Spread the love

অপসংস্কৃতি (ছোট গল্প)

***********************
কবি তীর্থ মণ্ডল

চন্ডীমন্ডপে হাবল খুড়ো খুব চিৎকার চেঁচামেচি করছে দেখে পাড়ার সবাই ঐ দিকেই দৌড়াচ্ছে। কিন্তু সবার একটাই প্রশ্ন খুড়ো কেন চেঁচাচ্ছেন? হাবল খুড়ো সহজে রাগেনা,একবার রেগে গেলে থামানো খুব মুশকিল। মালতী কাকিমা খুড়োর অর্ধাঙ্গিনী। খুড়োকে প্রশ্ন করল,” তুমি কেন চেঁচাচ্ছ?”খুড়ো উত্তর দিল, “গ্রামে সব পাষন্ডর দল,বোধ বুদ্ধি নেই ধর্ম জ্ঞান নেই, কাল রাতে মন্দিরের ভেতর মদ গিলছিল। ”
ঐ আশুতোষ,ভৈরব,আর নন্দের তিন ছোঁড়ারা মিলে গত রাতে এই মন্দিরের ভেতর মদ গিলছিল,আমি রাত্রে খাবার পর পাইচারি করতে বেরিয়ে দেখলাম। রাত্রে কিছু বলিনি,সকালের অপেক্ষায় ছিলাম।”
হাবল খুড়োর সাথে বঙ্কিম জ্যাঠামশাই ও বলতে শুরু করল,”আজকাল ধর্মের নামে শুধুই প্রহসন হচ্ছে, প্রহর কীর্তন শেষের দিন, ও কোন পুজো পার্বনের রাতে ডিজে বাজিয়ে অর্কেষ্ট্রার নামে মাতাল ড্যান্স,মেয়েদের অর্ধ নগ্ন শরীর দেখিয়ে নাচ-গান,এগুলো শুধুই অপসংস্কৃতি ছাড়া কিছু নয়।” হাবল খুড়ো খুব জোরে জোরে বললো,” বুঝলি বঙ্কিম সমাজে শুধুই অধর্ম চলছে। ঘোর কলিযুগ।”
এবার এনাদের সাথে দিননাথ খুড়োও যোগ দিলো,” বুঝলে হাবল দা এখনকার ছেলে পিলে গুলোকে বলে কোন লাভ নেই , দেখনে অনেক শিক্ষিত,শিক্ষিতা কলেজের পড়া শেষ করে দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সুশিক্ষিত হয় নি, শুধুই পুঁথিগত শিক্ষা। ভেতরে জ্ঞান গম্য এতটুকু নেই। নামেই মানুষ কাজে নয়।” বঙ্কিম জ্যাঠামশাই একটু দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে বললো, ” ঠিকই বলেছো দাদা ,এই তো কয়েক দিন আগে শ্মশানে ঐ পাড়ার হরিহরের বৌকে দাহ করতে গিয়ে যা দেখলাম তাতে নিজেকেই ঘৃণা লাগছিল। আমাদের হাঁটুর বয়সী ছেলে গুলো আমাদেরই সামনেই মদ,সিগারেট খাচ্ছে। এই তো এখনকার কালচার। অথচ তাদের কেউ কেউ কলেজের গণ্ডি পার করেছে। বুঝলি বঙ্কিম আমাদের সময় সরস্বতীর পুজোয় সরস্বতী বন্দনা,রবীন্দ্রসংগীত চর্চা হত, মনসা পুজোয় মনসা মঙ্গল গান হত, আর এখন ওসবের বালাই নেই ,ডিজে বাজিয়ে অর্ধনগ্ন নাচ গান হচ্ছে, যা আমাদের বড়োদের কাছে লজ্জা। আর এখনকার ছেলে পিলে গুলো পুজো পার্বনে মদ গিলে নৃত্য করছে। যতসব অপসংস্কৃতি ছাড়া আর কিছু নয়।
কীর্তন গানের আসরে লোকজন হয় না,আবার সন্ধ্যায় গৌরমন্ডলি আসরে লোকের জায়গা হয় না। গোউরমন্ডলীর দলগুলোও হয়েছে তেমনি, নিত‍্যানন্দ,গৌরাঙ্গ ভাব ধারা ছেড়ে কলির ভাবে আসক্ত।” দিননাথ খুড়ো দুঃখের সাথে উত্তর দিল, “সবই কলির প্রভাব বুঝলি। আগের মত মানুষের সাথে মানুষের মেল ভাব নেই। একসাথে বৈঠক খানায় সুখ দুঃখের আলোচনা হয় না, সবাই এখন উচ্চশিক্ষিত,তাই ঐ মোবাইল ফোনেই ডুবে থাকে। কেউ কারো সাথে নিজের মতো করে মেশে না কারো বিপদে ঝাঁপিয়ে পরে না । ধর্মকর্মে কারো মন নেই ,শুধুই চারদিকে অপসংস্কৃতিতে ভরে গেছে।হায় ভগবান!”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *