কবিতা :– তুমি নারী 😔🍓
—————————————
— ঋদেনদিক মিত্রো ( কলকাতা, ভারত )
তুমিই নাকি নারী,
ঝাঁসি-রানী লক্ষী বাঈয়ের
হাতে সেদিন
ঝিলিক তরবারি!
তুমিই নাকি নারী !
ঘোড়ার ওপর বসে তখন..
করছো তুমি কী সম্মোহন
ব্রিটিশদের-ই এক-এক সেনা
তোমার সাথে লড়ছে,
তোমার তরবারির কোপে
এক -এক করে মরছে,
উল্টে পাল্টে পড়ছে !
অনেক্ষন করে লক্ষ্য…
বাধ্য হয়ে শত্রু পক্ষ
অসৎ উপায় গ্রহণ করে,
এই নারীকে
সামলানো যায় কেমন করে,
বর্ষা নিয়ে একজন কেউ
তোমারই ঘাড় লক্ষ্য করে
ছুড়লো জোরে,
সেটা লেগেই ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরে,
তবুও চলে তোমার ক্ষিপ্র যুদ্ধ,
শত্রু ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন আর
সৈনিক সব মুগ্ধ,
একেই বলে —- নারী !
শত্রুসেনার হাতের অস্ত্রে…
পেছন থেকে লাগলো আঘাত ঘাড়ে,
ফিনকি দিয়ে রক্তে ঝরে,
তবুও তাকে কে ঠেকাতে পারে?
সমান ভাবে চলতে থাকে…
হাতের তরবারি,
একেই বলে নারী !
তুমিই আবার আরেক নারী
নাম— জো-য়ান অব আর্ক্,
কিংবা মাদার টেরিজা,
শূন্য হাতে পূর্ণ করো
বিপ্লব আর সেবা !
প্রীতিলতা, মাতঙ্গিনী,
বেগম রোকেয়া,
কোনো উদাহরণে যাঁদের
তুলনা হয় না !
তোমায় বলে নারী,
ওষ্ঠ-ভরা লাজ মাখিয়ে,
জলের কলসি কাঁখে নিয়ে
দাও মাতিয়ে — পরনে এক
খুব সাধারণ শাড়ি !
সত্যি এটাই —
হা হা, নারী মানেই নারী !
তোমায় বলে নারী,
দুঃসাহসী ঝাঁপটা দিয়ে
সপ্ত সিন্ধু পার,
ইংলিশ চ্যানেলটা পারাও দুরন্ত সাঁতার,
বিষাক্ত সব জলোজীবের হিংস্রতা হয় নত,
সমুদ্রের ই জীব গুলো সব
ভয়েই থতমত,
নাকি, তারাও তোমায় জলে দেখে
চুম্বন দেয় ছুঁড়ে,
মানব-নারী সমুদ্র জল
দিচ্ছে কেমন তুড়ে,
সারা সাগর উৎসব হয়
নামলে নারী জলে,
নারী মানে আশ্চর্য
মনটা যেন বলে !
কে বলে গো তুমি নাকি
ভয় পেয়ে যাও সবে,
অবলা নাম তোমায় দিলে
সত্যি কি ঠিক হবে !
বন্ধুকের ই সামনে কেমন নারী মাতঙ্গিনী,
বন্দে মা তরম — বলে
এগিয়ে ছিলেন যিনি,
এক হাতে যেই লাগলো গুলি
পতাকাটা তখন
আর এক হাতে ধরে এবার ..
বন্দে মা তরম,
আবার যখন লাগলো গুলি,
লুটিয়ে পড়েন তিনি,
স্বাধীনতার জন্য ভারত
তাঁর কাছেও ঋণী !
সে দিনের সেই গরিব বুড়ি
নামটা মাতঙ্গিনী !
একটা কথা বলি এবার !
সাহসী-সাহসিনী যারা,
তারা হয় না বুড়ো বুড়ি,
চিন্তনেতে , নিশার আকাশ-তারা,
জ্ঞান চর্চায় গভীর জীবন ধারা,
অন্যায়কে রুখতে চেয়ে
মৃত্যুকে ভয় পায় না যারা,
তারা উনিশ -কুড়ি, .
আর বাকি সব কোটি কোটি
আঠেরো, আটাশ, আটত্রিশ সব
সবাই বুড়ো -বুড়ি,
বিজ্ঞান আর শাস্ত্র বলে
চিন্তা করা ও সাহস ধরা
এই দুটোতে পিছিয়ে পড়া,
এদের বলে সত্যি বুড়ো বুড়ি !
বীরাঙ্গনা মাতঙ্গিনী
তাই তো উনিশ-কুড়ি !
মানুষ যদি বুড়ো-বুড়ি
হয়েই পেলো তৃপ্তি,
করবে তবে কেমন করে
অসম্ভবের কীর্তি !
প্রতিদিনের সূর্যোদয়ের
নতুন হাসি আলো,
তোমায় বলে, — ওহে মানুষ
নতুন করে
আজকে আগুন জ্বালো !
প্রেমের আগুন, প্রাণের আগুন,
দুরন্ত সেই বেশ,
ভোরের আলোয় তোমার চোখে
দিলাম তারই রেশ !
নতুন -নতুন স্বপ্ন এনে
যে-ঢুকে রয় কর্ম-প্রেমে,
তারুন্যে সে খাঁটি,
মাটির সাথে মিশে গিয়েও
হয়না সে তো মাটি !
