অতিমারী করোনার প্রভাবে আমরা হারালাম প্রিয় প্রবাদ প্রতিম সাহিত্যিক শঙ্খ ঘোষ কে,
বটু কৃষ্ণ হালদার
সাল ২০২০, জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি নাগাদ মিডিয়ার দৌলতে সমগ্র বিশ্বে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে যে এক ভয়ঙ্কর অতি মারি বিশ্বের সাজানো বাগান কে তছনছ করে দিতে আসছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম গুলো নড়েচড়ে বসে। শোনা যায় যার মালিক হচ্ছে চীন। যাই হোক, চীনে দেশ থেকে সর্ব প্রথম খবর পাচার কারি অনেক ডাক্তার,সাংবাদিক হটাৎ হারিয়ে যায়।তাদের মধ্যে একজন সাংবাদিকের নাম লি। এর পর পর এই মিডিয়ার দৌলতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মৃত্যু মিছিলের ছবি ভেসে আসতে থাকে। আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বিশ্ব বাসি। ভারতের কিছু কাণ্ডজ্ঞানহীন বহিরাগতদের কারণে ভারত বর্ষ প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ে।ফেব্রুয়ারি মার্চ মাস নাগাদ বিশ্বের অন্যান্য তাবড় তাবড় দেশগুলো যখন মৃত্যুর মিছিলে হাঁটছে, ভারতবর্ষের কাছে এই রোগ ছিল তখনও অজানা। সংবাদমাধ্যম গুলোর পাশে এই প্রতিমার ই-কর্নার খবরের কথা শুনেও ভারতবর্ষের বিদ্বান ব্যক্তি রা তোয়াক্কা করেনি।২০২০ মার্চ মাস নাগাদ ভারতবর্ষে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। সরকার বাধ্য হয়ে অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারতবর্ষের লকডাউন ঘোষণা করেন। লকডাউন ঘোষণা করার পর থেকেই শুরু হয় নানান বিপত্তি। অনেকে নিয়ম মেনে যে অনেকে মানেনি। তবে সরকারের তৎপরতায় অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতবর্ষের অবস্থা কিছুটা হলেও ভালো ছিল। এই লকডাউন এর সময় সমাজের নানান চিত্র আমাদের সামনে উঠে এসেছিল। কখনোবা মৃত্যুর মিছিল, লাশের পাহাড়, কখনোবা হাসপাতালের পরিবারবর্গের সামনে প্রিয়জনের মৃত্যু আমাদের হৃদয়কে নাড়া দিয়ে গেছে। কান পাতলেই শোনা যেত প্রিয়জন হারানোর কান্না।করোনা মানবসমাজকে অনেক কিছু শিক্ষা দিয়ে গেছে।চেনা পরিবেশ অচেনা হয়ে উঠেছিল, বিপদের সময় বন্ধু কে চিনতে শিখিয়েছিল। দেশের একাংশ মানুষ ভালো ভাবে জীবন যাপন করেছে, অন্যদিকে একাংশ জনগণ দু’মুঠো অন্নের জন্য হাপিত্যেশ হয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। বহু মানুষ হয়েছে কর্মহারা। পরিযায়ী শ্রমিক দের অবস্থা খুবই করুণ হয়ে উঠেছিল। এই পর্যায়ে শ্রমিকরা লকডাউন এর সময় হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরেছিলেন। রাস্তায় প্রিয়জনের কোলে মাথা রেখে অনেকেই মারা গিয়েছিলেন। এমন করুণ মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিল জনগণ। লাশের মিছিল দেখে মনে হয়েছিল পৃথিবীর বুক মৃত্যু উপত্যকায় ভরে গেছে। করোনার সাথে বুক চিতিয়ে লড়াই করা বহু ডাক্তার,নার্স,স্বাস্থ্যকর্মী,পুলিশকর্মী, সাফাই কর্মী এ পৃথিবীর বুক থেকে নিজেদের দায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে করতে নিঃশব্দে ছেড়ে চলে গেছেন।এই পরিস্থিতি থেকে মোকাবিলা করার জন্য বিশ্বের বৈজ্ঞানিকরা দিনরাত এক করে ভ্যাকসিন তৈরীর কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে করোনার সঙ্গে লড়াই করে সমাজ অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরতে শুরু করেছিল।