ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যে কয়জন সামনের সারিতে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন তাদের মধ্যে বাংলাদেশের বরিশালের কৃতি সন্তান “” মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত “” ছিলেন অন্যতম নেতা।।
তাঁর পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার বাটাজোড় ইউনিয়নের হরহর গ্রামে।।
তাঁর পিতার নাম ব্রজমোহন দত্ত মায়ের নাম শ্রীমতী প্রসন্নময়ী দেবী, পিতা ছিলেন আদালতের মুন্সেফ পরবর্তীতে জজ এবং ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।।
মা ছিলেন গৃহিনী।।
মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত জন্ম গ্রহণ করেন বাংলা ১২৬২ সালের ১৩ ই মাঘ ও ইংরেজি ১৮৫৬ সনের ২৫ শে জানুয়ারি রোজ শুক্রবার মামা বাড়ি পটুয়াখালী জেলার লাউকাঠী গ্রামে।।
ব্রজমোহন দত্ত ও প্রসন্নময়ীর তিন ছেলে যথাক্রমে (১) মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত (২) কামিনী কুমার দত্ত (৩) যামিনী কুমার দত্ত।।
তিন ভাইয়ের মধ্যে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত ছিলেন সবার বড়ো।।
শিক্ষা জীবন ঃ- শৈশবের পাঁচ বছর কাটে পটুয়াখালীতে এরপর পিত্রালয় বাটাজোড়ে এসে দুই বছর গ্রাম্য পাঠশালায় গুরুমহাশয়ের কাছে শিক্ষা লাভ করেন। পরবর্তীতে পিতার সাথে ঢাকা রংপুর সহ বিভিন্ন স্হানের শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষা লাভ করে মাত্র ১৪ বছর ৭ মাস বয়সে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।।
এরপর তিনি কলিকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে এফ,এ, ক্লাসে ভর্তি হন এরপর এলাহাবাদ হাইকোর্ট কমিটির কাছে আইন পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।। ১৮৭৮ খ্রীস্টাব্দে মাত্র ২৩ বছর বয়সে কৃষ্ণনগর কলেজে বি,এ, পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন ঐ কলেজেই বি,এল,ও এম,এ,পড়তে শুরু করেন।।
১৮৭৯ সনে এম,এ, পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন এরপর বি,এল,পরীক্ষায় যথারীতি কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।।
সংসার জীবন ঃ- বাংলা ১২৮৩ সনের ১২ ই বৈশাখ বরিশাল শহরের নথুল্লাবাজ নিবাসী চন্দ্র কুমার রায়ের কন্যা সরলাবালার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন,
অশ্বিনী কুমার দত্ত ছিলেন নিঃসন্তান।।
কর্ম জীবন ঃ- অশ্বিনী কুমার দত্ত কে উদ্দেশ্য করে ঋষি রাজনারায়ণ বসু উপদেশ মুলক ভাবে বলেছিলেন যদি নাম করতে চাও তা হলে কলকাতায় থাকো আর যদি কাজ করতে চাও তাহলে বরিশালে চলে যাও এরপর ১৮৮০ সনে অশ্বিনী কুমার দত্ত বরিশালে এসে আইন ব্যবসা শুরু করেন। একসময় বরিশালে আইন জিবির সংখ্যা ছিল অশ্বিনী কুমার দত্ত সহ মোট ৪৩ জন।।
রাজনৈতিক জীবন ঃ- যুবক অশ্বিনী কুমার দত্ত ওকালতি করতে এসে নানা বিধ অসামাজিক দূর্নীতি গোড়ামী ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে বক্তৃতা ও সংগীতের পাশাপাশি জনসাধারণের প্রতিনিধি সভা গঠন করেন, এ সভার নাম ছিল People Association এ সভার পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হতো।।
people’s Association এর পরে বাখেরগন্জে “” হিতৈষী সভা “” গঠন করা হয়।। ১৯০৫ সনে ৬ ই আগষ্ট স্বদেশ বান্ধব সমিতি গঠিত হয়।। এ প্রসঙ্গে সত্য ব্রত ঘোষ লিখেছেন ঃ- Aswani Kumar Dutt, the eminent educationist, social worker and leader of Barisal , was the founder President of the swadesh Bandhab Samiti which organised on 6 Aguust 1905 ..
