষক —
সেই সব তথ্য খুঁজে পেয়েছেন সব।
ময়মনসিংহতে তো তোমাদের নাম —
ঘরে-ঘরে বয়ে যেত দূর-দূর স্থান।
এর আগে তোমায় ঠিক ছিলনা জানা,
তুমি চন্দ্রাবতী ছিলে আড়ালে অনামা।
মলুয়া কাব্য, দস্যু কেনারামের পালা,
এই দুটি কাব্যে সুনাম পেয়েছ ঢালা।
পিতার আদেশে শুরু রামায়ন লেখা,
নিজস্ব কবিতায় মহাকাব্যকে দেখা।
এই রামায়নটা হয়নি শেষ করা,
অকাল মৃত্যুতে হয়ে গেলো সব ঝরা।
ছেড়ে যাওয়া প্রেমিকের আত্মহত্যায় —
তুমিও ছুটি দিলে সকল কবিতায়।
মিশে গেলে অতিদূরে মহাশুণ্যে পারে,
কী বিরাট ব্যাপ্ত প্রাণ মেশে অন্ধকারে।
( ৫ )
এর পূর্বে ছিল মহিলা বাঙ্গালী কবি,
খনা, রামী বা রজকিনী আর মাধবী,
কিন্তু বিশেষ কিছু কারণে তুমি সেরা,
ছিলেনা তো ভক্তিবাদের চিন্তায় ঘেরা।
নিজ রামায়নে এনেছ আধুনিকতা,
রামকে না, সীতাকে দিয়েছ উজ্জ্বলতা।
সেই লেখার আড়াইশ বছর পরে —
মাইকেল নাকি তা অনুসরণ করে —
লিখেছেন “মেঘনাদ বদ” মহাকাব্য,
তাই তুমিও মহাকবি, মূল্যে ভাববো।
তাহলে কোনো সূত্রে তোমার রামায়ন —
পড়েছিলেন কবে মাইকেল তখন।
ডক্টর দীনেশচন্দ্র বলেন এভাবে,
তোমার রামায়নের ছায়া মেঘনাদে।
যেটুকু করেছ কাজ তাতে বঙ্গ স্ফিত,
তোমাকে জানতে গিয়ে হই পুলকিত।
মৃত্যু আছে, তাই আসে, নিয়ে চলে যায়,
প্রাণের নিয়ম তবু স্বপ্ন দেখে যায়।
সে এক কাহিনী নিয়ে কী সাহসী মন,
ষোড়শো শতকে সেই তোমার জীবন।
প্রনয়ের ইচ্ছে ছাড়া জীবনের ধারা,
হয় কি পূর্ণ নাকি তা অন্য কিছু দ্বারা।
জ্ঞান চর্চা, দেব পূজা, সকলি সুন্দর,
সেই সাথে প্রনয়েরও উচ্চ আদর।
নইলে জীবন মাঝে সব অনুভূতি —
হয়ে ওঠে শুষ্ক কাষ্ঠসম এক মুখি।
তুমি সেই সংস্কার ও বিপ্লবের রূপ,
বুঝেছিলে প্রয়োজন আছে দেহ সুখ।
এত বড় আধুনিক চিন্তার রোহিণী,
সে যুগে ছিল কজন বলতো কবিনী।
( ৬ )
তোমার নিজের সেই জীবনের গাথা,
মানুষের কাছে ছিল যে কাহিনী চাপা —
সেটা নিয়ে লিখি এই কবিতাটি আগে,
তারপরে নিয়ে যাবো ভিন্ন রূপ স্বাদে।
ভোরে পুকুরপাড়ে তুলতে যেতে ফুল,
সপ্তাহে প্রতিটি দিন, ছিলনা তো ভুল।
সেখানে যে বালকের দেখা তুমি পেলে,
পরেপরে তার সাথে দিলে মন মেলে।
জেনেছিলে সে অনাথ, থাকে মামাবাড়ি,
তোমাকে দেখলে কত সুখ হোতো তারি।
ফুল তুলতে গিয়ে দুজনে ঘুরে-ঘুরে —
দুজনে লিখতে ছোট-ছোট “পদ” জুড়ে।
বাল্যেই দুইজনে লিখতে কাব্য পদ,
কতটা কবিত্ব ছিল দুয়েতে নীরব।
দুইজন সম মন, সব চিন্তা, রুচি,
সেই প্রেম ও মিলন সবচেয়ে শুচি।
সেই শুদ্ধ প্রেমে করি আমি নিবেদন,
তোমাকেই চন্দ্রাবতী, অজস্র চুম্বন।
এভাবেই ধীরে-ধীরে বেড়েছ যখন,
হঠাৎ হাতে পেলে জয়ানন্দের মন।
সেটাই জয়ানন্দের কবিতা, অবাক,
আয়তনে অতি ছোট, প্রনয়ের ডাক।
সেটা ছিল যে আড়াই অক্ষরের চিঠি,
এর মানে অতি সংক্ষেপে মনের প্রীতি।
তাতে না উত্তর পেয়ে জয়ানন্দ পরে —
পরিশীলিত বড় পত্র লিখলো ধরে।
সে পত্র এই রূপ, জয়ানন্দের ভাষা,
তাতেই জানালো সে তার ইচ্ছে ও আশা।
“যেদিন দেখেছি কন্যা তোমার চান্দবদন।
সেই দিন হইয়াছি আমি পাগল যেমন।।
তোমার মনের কথা আমি জানতে চাই।
সর্ব্বস্য বিকাইলাম পায় তোমারে যদি পাই।।
আজি হইতে ফুলতোলা সাঙ্গ যে করিয়া।
দেশান্তরি হইব কন্যা বিদায় যে লইয়া।।
তুমি যদি লেখ পত্র আশায় দাও ভর।
যোগল পদে হইয়া থাকবাম তোমার কিংকর।।”
এ পত্র পড়ে তোমার দিন রাত কাঁদা,
কখন পড়বে জয়ানন্দ ডোরে বাঁধা।
এবার পত্র লিখলে তুমি চন্দ্রাবতী,
সেই পত্র জয়ানন্দ পড়ে মুগ্ধ অতি।
“তোমায় দেখিব আমি নয়ন ভরিয়া।
তোমারে লইব আমি হৃদয়ে তুলিয়া।।
বাড়ির আগে ফুট্যা রইছে মল্লিকা, মালতী।
জন্মে-জন্মে পাই যেন তোমার মতন পতি।।”
এইভাবে দুইজনে চলল কতকি,
এভাবে চালিয়ে গেলে তুমি চন্দ্রাবতী।
পিতাকে পুজার ব্যাবস্থা করার পরে,
আড়ালে পড়তে চিঠি মনোযোগ ধরে।
দেহ মন কাঁপতো সেসব চিঠি দেখে,
প্রেম তো একেলা খেলায়, কেউ কি শেখে?
