কবি পরিচিতি :
লেখিকা বর্তমানে কম্পিউটার সায়েন্সে b.tech করছেন। তৃতীয় বর্ষ। ছোটো থেকে লেখালেখি না করলেও বর্তমানে কিছু পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করেন । এক কথায় ঊদিয়মান লেখিকা।
কবিতা – আগমনী
কলমে- সুপ্রীতি মন্ডল
__________________
দুর্গা মায়ের আগমনে
ভূবন মেতেছে,
মাঠে-ঘাটে কাশের দল
আনন্দে নেচেছে।
দশভুজা মা আসছে
মোদের পাড়া-গায়,
চার-সন্তান সঙ্গে আছে
শিবের পাহারায়।
মেঘের ভেলা বয়ছে দেখি
এখানে ওখানে,
মনের সুখে ঘুরছে তারা
শরতের টানে।
পাখির দল সুর ধরেছে
গাছের প্রতি ডালে,
সারা বাংলা মেতেছে আজ
গানের তালে তালে।
ইঞ্জিনিয়ার-কবি সুপ্রীতি মন্ডল এর ” আগমনী ” কবিতার সমালোচনা ও সহযোগী কিছু কথা সব কবি বন্ধুর জন্য কাজে লাগবে
—————————————-
— ঋদেনদিক মিত্রো
ইঞ্জিনিয়ার কবি সুপ্রীতি মন্ডল এর ছন্দের প্রবণতা ভালো, তবে প্রথম অভ্যেসের লেখা বলে টুকটাক কিছু ত্রুটি দেখা যাচ্ছে ! এগুলি উনি সময়ে – সময়ে নিজের মত বুঝে নিয়ে গ্রন্থ প্রকাশের সময় নিজেই এডিট করে নিয়ে প্রকাশ করবেন, আশা করি !
আমার চোখে যেটুকু ত্রুটি দেখলাম ওনার ” আগমনী ” কবিতাতে সেটা পাঠক হিসেবে আমি তুলে ধরছি যাতে উনি পরের ধাপে আরো প্রখর হয়ে লিখতে পারেন আরো সতর্ক নিয়মে !
(1) ” ভুবন মেতেছে ” এর তাল ছন্দের ভারসাম্যে ” আনন্দে নেচেছে ” হবেনা, ওটা হবে ” ছন্দে নেচেছে “!
(2) ” মোদের পাড়া গাঁয় ” না করে ” আমাদের গাঁয় ” করলে ভাষাটা আধুনিক হয় এবং তাল মাত্রাও একই থাকছে আগের মত !
(3) ” শরতের টানে ” এক মাত্রা কমে গেলো উচ্চারণের বাতাসে, ” শরতেরই টানে ” লিখলে এবার ভারসাম্যে এলো !
যেকোনো লেখা বারবার রেখে দেখতে হয় ও অনুভব করে যখন মনে হবে ঠিক আছে তখন প্রকাশ করার জন্য পত্রিকায় দিতে হয় !
যদিও, তারপরেও কোথাও কোথাও খুব সূক্ষ্ম কোনো ত্রুটি থাকতে পারে যেটা নিজের গ্রন্থ বেরুনোর সময় আবার এডিট করতে হয়, যদি প্রয়োজন লাগে !
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছে যে লেখা পচাতে হয়, তবেই পারফেক্ট হয় !
আবার শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যখন একটি পত্রিকাতে ” শ্রীকান্তের ভ্রমণ কাহিনী ” বলে একটি গল্প বের করেন সেটা গ্রন্থ হবার সময় নাম দিলেন শুধু ” শ্রীকান্ত “, নামের আকর্ষণ কে আরো পারফেক্ট করার জন্য, এবং লেখার অনেক অদলবদল করেন !
জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পাওয়া তারাশঙ্করের ” গণদেবতা ” বহুবার এডিট করে উনি গ্রন্থ আকারে বের করেন, তবেই এতো নির্মেদ ও নিটোল হয়েছিল !