দীর্ঘ এক বছর লড়াই করার পর ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই অনেকেই তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। এই করোনা তে মারা গেছেন বহু ব্যক্তিত্ববান ও গুণ সম্পন্ন ব্যক্তিরা। তবুও আমরা বিচলিত হই নি। কঠিন বাস্তবটা মেনে নিয়ে ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে চলে ছিলাম। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে মহাসমুদ্র তে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে একই মর্মান্তিক দৃশ্য।ইতিমধ্যেই বহু মানুষ মারাা গেছেন। দ্বিতীয় ঢেউয়ে ছন্দ পতন ঘটল সাহিত্যয জগতে। আমরা হারালাম বাংলাা সাহিত্য জগতের অভিভাবক ও জনপ্রিয় সাহিত্যিক শঙ্খ ঘোষ কে । আবারো বাংলা হারালেন সাহিত্য সংস্কৃতি জগতের উজ্জ্বল ধ্রুবতারাা কে।বাংলা সাহিত্য মুকুটহীন হয়ে পড়ল।
রবীন্দ্রনাথ-জীবনানন্দ পরবর্তী সময়ে বাংলা আধুনিক কবিতার পঞ্চপাণ্ডব ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, বিনয় মজুমদার, উৎপল কুমার বসু এবং শঙ্খ ঘোষ। প্রথম চারজনকেই আমরা আগেই হারিয়েছি। এবারেও সেই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটলো না বিন্দুমাত্র। কালজয়ী কলম থামিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।উনিশ শতকের শুরু থেকেই বাংলা সাহিত্য মানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,নজরুল ইসলাম,জীবনানন্দ দাশ, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর মত বাংলা সাহিত্যের স্রষ্টা কে উত্থান। ধীরে ধীরে সমাজ যতই এগিয়ে চলেছিল লাগাম কিন্তু এই সমস্ত সাহিত্যিকদের সৃষ্টি দিয়ে প্রতিটা স্তর সাজানো ছিল। বাংলা সাহিত্যের এই বাঁধভাঙ্গা সব ভেঙে বেরিয়ে আশাটাই ছিল খুবই দুরূহ ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথ নজরুলের মতো সাহিত্যিকদের মতাদর্শকে প্রাধান্য দিয়ে একদল আধুনিক কবি সমাজের ধারা নিয়ম-কানুনকে কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাহিত্যিক শঙ্খ ঘোষ। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে তার কলম অন্যরকম স্বাক্ষর রেখে গেছেন।তিনি নিজেই একটা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, দলের অন্যায় কে কখনোই প্রশ্রয় দেননি। বরাবরই রাজনৈতিক দলের অন্যায়র বিরুদ্ধে তিনি কলম চালিয়ে গেছেন নির্ভয়ে।দীর্ঘ কর্মজীবনে শঙ্খ ঘোষ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বভারতীর মতো প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করেছেন। তাঁর লেখার মাধ্যমেই তিনি বারবার সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক দলগুলোকে। পরিবর্তনের সময়েও অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন তিনি। কিন্তু বারবার চোখে আঙুল দিয়ে ভুলও দেখিয়েছেন। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রয়োজনমত বার্তাও দিয়েছেন। বছর দুয়েক আগে ‘মাটি’ নামের একটি কবিতায় কেন্দ্রীয় সরকারের নাগরিকতা সংশোধন আইনের বিরুদ্ধেও গর্জে উঠেছিল তাঁর কলম। নির্ভীক ভাবে চোখে চোখ রেখে মেরুদন্ড সোজা করে রাজনৈতিক দলগুলোর অন্যায় তুলে ধরেছেন।