সেই যুগে গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবারেতে —
জন্মে তবু এত সাহিসী হয়েছিলে যে।
দেহের চাহিদা সুখ দেহকে ভরায়,
কে সমাজ, কী সংস্কার, কে কাকে ডরায়।
আজকের চেয়েও তো ঢের আধুনিক,
নারীর মুক্তিতে তুমি প্রথম পথিক।
তাই তুমি এত সুখের স্বর্ণ সাম্রাজ্য,
তোমাকেই চাই আমি প্রাণের আহার্য।
যে নারী নির্লোভ হয় সকল সম্পদে,
সে নারী আসল প্রেমে জাগে অনুভবে।
যে নারী জ্ঞান চর্চায় জীবন সাজায়,
সেই নারীর সঙ্গ সুখ অমৃত জাগায়।
সে নারী কজন আছে উচ্চত্বে প্রগতি,
সেই নারী হলে তুমি, কবি চন্দ্রাবতী।
চারিপাশে ধুন্ধুমার নারীরা হাজার,
বোঝেনা জীবন স্বাদ, নেই তো বিস্তার।
সকলি কৃত্তিমতা, দেহে, মনে, বোধে,
শুদ্ধ উচ্চ মন মরে শুধু চাপা ক্ষোভে।
তাই তো তোমায় পেতে হয়েছি সজাগ,
ষোড়শো শতক থেকে কাছে এসো আজ।
( ৭ )
সেই মধ্যযুগে তুমি আধুনিকা হয়ে —
পিতাকে জানালে তুমি নিজ মুখে কয়ে।
পিতা শুনে ঘটককে ডেকে জানালেন,
ঘটক তো পাত্রের মামাকে মানালেন।
নির্দিষ্ট দিনে হইবে বিবাহ উৎসব,
তুমি চন্দ্রাবতী, ছিলে রোমাঞ্চে নীরব।
এদিকে আসমানি, এক কাজীর মেয়ে —
সে জয় করে নিল এই জয়ানন্দকে।
আসমানি আসতো নদীতে জল নিতে,
একদিন জয়ানন্দ এলো সেই দিকে —
চোখে চোখে মিলে গেল, দুজনে নীরব,
দেহে মনে ঢুকে পড়ে সেই অনুভব।
আসমানী জানলো জয়ানন্দর সাথে —
তোমার বিবাহ হবে, সামনে বসন্তে।
এইবার তো ঘুরে গেল সেই কাহিনী,
সে হতে চায় জয়ের জীবন সঙ্গীনি।
জয়ানন্দ পড়ে গেল অতিব ফ্যাসাদে,
চন্দ্রাবতী, তোমায় নিয়ে কী হবে, ভাবে।
আসমানী তার পিতাকে গিয়ে বললে —
আব্বা, জয়ানন্দকে চাই যে কোনো ছলে।
আসমানীর আব্বাজান জয়ানন্দকে —
ভালো ছেলে বুঝে নিয়ে পছন্দের চোখে —
সংস্কারের চাপেতে ইসলাম করিয়ে —
নিজ কন্যাকে সঁপেন নিজ হাত দিয়ে।
কিন্তু সেদিন তুমি প্রস্তুত চন্দ্রাবতী —
নিজ গৃহে নিজ বিবাহে কত অতিথি,
সে সময় অতি দ্রুত হল জানাজানি,
জয়ানন্দকে বিয়ে করেছে আসমানী।
একদম সেই লগ্নে সেই মুহুর্তেই,
জয়ানন্দ বিয়ে করে আসমানীকেই।
( ৮ )
এটা শুনে তুমি চন্দ্রাবতী বাকরুদ্ধ,
নিজের মনের সাথে করে গেলে যুদ্ধ।
দেরি নাই করে তুমি জানালে পিতাকে,
বিবাহ করবে না আর কারোর সাথে।
শিবপূজা করে তুমি কাটাবে মন্দিরে,
পিতার সম্মতি পেয়ে স্বস্থি নিলে ধীরে।
কিন্তু প্রেমের স্মৃতি শরীরের ভিতর —
দিনরাত দিতে থাকে কত কী আঁচড়।
সেই আঁচড়েতে তুমি চন্দ্রাবতী চুপ,
বাইরে মানুষ এক, মনে অন্য রূপ।
কে বা প্রেম, কে বা শত্রু, যায়না তো বোঝা,
সময়েতে বুঝা যায় কোথায় কী মজা।
এইসব বুঝে-বুঝে চলতে-চলতে —
জীবনটা হেঁটে যায় জ্বলতে-জ্বলতে।
এভাবে, চন্দ্রাবতী হলে বিষন্ন মন,
মানুষকে চিনে হয় নির্জন জীবন।
( ৯ )
এইভাবে কেটে গেল কয়টা বছর,