লেখন হতে গেলে পৃথিবীর লেখকদের জীবনী পড়লে জীবন-বোধের দ্রুত উত্তরণ ঘটে ! এই সত্য সব কবি লেখকদের ক্ষেত্রে সত্য ! একইসাথে অন্য পেশার মানুষদের জীবনীও পড়া উচিত !
কবি সুপ্রীতি ইঞ্জিনীয়ারিং পড়ছেন, এটা খুব ভালো লেখার ক্ষেত্রে !
কারণ, কবিতা বা সাহিত্য মহাবিশ্বের নানা জ্ঞানের মিলিত প্রকরণে নির্মিত হয়, আবেগের পাগলামি থেকে নয় ! যাঁরা বলেন যে আবেগের পাগলামি মানে কবিতা সাহিত্য, তাঁরা সাহিত্যের সঠিক দিশা পাননি !
তাই কোনো বিষয়ের একাডেমিক ডিগ্রী যেমন সাহিত্যের বিরুদ্ধাচারণ করেনা, তেমনি কেউ একাডেমিক ডিগ্রী না নিয়ে নিজের নিয়মে পড়াশুনা করে সেই স্তরে ঢুকলে তিনিও সঠিক মাপকাঠিতে সাহিত্য করতে পারবেন ! আসল জিনিস হলো দুরূহ জ্ঞান ও অনুভূতির বিবিধ স্তরকে আয়ত্ব করা ! সেটা যে যেমন ভাবেই পারুক, করলে সফলতা আসে !
বিখ্যাত ” হাট ” কবিতার কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার এবং ভারতীয় প্লানিং কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বা এই জাতীয় কোনো পদে ! সাইকেল করে তখনকার দিনে কাজের প্রয়োজনে গ্রামে -গ্রামে যেতেন, বাজার হাট দিয়ে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যেতেন !
এইভাবেই কোনো এক সময় হাট নিয়ে ভাবনা আসে ও তিনি ” হাট “কবিতা সৃষ্টি করেন ! যা একটি কালজয়ী সৃষ্টি ! আসলে প্রতি মুহূর্তে সেন্স রাখতে হবে নানা দিকে, কখন কী ভাবে যে কী চলে আসে লেখায়, সেটা বলা যায় না !
অন্য দিকে, প্রতিদিন কিছু না কিছু লিখতে হয় প্র্যাক্টিস করার জন্য, চিন্তার প্র্যাক্টিস ও হাতের প্র্যাক্টিস ! কারণ, কবে কখন কোন ভাব আসবে সেই দিকে অপেক্ষা করে কিছু হয় না, কারণ সাহিত্যতা দস্তুর মত একটা কাজ, আবেগের নেশা নয় ! এটা একটা কর্ম বা পেশা ! যাঁরা সাহিত্যকে “নেশা ” বলেন তাঁরা শব্দ প্রয়োগের প্রাথমিক জ্ঞানে অসতর্ক, এটা সাহিত্যের সম্মানের ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্য !
বিদেশে বলে ” writing is not a hobby “, মানে সাহিত্যটা কখনোই নেশা নয়, এটাকে পেশা করার জন্যই শুরু করা হয়, সেটা একক পেশা হিসেবে হোক বা যুগ্ম পেশা ( পাশাপাশি অন্য কোনো কাজ করা, যার যেমন শিক্ষা বা সুবিধে অনুযায়ী ) হিসেবে হোক !
তাই বিদেশিরা এতো গতিশীল ও কোনো কাজ শুরু করলে সফলতা বের করে আনে !
কবি সুপ্রীতি পরপর যুগ্ম পেশা হিসেবে সাহিত্য নিতে পারেন, আবার অনেকের মত ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে নিজের ওই সময় কালীন সামর্থ ও দক্ষতার পরিস্থিতি বুঝে শুধু সাহিত্যে মননিবেশ করতে পারেন বা সাংবাদিকতায় ঢুকতে পারেন !