অবিভক্ত বাংলার চাঁদপুরে ১৯৩২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জন্ম হয় কবির।কবির আসল নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ।পিতা সুশিক্ষক বাংলা ভাষার সম্মানিত বিশেষজ্ঞ মনীন্দ্র কুমার ঘোষ ও মাতা অমলা বালা দেবী।বংশানুক্রমিক ভাবে পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশের বরিশাল জেলার বানারি পাড়া গ্রামে। তিনি বড় হয়েছেন পাবনায়। পিতার কর্মস্থল হয় তিনি বেশ কয়েক বছর পাবনায় অবস্থান করেন এবং সেখানকার চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৫১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় কলা বিভাগে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তিনি ছিলেন গুয়াহাটিতে তার লেখায় বেশির ভাগ সময় এসেছে দেশভাগের যন্ত্রণা। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন অধ্যাপনাকে। শিয়ালদহের বঙ্গবাসী কলেজ, সিটি কলেজ এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের প্রিয় ছিলেন শঙ্খবাবু। ১৯৬০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রাইটার্স ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেন। তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, শিমলাতে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ আডভান্স স্টাডিজ এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেন।দেশভাগের সময় গর্জে উঠেছিল কবির কলম। তারপর বাংলা যখন ধীরে ধীরে শান্ত হচ্ছে তখনও থেমে থাকেনি তা। একটার পর একটা কালজয়ী কবিতা উপহার দিয়েছেন পাঠকদের। মধ্যবিত্ত বাঙালির মনন তাঁর মতো করে আর কেউ ফুটিয়ে তুলতে পারেননি। সাধারণের নিজেকে নিয়ে দ্বন্দ্ব, আলো-অন্ধকারে ঘেরা জীবন, প্রবঞ্চনা-ভালোবাসার চেনা ছকই অচেনা হয়ে ধরা দিত তাঁর সৃষ্টিতে। এই মুহূর্তে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ জন অভিভাবক হারিয়ে শোকে বিহ্বল। আজ সমাজের শোকের দিন। বাংলা কবিতা ও সাহিত্যের যুগ অবসান হয়ে গেল। তিনি এক ধারে ছিলেন গদ্যকার ও প্রাবন্ধিক। কিন্তু বাংলা সাহিত্যে তার অবাধ বিচরণ হলো কবিতা।
তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ হল “দিনগুলি রাতগুলি” প্রকাশিত হয়১৯৫৬ সালে। এরপর একে একে এখন সময় নয় নিহিত পাতালছায়া শঙ্খ ঘোষের শ্রেষ্ঠ কবিতা মূর্খ বড় সামাজিক নয় বাবরের প্রার্থনা মিনিবুক তুমি তেমন গৌরী নও আযানের শব্দ কবিতা সংগ্রহ_১, মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে নির্বাচিত প্রেমের কবিতা সবের উপরে সামিয়ানা সহ বহু কাব্যগ্রন্থ লিখেছেন। গদ্য গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কালের মাত্রা ও রবীন্দ্র নাটক, ছন্দের বারান্দা,উর্বশীর হাসি,শব্দ আর সত্য, জার্নাল,ঘুমিয়ে পড়া অ্যালবাম,কবিতা লেখা কবিতা পড়া, ছন্দময় ময় জীবন,সময়ের জলছবি,ইছামতীর মশা: ভ্রমণ,দামিনীর গান সহ একাধিক গদ্যগ্রন্থ লিখেছেন। ছোট কিশোরদের জন্য রেখে গেছে বিশেষ অবদান।তাদের জন্য লিখেছেন বিদ্যাসাগর,সকাল বেলার আলো, সবকিছুতেই খেলনা হয়,সুপারি বনের সারি, আমন ধানের ছড়া,কথা নিয়ে খেলা,সেরা ছড়া, আমন যাবে লাট্টু পাহাড়,ওরে ও বায়না বতি, অল্পবয়স কল্প বয়স, আমায় তুমি লক্ষী বল,ছড়া সংগ্রহ,ইচ্ছে প্রদিপ সহ একাধিক সৃষ্টি। লিখেছেন বক্তিতা/সাক্ষাৎকার ভিত্তিক সংকলন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল অন্ধের স্পর্শের মতো, এক বক্তার বৈঠক: শম্ভু মিত্র, কথার পিঠে কথা,জানার বোধ,হওয়ার দুঃখ। অগ্রন্থিত রচনা সংকলন গুলি হল মুখ জোড়া লাবণ্য,অগ্রন্থিত শঙ্খ ঘোষ।