১৮৮৭ সনে অশ্বিনী কুমার দত্ত এর উদ্যোগে বরিশালে প্রথম বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করেন।
স্বদেশ বান্ধব সমিতির পরিবর্তে গঠিত হয় ডিস্ট্রিক্ট এ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতির পদ লাভ করেন।।
১৮৮৫ সনে কংগ্রেসের জন্ম হয় ১৮৮৬ সনে বরিশাল জনসাধারণ সভায় কংগ্রেসের সন্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করেন।।
১৮৮৭ সনে বরিশাল মিউনিসিপালিটির নির্বাচন হয়। ১৮৯৭ সনে চতুর্থবারে তিনি বরিশাল মিউনিসিপালিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ভাইস চেয়ারম্যান থাকেন তারিনী কুমার গুপ্ত।।
১৮৯২ সনে কৃষকদের ওপর পথকর খাজনা দিগুণ করলে অশ্বিনী কুমার দত্ত এর নেতৃত্বে খাজনা দিগুণ করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা অান্দোলন করলে তাঁর সাথে যোগ দেন উগ্র কন্ঠ রায়, হরনাথ সেন, প্যারিলাল রায়, দীনবন্ধু সেন, মিঃ ব্রাউন ও মিঃ ডি সিলভা প্রমুখ সহ পথকর খাজনা দিগুণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করলে দুই পয়সার স্হলে দের পয়সা করা হয় আধা পয়সা মওকুফ করেন।।
১৮৯৭ সনে বেরারের অমরাবতীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে বলেন, সারা বছর আন্দোলন করে মহাসমিতির বানী পল্লী বাসীর মুদ্রিত করে না দিতে পারলে দেশের প্রকৃত মঙ্গল সাধিত হইবে না।
অশ্বিনী কুমার দত্ত জনমুখী রাজনীতিতে ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন।।
১৯০৫ সনে বাংলাকে যখন ব্রিটিশ সরকার ভাগ করার ঘোষণা করেন তখনই তিনি এর তীব্র প্রতিবাদ করেন।।
১৯০৫ সনের ১৯ শে জুলাই তাঁরই নির্দেশে “” বরিশাল হিতৈষী পত্রিকায় জানান চীনের মতো বিলাতী দ্রব্য বর্জন অস্র হিসাবে ব্যবহার করার জন্য।।
এ প্রসঙ্গে হিরালাল দাস গুপ্ত স্বাধীনতা সংগ্রামে বরিশাল গ্রন্থে বলেন ঃ- ১৯০৫ সনের ৭ ই আগষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামের এক পূণ্য দিন।।
১৯০৬ – ০৭ সনে মুসলমান কৃষক সম্প্রদায় অশ্বিনী কুমার দত্ত এর পরিচালনায় জাতীয় আন্দোলনে যে গৌরবময় ভুমিকা গ্রহণ করেছিল তাতে হিন্দু – মুসলমান নির্বিশেষে জনসাধারণের ওপর যে প্রভাব বিস্তার করেছিল তা অনেকটাই একক ও তুলনাহীন।।
শিক্ষা বিস্তারে অবদান ঃ-১৮৮৬ সনের মার্চ মাসে বরিশালে তার পিতার নামে ব্রজমোহন ইনিষ্টিটিউশন স্হাপন করেন মাত্র ৮৪ জন ছাত্র নিয়ে স্কুলটির পথ চলা শুরু হয়।
১৮৮৯ সনে ৪ঠা জানুয়ারি তার পিতার নামে বরিশালে ব্রজমোহন দত্ত কলেজ করার জন্য অশ্বিনী কুমার দত্ত দরখাস্ত করেন। বরিশালে তার পিতার নামে ব্রজমোহন দত্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।।
এ বিষয়ে ডাক্তার মহেন্দ্র লাল সরকার অশ্বিনী কুমার দত্ত এর প্রখর ব্যক্তিত্ব দেখে বলেছিলেন “” What Keshab sen was of Calcutta, Aswani Babu is at Barisal “”.