সেদিকে জয়ানন্দও চিন্তিত বিস্তর,
পথ বেঁকে প্রেম আর বিবাহ পুরন,
সায় দিতে চায়নি জয়ানন্দের মন।
পরপর অনেকটা আশাহত হয়ে —
অনেক রকমভাবে অসুবিধে সয়ে —
তোমাকে ফিরে পেতেই কাঁদে তার প্রাণ,
পাগলের মত করে তোমার সন্ধান।
হয় তো এটাও সত্য — সময়ে ভাবায়,
পুরানো প্রেমের স্মৃতি জয়কে কাঁদায়।
তোমার একাকিত্বও তাকে দিন রাত —
বছর-বছর ধরে দিয়েছে আঘাত।
সে তোমার দেখা চায়, তুমি তো পাথর,
বিনয়ে ক্ষমায় সে বাঁধতে চায় ঘর।
তখন জয়ানন্দ তোমায় লেখে পত্র,
সেই পত্রের মাঝে ছিল এইসব ছত্র।
“অমৃত ভাবিয়া আমি খাইয়াছি গরল,
কন্ঠেতে লাগিয়া রহিয়াছে কালো হলাহল।
একবার শুনিব তোমার মধু রস বানী,
নয়ন জলে ভাসাইব রাঙা পা দুখানি।”
সেই পত্র পড়ে তুমি কেঁদে দিশাহারা,
মনে হল তখনি হবে বাঁধন ছাড়া।
( ১০)
চন্দ্রাবতী, এই নিয়ে পাই দুটি তথ্য,
যখনি পেয়েছ তুমি জয়ের ঐ পত্র,
আড়ালে অনেক কেঁদেই ধৈর্য হারিয়ে —
সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে এক পা বাড়িয়ে।
পিতাকে জানতে চাও তাঁর অভিমত,
পিতা বুঝলেন এ তো সমস্যার জট,
কারণ, পারোনি তুমি জয়কে ভুলতে,
জয়ের ক্ষমা চাওয়া তোমাকে নিশ্চুপে —
আবার টানছে যেন আগের সময়ে,
প্রেমের অতীত স্মৃতি টানছে প্রনয়ে।
সংস্কার মুক্ত হয়ে বিপর্যস্ত হৃদয়ে —
চাইলে অনুমতি পিতার কাছে কয়ে।
পিতা সব শুনে ফিরে বলেন তোমায় —
মন দাও শিব পুজা ও কাব্য লেখায়।
এরপর রীতি মেনে মন্দিরে যাওয়া,
নিরব নিস্তব্ধ হয়ে যন্ত্রণা পাওয়া।
নিঃস্ব হয়ে তখন চুপচাপ চলনে —
ঢুকে যেতে মন্দিরে পুজার নিয়মে।
একদিন জয়ানন্দ মন্দিরে দাঁড়িয়ে —
নিজ হাতে একটি কবিতা পত্র দিয়ে —
চলে গেল নদীতে, এটা শেষ লেখাই,
তাতে লেখা ছিল — শেষ দেখা এইটাই।
পুজার পর বাইরে এসে পত্র দেখে —
তুমি চন্দ্রাবতী গেলে নদীর পাড়েতে,
পাশে নদী ফুলেশ্বরী, অতি ভয়ংকর,
সেই যুগে সব নদী গভীর বিস্তর।
গিয়ে দেখো, জয়ানন্দ দিয়েছে জীবন,
আবার আঘাতে স্থির হয়েছ তখন।
পুরানো প্রেমের স্মৃতি কতকি ভাবালো,
নিজে গেল জীবনের সব সুখ আলো।
জয়ানন্দের সাথে সকালে ফুল তোলা,
পুকুর পাড়েতে বসে কত কথা বলা।
কখনো দুজনে মিলে কবিতাও লেখা,
চোখের ভাসানি দৃষ্টি মাঝে জল রেখা।
জয়ানন্দের স্পর্শ দিত কত রোমাঞ্চ,
যৌবন শুধু জীবনকে করে জাগ্রত।
সেই হাসি ও দুষ্টুমি, মান অভিমান —
চলে গেল নদীজলে অতলের স্থান।
( ১১ )
আরেকটি কাহিনী আছে অন্য রকম,
সেটাও বলছি তবে কাহিনী এমন।
পুনরাবৃত্তি করে বলছি সেই গল্প,
প্রেম মানে জীবনের কতকি প্রকল্প।
প্রত্যাখানের পত্র পেয়ে তো জয়ানন্দ —
পাগলের মত ছুটে আসে, প্রেমে অন্ধ।
তুমি ঠিক তখনি তো ঢুকছো মন্দিরে,
মন্দিরে ঢুকে দুয়ার বন্ধ কর ধীরে।
জয়ানন্দ বিভ্রান্ত তোমার অভিমানে,
সব কি সমাপ্ত দুজনের মাঝখানে?