সেটা সেই সময়কালীন ব্যাপার বা সিদ্ধান্ত হবে ! কিন্তু, কিছু না হলেও আপাতত যুগ্ম পেশা হিসেবে যেন সাহিত্য নিতে পারেন, তাতে সাহিত্যের মান দ্রুত উন্নত হবে, এবং ভালো লেখার দায়িত্ব বেড়ে যাবে, কবি সফলতা পাবেন দ্রুত ! কারণ, কোনো কাজ পেশা হিসেবে নিতে চাইলে সেটা করতে দায়িত্ব বেড়ে যায় ! বঙ্কিমচন্দ্রের যুগ্ম পেশা ছিল সাহিত্য, কারণ তিনি একই সাথে ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন ! তখনকার পরিস্থিতিতে তাঁর ম্যাজিস্ট্রেট চাকরি ছেড়ে শুধু সাহিত্য করা সম্ভব ছিলোনা এই দেশে, তাহলে তাঁকে কোনো রাজা বা জমিদারের অধীনে সভা কবি হতে হতো, যেটা তাঁর ওই অবস্থান থেকে ওই মূহুর্তে সম্ভব ছিল না !
অন্যদিকে, এইদেশে তখন শিক্ষিত প্রায় ছিলোনা, তাই পুস্তকের বিক্রি ও প্রচার লেখকের আয়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ছিলনা, মিডিয়া ব্যাপারটা আজকের মত ছিলোনা ! সেই সাথে আরো কিছু সহযোগী কারণ ছিল !
সাহিত্যটা একটা পেশা, এটা এই দুর্ভাগা দেশে ঠিক মত জানেনা ! শিক্ষকগনও ছাত্র ছাত্রীদের এই স্বপ্ন দেখাতে পারেন না, কারণ তাঁরাও সাহিত্যের জগৎ নিয়ে সাবলীল জ্ঞানে জ্ঞানী ও ভাবিত নন, এটা এই দেশে খুব দুঃখের খবর ! এর নাম ঐতিহ্যময় জ্ঞানের ভারতবর্ষ, ভাবতে কষ্ট হয় !
তাই, কবি সুপ্রীতিকে অনুরোধ করি, দুর্বল চিন্তা সম্পন্ন কারোর নির্দেশ নিয়ে তিনি চলতে গিয়ে যেন হতাশ না হন, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন, নিজের ইচ্ছে ও নিজের চিন্তা নিয়ে যেন আঞ্চলিকতা ভেদ করে আন্তর্জাতিক স্তরে দৃষ্টি দেন! নিজের মত ভাবনা ও গভীর অভ্যেসেই তো দুরন্ত সফলতা আসে !
অন্য দিকে বিচিত্র রসের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন কবি-লেখকের লেখা পড়তে -পড়তে নিজের অবচেতনে গোপনে অনেক পরিবর্তন আসে ও নিজের মত স্বাধীন স্টাইল তৈরী হয় ও লেখার মান উন্নত হয় !
আর, এবার জানাই কাব্যপট পত্রিকার সম্পাদক বিশিষ্ট কবি শ্যামল মন্ডলকে, উনি এই wabesite পত্রিকা দিয়ে ও মুদ্রণ মাধ্যম দিয়ে কবিতা ও সাহিত্যের জগৎ নিয়ে যেভাবে আন্তর্জাতিক স্তরে কাজ করছেন বিভিন্ন প্রতিকূলতা অতিক্রম করে, সেই সুফল গুলো আমরা কবি-লেখকরাই ভোগ করছি ! সাহিত্য জগতে এই জাতীয় সব নিরলস নিরপেক্ষ ভাবনার মহান কর্মীদের আমি শ্রদ্ধা জানাই !
শুভেচ্ছা সহ
Ridendick Mitro
পেশা : ইংরেজি ও বাংলা
ভাষার (মৌলিক, অনুবাদ
নয় ) কবি -ঔপন্যাসিক –
গীতিকার -নিবন্ধকার ! একটি বিশ্বজাতীয় সংগীত ” ” World anthem – we are the citizen of the earth “, ” corona anthem 2020 official bengali song ” ( আগ্রাসনের নেশার সাথে হিংসা সীমাছাড়া ) প্রভৃতি বিশেষ ধরণের সংগীতের গীতিকার !
কলকাতা, ভারত