বরিশালের তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট বিটসন বেল বলেন ঃ Barisal may be said to be the Oxford of Est Bengal, If Oxford could maintain fourteen Colleges, I do not see any reason why Barisal should not be able to. maintain two..
সাহিত্যে অবদান ঃ- তিনি ব্যক্তি জীবনে ছিলেন একজন সাহিত্য প্রেমিক মানুষ তিনি তার জীবদ্দশায় অনেক কবিতা, গান রচনা করেন।
বাল্যকালে যখন তিনি কৃষ্ণ নগর কলেজে অধ্যায়ন করতেন তখন বিখ্যাত লেপ্টন্যান্ট গভর্নর আসলি ইডেন উক্ত কলেজ পরিদর্শনে আসিলে অশ্বিনী কুমার ইংরেজি ভাষায় একটি চিত্তাকর্ষণ সনেট কবিতা লিখিয়া তাকে উপহার দেন।
তার রচিত অনেক গ্রন্থ এক সময়ে ব্যপক পরিচিতি ও স্বীকৃতি লাভ করলেও কালক্রমে তা বিলুপ্তির পথে হারিয়ে যায়।।
মহাপ্রয়াণ ঃ- ১৯২৩ সনের অক্টোবর মাসের শেষ দিকে তার শারীরিক অবস্থা বার্ধক্য জনিত কারণে খারাপ হতে থাকলে কলকাতার ভবানিপুরে ৫৯ রোড ( নর্থ ) এর বাড়িতে ডাঃ নীল রতন সরকারের অধীনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সময় কাটতে লাগলো তখন তাকে দেখতে বাংলার অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সহ পন্ডিত মতিলাল নেহেরু, মিঃ প্যাটেল, হাকিম আজমল খাঁ, প্রমুখ সর্ব ভারতীয় নেতৃবৃন্দ তাঁকে দেখতে আসেন।
এরপর ১৯২৩ সনের ৭ ই নভেম্বর বিকেল তিনটায় দেহত্যাগ করেন।। তার মৃত্যূ সময়ে পাশে ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন মহাশয়, এরপর তাকে কলকাতার কেওরাতলা শশ্মান ঘাটে দাহ করা হয়।।
তার মৃত্যুর পরে বরিশালে তার নামে অশ্বিনী কুমার দত্ত টাউন হল, বাটাজোড়ে তার নামে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত ইনিস্টিউটিশন বিদ্যালয় করা হয় বরিশালে তার বাড়িটি এখন বরিশাল সরকারি কলেজ নাম করন করা হয়।।
।
তাঁর আদর্শ ছিল সত্য – প্রেম – পবিত্রতা।
তার রাজনৈতিক সহচর ছিলেন শেরে ই বাংলা একে ফজলুল হক, দেশ বন্ধু চিত্ত রঞ্জন, মহাত্মা গান্ধী, স্বামী বিবেকানন্দ,প্রমুখ।।
( বিঃদ্রঃ ঃ- বিভিন্ন বই থেকে উল্লেখিত করা হয়েছে ও সংগৃহীত মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত সম্পর্কে যা লেখা হয়েছে তা খুবই সংক্ষিপ্ত আকারে লিখেছি ভুল ত্রুটি মার্জনীয় ) ।।।
( মহাত্মা অশ্বিনী কুমার ) লেখকের অনুমতি সাপেক্ষে প্রকাশ করা হল।