মন্দিরের দরজায় টোকা বারেবারে,
“দ্বার খোলো চন্দ্রাবতী, দেখা দেও আমারে।”
মন্দিরের ভিতরে তুমি ধ্যানে নিমগ্ন,
হয়তো প্রেমের আঘাতে ছিলে বিষন্ন,
এই নিস্তব্ধতা জয়ানন্দকে কাঁদায়,
মালতি ফুলের রসে লেখে দরজায় ঃ–
“শৈশব কালের সঙ্গী তুমি যৌবন কালের সাথি,
অপরাধ ক্ষমা করো তুমি চন্দ্রাবতী।”
তোমার পুজার পরে দরজা খুলতে–
দেখলে দরজায় লেখা চিঠি তোমাকে।
মন্দির হয়েছে কুলসিত এই ভেবে —
জল আনতে গেলে তুমি, মন্দির ধোবে,
ফুলেশ্বরী নদীতে গিয়ে তুমি স্থবির,
নদীতে ভাসছে মৃত জয়ানন্দ স্থির।
এই দৃশ্য তোমায় করে এত বিপন্ন,
তুমিও নদীতে ঝাঁপ দিলে তার জন্য।
এ কাহিনী যেমনি হোক, জয়ানন্দকে —
ভালোবেসে নিজেকে শেষ করেছিলে যে।
( ১২ )
তখন বয়সে তুমি নিকট পঞ্চাশ,
এ বয়সে কজন নারীর থাকে আশ,
বিশেষত সেই কালে তিরিশেতে নারী —
ঠাকুরমা হয়ে যেত, সমাজের খাঁড়ি।
পঞ্চাশ বছর বয়স নারীর ক্ষেত্রে —
তাহলে কেমন ছিল সমাজের নেত্রে!
সেই বয়সেও তুমি ষোড়শীর মতো —
হয়ে গেলে দিশাহারা মনে নিয়ে ক্ষত।
মন দিলে পুজাতেই সকল সময়,
এভাবে একদিন মন্দিরে মৃত্যু হয়।
বাঁচতে পারোনি তো জয়ানন্দকে ছেড়ে,
নিয়তির সাথে কেউ না উঠুক পেরে —
জীবনকে করেছিলে প্রেম দিয়ে জয়,
মনে জয়ানন্দ ছিল সকল সময়।
( ১৩ )
যৌবনের জাত ধর্ম ও সংস্কার মিথ্যা,
ষোড়শো শতকেও জেনেছিলে এ বিদ্যা।
প্রেমেও কাজীর কন্যা ছিল তো উদার,
প্রকৃতির সত্য ভাঙে বিভেদ বিকার।
দুই ধর্মে চিন্তা রীতি হয় তো অমিল,
তারও উর্ধে অধিকারি দুর্বার দীল।
তুমিও তো কম নও, মুক্ত অনুভবে,
পর ধর্মে চলে যাওয়া জয়ানন্দকে —
আবার ফিরিয়ে নিতে ছিলে খোলা মন,
নইলে তোমার কেন অকাল মরন।
এতোটা সংস্কার মুক্ত ছিলে সেই কালে!
ধরা দাওনি তো কোনো কুসংস্কার জালে।
তাই তো কবি তুমি বিশ্ব মেধা বিদুষী,
আমাকে ভালোবাসলে প্রাণ হবে খুশি।
দেহে মনে অশেষ যৌবন চিরদিন,
সেই নারী হতে পারে অনন্যা রঙ্গীন।
তাই পঞ্চাশেও তুমি সেই মধ্যযুগে —
যৌবনকে রেখেছিলে বিরহেতে ডুবে।
আজকে বাংলাদেশের মাঝে সেই স্থান,
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে আছে নাম।
সারা বিশ্বে খ্যাত হয়েছে তোমার নামে,
কবি চন্দ্রাবতী আছে সর্বত্র সেখানে।
ময়মনসিংহে পথেঘাটে, নদী জলে,
তোমার কবিতা, গান, যেথা সেথা চলে।
ষোড়শো শতকের সময়কে পাওয়া —,
আজকেও দেয় ময়মনের হাওয়া।
আছে সেই মন্দির তুমি করতে পুজা,
আছে সেই ভিটেমাটি, কেউই দেখে না,
ইতিহাস রক্ষায় পরে উঠলো দাবী,
আধুনিক সভ্যতা কত সুবিধাবাদী।
জ্ঞান আর চিন্তার স্থানকে নিয়ে ভয়,
সেটাকে যত্ন করতে কোনো চেষ্টা নয়।
তবু তার মধ্যে থেকে আছে কিছু জন,
তাদের প্রতিবাদে বাঁচে শুদ্ধ ভুবন।
( ১৪ )
তুমি ষোড়শ শতকে কবির জীবন,
আমি একবিংশতের কবি একজন।
আজকে সময় কী রূপ বলতে পারো,
প্রভাবে ও স্বভাবে মধ্যযুগীয় আরো।
পরশ্রীকাতর, ধান্দা, নরনারী সব,
তুচ্ছ চিন্তা, তুচ্ছ কাজেই করে উৎসব।
সেই সমাজের মাঝে সৎ প্রতিষ্ঠায়,
কত কী দূরুহ জ্বালা কষ্ট ছলকায়।
সেই সব সয়ে করি সাহিত্যের কাজ,
তোমাকে প্রেমিকা বলে কাছে চাই আজ।
ফিরে পেতে চাই আমি ষোড়শো শতক,
সেই বাংলার গ্রাম ও সেই মেঠো পথ।
সেই সময়ের নদী, খাল ও পুকুর,
রমনীর কাঁখে জল, নীরব দুপুর।
গোয়ালেতে গরু আর পুকুরেতে হাঁস,
বিরাট গ্রামে বারো বা চৌদ্দ গৃহ বাস।
সূর্যের আলো ছিল সুস্থ স্বচ্ছ মলিন,
চাঁদ ছিল রূপকথা সম কী মোহিন।
ঢেঁকি ছিল ঘরে-ঘরে, ছিল কুলা, ধামা,
নারীর বাইরে যেতে ছিল কত মানা।
মাটির দেয়ালে ছিল খড়ের ছাউনি,
চারিপাশে পাশাপাশি কত মাঠ জমি।
বহু গ্রাম পরে-পরে এক পাকা বাড়ি,
চুন সুড়কি দিয়ে গাঁথা, অন্দরে নারী।
সেইসব নারীদের মন যেত জ্বলে,
সংস্কারের চাপে থাকা অন্দর মহলে।
( ১৫ )
সেই সময়েতে তুমি জন্মেছিলে কবি,
যখন বাংলায় ছিল সেই বাংলা ছবি।
মাঠ থেকে শাক তুলে এনে হতো রাঁধা,
দাওয়ায় মাদুরে শুয়ে রাত্রিতে জাগা,
জ্যোৎস্নায় রাত্রিরে এইভাবে হোতো দেখা,
প্রতিটি মানব সত্বা পৃথিবীতে একা।