আকাশ-আলোয় আমার শেখা,
মুক্ত মনে জগৎ দেখা,
তখন তো নই আমি একা,
দিবস ই হোক, রাত্রি ই হোক,
আমি তখন দুরন্ত প্রত্যয়ী,
কেউ বা চিনুক, কেউ না চিনুক,
মনটা বলে শান্তি নিয়ে
আমি জগৎ জয়ী !
মানুষ হয়ে ব্যাপ্ত হওয়া,
সেই জন্যই কষ্ট সওয়া,
তার চে’ সুখের আর কী আছে
গর্ব আমার — বৃহৎ-এরই লক্ষে যদি
হাজার কষ্ট সহি,
কেউ না আমায় হাততালি দিক,
এমনি তখন হচ্ছে মনে
আমি জগৎ জয়ী !
গল্প আরো বলতে পারি :–
এনিবেশান্ত, আরেক নারী
বিদেশিনী হয়ে,
ভারতের ই স্বাধীনতার
জন্য জীবন খুঁইয়ে .
ইতিহাসে নাম রেখেছেন,
কজন সেটা জানি,
যতই পড়ি, স্তব্ধ হয়ে
অশ্রু ঝরে, থামি,
ভগিনী নিবেদিতার কথা
জানি সবাই খুব,
মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল থেকে
নিয়েছিলেন নিবেদিতার রূপ !
কিংবা ধরো আর এক নাম
ফ্লোরেন্স নাইটেংগেল,
যুদ্ধক্ষেত্রে — শত্রু পক্ষ, মিত্র পক্ষ,
তাঁর ই দিকে থাকতো লক্ষ্য,
যখন তিনি ঢুকে যেতেন
পড়ে থাকা হতাহত
সৈনিকদের মাঝে,
একটি নারী কেমন করে
বিশ্ব-প্রেমে জাগে !
যখন তিনি এগিয়ে যেতেন
এভাবে নির্ভয়ে,
উভয় পক্ষ সকল সৈন্য
তাকাতো বিস্ময়ে,
শত্রু -মিত্র সৈন্য সবাই
তাঁকে স্যালুট দিতো যে তাই,
অদ্ভুত এই দৃশ্য ভেবে
ভরবে চোখে জল,
আহত সব সৈনিকরা,
যন্ত্রণাতে কাতর হয়েও
তাঁকে দেখে স্যালুট দিতো,
দেহগুলো চিতিয়ে পড়া,
আনন্দে উচ্ছল !
ফ্লোরেন্সের-ই দুপাশ দিয়ে
ছুটতো গোলাগুলি,
শত্রু -মিত্র পক্ষ সবার
থাকতো খেয়াল–ঐযে আসেন,
বিশ্ব টা যাঁর দেশ,
নাইটেংগেল ফ্লোরেন্স!
ওঁর গায়ে যেন গুলি না লাগে,
ওঁর ক্ষতি হলে আমাদের সব শেষ !
কত ভালোবাসা তোমার ফ্লোরেন্স,
নারীই পেরেছে তা,
সারা পৃথিবীর বন্ধু হয়েছে,
পুরুষ তো পারে না ¡
তোমাদের কথা যদি মনে পড়ে
কান্না বেরিয়ে দুটি চোখ ভরে,
সামলাতে পারি না,
তোমরা যা পারো —
পুরুষ পারে না তা!
ছিলেন হেলেন কেলার,
অন্ধ হয়েও বিশ্বজয়ী,
কে — জানেনা নাম তাঁর !
নারী– ম্যাডাম কুরি ,
প্রথম দুবার নোবেল পাবার
কৃত্তিত্ব যাঁর,
তিনি ম্যাডাম কুরি !
এভারেস্টে উঠতে পারা,
অলিম্পিকে ছুটতে পারা,
সকলি হয় নারীর দ্বারা,
মহাকাশে ভ্যালেন্টিনা টেরেসকোভা,
কল্পনা চাওলা,
আছে কত উদাহরণ,
ঝুঁকি যেথায় জীবন মরন,
সেথায় নারী প্রবেশ করে,
কোনো —বাধাই মানে না !
প্রাচীনকালে লীলা, গার্গেয়ী,
মৈত্রেয়ী সব এরা,
পুরুষ দিগের চেয়ে ছিলেন
জ্ঞানে, গুণে সেরা !
হাজার-হাজার লক্ষ -লক্ষ
নারীর লেখা পুঁথি, .
জলোচ্ছাসে ভেসে গেছে,
কখনো বা পুড়ে গিয়ে
হারিয়ে গেছে স্মৃতি,
তবুও যে-টুক বেঁচে ছিলো, .
সেটাই পরে চমকে দিলো…
নারীজাতির কেমন ছিলো
বড় হবার জেদ,
নারীজাতি মানতো না তো
ধর্ম-জাতের কোনোও ভেদাভেদ !
নারী মানেই অগ্রগতি,
যুগে -যুগেই প্রমান,
কেনো হতে যাবে নারী
পুরুষদিগের সমান?
পুরুষ জাতি, বলছি শুনুন,
অহংকার টা কমান !
নারী মানেই উচ্ছলতা,
নারী মানেই গভীর,
নারী ছাড়া পুরুষ জাতি,
বোবা এবং বধির !
এবার আমি বলতে পারি :–
কেউ বা যদি প্রশ্ন করো —
কাকে বলে নারী?
যার হাতে ঠিক সত্যি মানায়
ঝিলিক তরবারি !
————————————