সেই রাতে প্রদীপের আলো জ্বেলে দিয়ে —
কবিতা লিখতে তুমি নীরবতা নিয়ে।
রাত্রির গভীরে নীরবতা সুনসান,
লিখে যেতে কবিতায় কত উপাখ্যান।
আমি তো তোমার সাথে সেই নিশি রাতে —
বসে গল্প করতে চাই তো একসাথে।
কিংবা জল আনতে গেলে কোনো পুকুরে,
কিংবা পাড়ার কুয়ায়, নদীতে দুপুরে,
সেখানে অপেক্ষা করে আমি থাকতাম,
চোখের হাওয়ার ভাষায় ডাকতাম।
তুমি কি হাসতে, নাকি দিতে খুব গালি,
এইসব কল্পনায় মজে থাকি খালি,
অনন্ত মহাশূন্যে তো সব কিছু শূন্য,
তবু নশ্বর দেহকে প্রেম করে পূর্ণ।
প্রেমও থাকেনা শেষে, সে হয় হাওয়া,
হাওয়ার সত্যে সত্য যা কিছু চাওয়া।
মানব “আমি” তো সত্য নরনারী ভাগে —
প্রনয়ের কী বিচিত্র অনন্তের স্বাদে।
শূন্যেতেই মিশে যায় এই ভালোবাসা,
তবুও প্রাণ স্পন্দনে কত কিছু আশা।
( ১৬ )
কিছুই আমার নয়, তবু রাত জাগা,
সকল ফাঁকির মাঝে কিছু ভালোলাগা।
সেই ভালোলাগা টুকু যতক্ষণ থাক,
সেই নিয়ে জাগি ও ঘুমাই কত রাত।
মানুষ তখনি সেরা অনন্তে অপার,
মৃত্যুর সমাপ্তিতেও মানেনা সে হার।
অস্তিত্বহীন জীব দেহকে ধরে রেখে —
আমৃত্যু, সূর্য, নক্ষত্র, তারা যায় দেখে।
[ দ্বিতীয় পর্ব ]
( ১৭ )
এইবার বলি আরেক মহান নিয়ে,
কবি চন্দ্রাবতী, তোমার জীবনী দিয়ে —
প্রথমে বঙ্গে কে তুলেছেন আলোড়ন —
সেও যে এক কাহিনী করছি বর্ণন।
তুমি তো দাঁড়িয়েছিলে কোন সে আড়ালে,
চন্দ্রকুমার দে এই আধুনিক কালে —
আমাদের কাছে এনে তোমার জীবন,
আমাদের দেখালেন তোমার সৃজন।
উনিশশো তেরোতে “সৌরব” পত্রিকায় —
চন্দ্রকুমার দে নামে কারোর লেখায় —
তোমাকে জেনে মুগ্ধ দীনেশ চন্দ্র সেন,
“মহিলা কবি চন্দ্রাবতী” লেখা দেখেন।
তারপরে খুঁজা হয় কোথায় লেখক,
লেখকের পরিচয় জানেন বিশদ।
দরিদ্র সন্তান চন্দ্র কুমার দে নাম,
নিজ চেষ্টায় শিক্ষা ও কর্মের সন্ধান।
মুদি দোকানে চাকরি করে তাও গেল,
তারপরে খুব কষ্টে যে চাকুরি এল —,
নেত্রকোনার রাঘবপুরেতে চাকরি,
পদ হলো তহসিলদারের পাগড়ি,
তারানাথ তালুকদারের অধীনেতে,
চাকরিটা পেয়ে চন্দ্র স্বস্থি পেলেন যে।
সেই চাকুরির সূত্রে পালাগান নিয়ে —
একক গবেষনায় মজেন জমিয়ে।
দারিদ্রে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে —
তবুও কাজ চালান জীবনটা ক্ষয়ে।
ডক্টর দীনেশচন্দ্র সাথে পরিচয়,
সে লেখা দেখে যবে ছয় বছর হয়।
পরে স্ত্রীর রূপার গহনা বেচে দিয়ে —
কলিকাতায় আসতেন সেটাই নিয়ে।
এভাবে লিখতেন “পূর্ববঙ্গ গীতিকা”,
উনিশশো ছাব্বিশ সালে প্রকাশিত তা,
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচে।
কোন কাহিনী কিভাবে কোথায় ছুটছে।
Eastern Bengal Ballads নামে তাকে–
অনুবাদ করেন শ্রী সেন ইংরেজিতে।
তা থেকেই বিদেশিরা তোমায় জানেন।
পরেপরে গুণীকূল তোমায় মানেন।
এভাবে ছড়িয়ে যাও তুমি চন্দ্রাবতী,
কত জ্ঞানীর ত্যাগে হাসেন স্বরস্বতী।
( ১৮ )
“মৈমনসিংহ গীতিকা” যবে বেরিয়েছে,
উনিশশো তেইশ, সে কবে চলে গেছে।
তারপরে “পূর্ববঙ্গ গীতিকা” বেরোয়,
উনিশশো বত্রিশে শেষ প্রকাশ হয়।
এই চন্দ্রকুমার দে, জন্ম, কেন্দুয়াতে,
এটি নেত্রকোনা, বর্তমান বাংলাদেশে।
জন্ম, আঠেরো শত উননব্বই সালে,
শেষ নিঃশ্বাস, সূর্যকান্ত হাসপাতালে।
এটি ময়মনসিংহের হাসপাতাল,
প্রয়াণ, উনিশশো ছেচল্লিশের কাল।
দেশ স্বাধীনতা পায় পরের বছর,
কল্পনায় চলে যাই কত দূর স্তর।
চন্দ্রাবতী, তুমি সব দেখ দূর থেকে,
তোমাকে কেন্দ্র করে কত কী ঘটেছে।
জীবন ও সভ্যতার কত দূরুহতা,
তার মাঝে জ্ঞান ও চিন্তার ঘনঘটা।
( ১৯ )
সতেরশোতে কোরশী মাগন ঠাকুর —
সে যুগের তুলনায় স্বাদে ভরপুর —
চন্দ্রাবতী, তোমায় নিয়ে লেখেন গ্রন্থ,
“কবি চন্দ্রাবতী কাব্য” প্রেমেতে স্ফুরন্ত।
কবি মাগন ঠাকুরের পিতা বিখ্যাত,
আরাকানের মন্ত্রী, মাগন তাঁর জাত।
বাংলা, ফারসি, বর্মি ও সংস্কৃত ভাষায় —
সীমাহীন পান্ডিত্য ছিল তাঁর শিক্ষায়।
সঙ্গীত ও অলংকার শাস্ত্রেও পন্ডিত,
এত বড় জ্ঞানী তোমার কাব্যে মোহিত।
তাহলে তোমার মান সে যুগের মানে —
কতখানি উচ্চ ছিল কাব্যের সম্মানে!
সেই কবি মাগন ঠাকুর চট্টগ্রামে —
প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন যোগ্য দামে।
কত জ্ঞাণী আর গুণী ও ক্ষমতাবান,
করেছেন, করছেন তোমাকে সব্ধান।
(২০)
এই দীর্ঘ কবিতায় প্রেম পত্রে বলি —
চন্দ্রা, তুমি তো ছিলে কত গুণের কলি।
আজ থেকে চারশো বছর বেশি আগে —
সেই ষোড়শো শতকে নিজস্ব স্বভাবে —
ছিলে তো অতুলনীয়া জ্ঞাণী বীরাঙ্গনা,
এযুগে নারীর সাথে হয় না তুলনা।
এযুগের নারীর চেয়েও তুমি মুক্ত,
গৃহ কর্ম, জ্ঞান চর্চা, হাঁটা চলা স্ফুর্ত।
সেই সাথে আধুনিক চিন্তায় কবিতা,
প্রেমের আঘাত সয়েও কর্মে স্থিরতা।
বিধর্মে চলে যাওয়া প্রেমিক ফিরতে,
তাকেও আবার ফিরে চেয়েছিলে নিতে।
তার অভিমানে মৃত্যু তোমায় কাঁদায়,
পূর্ণ মানব সত্বায় তোমাকে সাজায়।
কল্পনায় দেখি তুমি চুলায় রাঁধছ,
তার মাঝে কাউকে দিয়ে চুল বাঁধছ।
কঠিন দারিদ্রেও ঘরে অতিথি এলে,
কিকরে সামাল দেবে ব্যাস্ত হয়ে গেলে,
পরনে তাঁতের শাড়ি, হাতে দুটা চুড়ি,
মাথায় খোঁপায় ফুল, চোখে প্রেম চুরি,
যাচ্ছ জল আনিতে নদীতে, পুকুরে,
কোন ছেলে আড়াল থেকে দেখে দুপুরে,
সেই ছেলে আমি হলে তোমার পুরুষ,
আমাকে দেখে কি পেলে তুমি কিছু হুঁস!
মধ্য যুগে শিক্ষাহীন বিপন্ন সমাজে,
দরিদ্র নারী হয়েও ছিলে এত কাজে!
কত ধৈর্য, মেধা চর্চা, ভারসাম্য ভাব,
সংসার ও সবক্ষেত্রে নিয়ত সজাগ।
“রামায়ন কথা” কাব্যে সীতাকেই নিয়ে —
সেরা চরিত্র হিসেবে দিয়েছ সাজিয়ে।
কতটা প্রাজ্ঞা চিন্তা করলে তা সম্ভব,
তোমাকে দিয়েছি প্রেম, আমার গৌরব।
দরিদ্র নারী হয়ে চায় ধনী ছেলে,
স্থুল বুদ্ধির সমাজ খুশি তাই পেলে।
তুমি চেয়েছিলে জ্ঞানী গুণীর আনন্দ,
চেয়েছ অনাথ কবি বন্ধু জয়ানন্দ।
বঙ্গ, ভারত ও সারা পৃথিবীর মাঝে,
তোমার মতন নারী যেন শুধু জাগে,
তবেই বদলাবে তো বর্বর সমাজ,
এর বাইরে ভুয়া উন্নয়নের কাজ।
জ্ঞান, মন, রুচি ও অভ্যেসে উন্নয়ন,
এটা ছাড়া উন্নতিটা হয় কিরকম!
কবে যে সমাজ হবে সেই চিন্তা ধারা,
জ্ঞান ও আত্মবিশ্বাসে সব হবো খাড়া।
বিভ্রান্ত পৃথিবী আজ কোনদিকে যাবে,
চন্দ্রা, তোমার পথেই তারা পথ পাবে।
( ২১ )
এরপরে দুহাজার পনেরো সালেতে।
দ্বিজকানাই প্রণীত “মহুয়া” কাব্যেতে —
মুগ্ধ হয়ে সেই নিয়ে সিনেমা করেন,
বাংলাদেশে চলচিত্রে তোমায় ধরেন।
এর নির্দেশক “রওসন আরা নিপা”,
ক্রমশঃ খোঁজ চলে তোমায় নিয়ে লিখা।
নয়ান চাঁদ ঘোষের “চন্দ্রাবতী পালা”,
তা দেখে এন, রাসেদ চৌধুরি উতলা,
সিনেমা করেন তিনি “চন্দ্রাবতী কথা”,
“দিলরুবা হোসেন দোয়েল”যে নায়িকা।
দিলরুবা হোসেন খুব নামি মডেল,
এভাবে চন্দ্রাবতী তুমি fairy-tale.
কোথা থেকে কিভাবে যে কাহিনী ঘুরেছে,
ষোড়শ শতকের চন্দ্রাবতী উড়েছে,
বিকেলের রৌদ্রে তুমি যেন মুক্ত পাখি,
তোমাকে চয়ন করে যত্নে তুলে রাখি।
মৃত্যু সকলি মারে, দেয় সব চাপা,
তা থেকে বেরোয় বৃক্ষ অশথের পাতা।
————————————-
Ridendick Mitro
[ ২০২৪, ১২ মে, বিকেল ৫টা থেকে রাত ১:৪৬, ১২ মে, ১৩ মে বিকেল থেকে রাত ১০টা । ১২ তারিখে দুপুর ৩টার দিকে হোটেলে বসে এটা লেখার চিন্তা আসে। হোটেলে ঢোকার সময় একটু ভাবনা আসছিল। খেতে বসে একটা স্থিরতায় এসেছিলাম। ফিরে এসে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে লিখতে থাকা। কম বেশি ১৫ ঘন্টা মত সময় গেছে। পরে আরো তিন বা চার ঘন্টা মতো ঠিকঠাক করতে সময় দিয়েছি। তারপরেও ১৭ মে পর্যন্ত নানা সময় আরো কিছুকিছু সুক্ষ্ম অদলবদল করেছি, ১৯ ও ২০ তারিখেও কাজ করেছি। পরিশ্রম সব নিয়ে প্রায় ২৫-৩০ ঘন্টা গেছে আরো-আরো নিখুঁত করার জন্য। কারণ, প্রাথমিক অবয়বে একটা লেখা ভালো হয়ে উঠলেও সেটাকে রেখে দিলে অনেক রকম অদলবদল প্রয়োজন বলে মনে হয়। সেইগুলি তখন করতে-করতে পরেপরে সেইগুলিকে নিয়ে আরো অদলবদল দরকার হয়, ফিরে-ফিরে। কোনো বাক্যে কোন শব্দটা আরো কেমন হলে সেটার মান কেমন হোতো, আরো কোন কথা কোথায় জুড়লে কেমন হতো, কোন বাক্যে কোন-কোন শব্দ আগুপিছু করলে সেটার ওজন কিভাবে পাঠক অনুভবে প্রয়োজন হয়, এগুলি অনেক ভেবে কাজটা করলাম।
লিখতে-লিখতে সংশোধন করতে-করতে যাচ্ছিলাম। লেখা শেষ করে আবার চোখ বুলাই। তেমন কোনো ত্রুটি না পেলেও বারবার দেখে গেছি, কিছু কিছু তথ্য কাটছাঁট করে আবার কয়েকটি জায়গায় ঠিক করলাম। একটা মুদ্রিত পত্রিকার জন্য ৫০ পংক্তির মধ্যে একটা কবিতা দেবার কথা ছিল। সেটা লিখতে গিয়ে এটা দাঁড়ালো। তাই এটা সেই পত্রিকাকে আর দিলাম না।
এটি ওয়েবসাইটে প্রকাশের পরে আইনীয় সম্মতিতে কোনো মুদ্রিত পত্রিকায় বেরুনোর পরেও যদি অজান্তে তথ্যে কোথাও ভুল থাকে, সেটা পরে আবার নির্দিষ্ট স্থানে কবি দ্বারা সংশোধিত হবে। আসল ব্যাপার, কবিতাটির স্বাদ গ্রহণ করার সুখ। ইতিহাসের কাহিনী নিয়ে কবিতা। কোনো সুক্ষ্ম তথ্য নিয়ে বিকল্প মতামত থাকতেই পারে। কিন্তু, কোনোটা ভুল প্রমানিত হলে অবস্যই সংশোধিত হবে। যেমন “পূর্ববঙ্গ গীতিকা”, এটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয় ১৯২৬ সালে। আবার কোথাও বলা আছে ১৯২৩-১৯৩২ সালে। তাহলে এটা কি বিবিধ ধারায় প্রকাশিত হয়েছিল। সেক্ষেত্রে আমি দুটো তথ্য মিশিয়ে লিখেছি। এইসব ত্রুটি শিক্ষাবীদ গবেষকদের দ্বারা মার্জনীয় হবে, আশা করি। যেমন, জয়ানন্দ ভুল বুঝে ফিরে এসেছিল। তখন চন্দ্রাবতী দেখা করতে চেয়েও করেনি অভিমানে। পিতার আদেশেও বটে। আবার জয়ানন্দ যে চন্দ্রাবতীর সাথে দেখা করতে চেয়েছিল, এই তথ্য সে তো জয়ানন্দর কোনো উপস্থিতি থেকে পেয়েছিল। কোথাও পাই চন্দ্রাবতী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহনন করেন নদীতে জয়ানন্দের মৃত্যুর পরে। আমিও চেষ্টা করেছি সব তথ্য সমন্বয় করে লিখতে। তাই এক্ষেত্রে কাহিনীর গতি এদিক ওদিক হচ্ছে। এইসব তথ্য নানাভাবে পেয়েছি, বা আমি বুঝতে পারিনি, বা যেমন বুঝেছি সেইভাবে লিখেছি, হয় তো সেটাই ঠিক। গবেষক সাংবাদিকগনও তাঁদের মত তথ্য জোগাড় করে নিজেদের সচেষ্টতায় লিখেছেন। তাই এইগুলি সমস্যা নয়। মূল গল্প ও রচনার ধারা কাব্যের স্বাদ দিচ্ছে কিনা, এটাই আসল। বাকিগুলি পন্ডিতদের দ্বারা বিবেচিত হোক, কতটা মার্জনীয়, কতটা অমার্জনীয়। এক্ষেত্রে বিষয়টা তাঁদের হাতে ছেড়ে দিতে হচ্ছে।
————————————
বিঃদ্রঃ — ঋদেনদিক মিত্রো ( Ridendick Mitro) পেশায় ইংরেজি ও বাংলাভাষায় কবি-উপন্যাসিক-গীতিকার-কলামিস্ট। সম্প্রতি স্পানিস ভাষা শিখেও এই ভাষায় লেখার প্রস্তুতি চলছে। কলকাতা। ভারত।
————————————–
কবিতায় তথ্যে কোথাও কোনো ভুল থাকলে, সেটা জানা গেলে, কবি কতৃক সেটা ত্রুটি মুক্ত করা হবে ছান্দিক নিয়ম মেনে। এবং সেটা তখন মুদ্রনে দেখা যাবে। কবির সব লেখার ক্ষেত্রে এটা হবে। অনেক দূর ইতিহাস তো, তাই তথ্য নিয়ে তর্কবিতর্ক থাকতে পারে। মূল লেখা ও কাব্যের বৈশিষ্ট কেমন সেটা আসল বিচার্য। সেটাই পরখ করে আলোচনা, সমালোচনা করুন যুক্তি নির্ভর চোখে। বানান নিয়ে পুরানো ও নতুন বানানের অনেক পদ্ধতি ও বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। সেগুলি পন্ডিতদের বিচার ও দায়িত্ব। পুস্তকে বেরুনোর সময় সেগুলি পরে ভাবা যাবে।
———————————–
কবিতাটির ক্ষেত্রে সমভাবে তথ্য কৃতঙ্গতা ( নিচে নম্বর দ্বারা গবেষক, সাংবাদিক বা ইতিহাস লেখকদের গুরুত্ব নির্ভর করছে না। একাধিক নাম দিতে হলে কেউ না কেউ আগে পিছে থাকবে)। কবিতাটি লেখার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত সংবাদ মাধ্যমগুলির লেখনি ও বক্তব্যের আদল কবিকে সমৃদ্ধ করেছে, আরো গভীরে চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। ঃ —
(১) উইকিপিডিয়া।
(২) বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর ট্রাজিক জীবন : লেখক — ফাহিম আহম্মেদ মন্ডল। — Bahumatrik.com,
(৩) প্রথম বাঙালী মহিলা কবি : চন্দ্রাবতীর রামায়ন ও জীবন কথা : লেখক- লিপিকা ঘোষ। — অন্য স্বর / Other Voice.
(৪) চন্দ্রাবতী : মিলনসাগর। www.milansagar.com,
(৫) অভাগীনী চন্দ্রাবতী — snigdho’s bangla blog.
(৬) বাংলাদেশের প্রথম এই নারী কবি চন্দ্রাবতী নিজের জীবনকে মিশিয়ে দিয়েছিলেন সৃষ্টির সঙ্গে : পায়েল চ্যাটার্জী। জিয়ো বাংলা। www.jiyobangla.com,
(৭) চন্দ্রাবতী, মধ্যযুগের প্রথম মহিলা কবি। www.jagonews24.com,
(৮) কে এই লোক কবি চন্দ্রাবতী : সুস্মিতা চক্রবর্তী, অধ্যাপক, ফোকলোর বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। www.prothomalo.com,
(৯) চন্দ্রাবতী : সমবারু চন্দ্র মহন্ত, || কোরেশী মাগন ঠাকুর। bn.banglapedia.org
(১০) চন্দ্রাবতী, বাংলার প্রথম মহিলা কবি। www.bongodorshon.com
(১১) উপমহাদেশের প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর স্মৃতি সৌধ : maizkhapanup.kishoreganj.gov.bd,
(১২) চট্টগ্রামের প্রথম প্রধানমন্ত্রী কোরেশী মাগন ঠাকুর : দৈনিক আনন্দবার্তা: dainikanandabarta.com,
(১৩) কয়েকটি ইউটুব।
সম গুরুত্বপূর্ণ আরো অনেক সংবাদ মাধ্যম আছে। সেগুলি দেখলেও সংবাদ পেতাম নানা ধরনের আঙ্গিকে। কিন্তু, এইগুলিতেই কাজ হয়েছে। কিন্তু সবাইকেই সমান কৃতজ্ঞতা জানাই। : কবি
————————————–
পত্রিকায় যে কোনো রচনার বিষয়, মনোভাব, বিশ্লেষণ, মতামত, ইত্যাদির কোনো কিছু নিয়ে বিতর্ক বা প্রশ্ন উঠলে, সেটার জন্য লেখক দায়ী। কারণ যাঁরা যেটা লেখেন সেটা তাঁদের ভাবনার উপরে দাঁড়িয়ে হয়। যে কোনো পত্রিকা বা অন্য যে কোনো মাধ্যমের দায়িত্ব হল সেটার মান বা বিশ্বাসযোগ্যতা কোন দিক থেকে কতটা ঠিক সেটা জনগনের থেকে জেনে নেওয়া। এর মানে হল, চর্চা ও আলোচনার দ্বারা সঠিক সত্যটিকে গ্রহণ করা বা করানো।
— সম্পাদক ঃ kabyapot.com