২০১৯ সালে প্রথমা প্রকাশন থেকে বের হয় “সন্ধ্যা নদীর জলে: বাংলাদেশ”।সন্ধ্যা নদীর জলে বইটি মূলত বাংলাদেশ প্রসঙ্গে নানা সময়ে লেখা তার স্মৃতিকথা ভ্রমণ পঞ্জি অন্তরঙ্গ বিশ্লেষণ লেখা গুচ্ছের সংকলন।একুশে, একাত্তর ও নববর্ষ, ব্যক্তি,প্রতিষ্ঠান,গানের ভিতর দিয়ে,শিক্ষা আন্দোলন,ও স্মৃতি,ভ্রমণ এই পাঁচটি পর্বে বিভক্ত হয়েছে বইটি। কবিতার পাশাপাশি রবীন্দ্রচর্চা তেও প্রসিদ্ধ ছিলেন তিনি। ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথ তার উল্লেখযোগ্য গবেষণা গ্রন্থ।
তাঁর সাহিত্যজীবনে একাধিক পুরস্কারের সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন।১৯৭৭ সালে”মূর্খ বড় সামাজিক নয়” নরসিংহ দাস পুরস্কার, ১৯৭৭ সালে “বাবরের প্রার্থনা”র জন্য সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার,১৯৮৯ সালে”ধুম লেগেছে হৃদ কমলে”র জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার,”গান্ধর্ব কবিতা গুচ্ছের”জন্য সরস্বতী পুরস্কার,১৯৯৯ সালে “রক্ত কল্যাণ” অনুবাদের জন্য সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার, ১৯৯৯ সালে বিশ্বভারতী দ্বারা দেশিকোত্তম পুরস্কার, ২০১১ সালে ভারত সরকারের দ্বারা পদ্মভূষণ পুরস্কার। ২০১৬ সালে জ্ঞানপীঠ পুরস্কার লাভ করেন।
গত প্রায় সাত বছর ধরে তিনি নিরলস সাহিত্যচর্চায় নিয়োজিত ছিলেন।চিরকালীন এক উত্তরাধিকার একজন কবিকে ইতিহাসের চোখে অন্যান্য এবং স্বতন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করে দেয় অন্ধকারের দিনগুলো আজও খুঁজে নিতে এগিয়ে দেয় নতুন প্রজন্মকে।মিনিট হয়ে যাওয়া অসংখ্য কবিতার লাইন যেমন বিশ্বসাহিত্যের সম্পদ হয়ে থাকবে তেমনি থাকবে তার সামগ্রিক জীবনবোধ।যেখানে ছোট্ট ছোট্ট হীনতা ব্যর্থতা অনায়াসেই অতিক্রম করে কবিতার দশকের পর দশক ডুবে থেকেছেন রবীন্দ্রনাথকে নতুন নতুন আবিষ্কার করে পৌঁছে গিয়েছেন আমাদের দরবারে। তিনি ছিলেন সবার কাছেই শঙ্খ বাবু বা স্যার। তিনি বহু কবি ও কবিতা দেন ভাষা জুগিয়েছিলেন।তিনি না থাকলে সমাজের বিবেক কাকে বলে সেটা আমরা উপলব্ধি করতে পারতাম না।আত্মবিক্রয়ের যুগের শঙ্খ ঘোষ ছিলেন আকাশের মতো সহজ, মহৎ,বিশাল। শঙ্খ ঘোষ একমাত্র কবি ছিলেন যিনি অলৌকিক কবিতার জগতে সঙ্গে বাস্তবের সংযোগ ঘটিয়েছেন।
তিনি সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি ছিলেন সংকটের মহা ঔষধ।দেশের চরম সংকটে অস্থির মনের প্রধান আশ্রয়স্থল তিনি। তিনি বার বার রাজ্যের প্রতি অন্যায় হলে মিছিল ডেকেছিলেন।২০১১ জানুয়ারির ঘটনা। নেতাই গণহত্যা প্রতিবাদে উত্তাল রাজ্য।কলকাতায় তার একমাত্র ভরকেন্দ্র ছিল কলেজ স্ট্রিত প্রেসিডেন্সি কলেজ। টিভি ক্যামেরার সামনে এক কিশোরীর” মা গো—–বলে কান্নার ছবি সবার সামনে মনে গেঁথে গিয়েছিল। প্রেসিডেন্সি কলেজের একদল পড়ুয়া মিছিল করার আগে ক্যাম্পাসে একটি বড় পোস্ট রাখলেন। যেখানে ছিল সেই কিশোরীর অসহায় ও লাঞ্ছনার অবয়ব। আর তার পাশে লেখা কবিতার দুটি লাইন“নিভন্ত এই চুল্লিতে মা একটু আগুন দে/আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি বাঁচার আনন্দে”।এর প্রতিবাদে আবার সিপিএম সমর্থক পড়ুয়ারাও একটি প্রস্তাব দিলেন সেখানে আঁকা মাওবাদী গণহত্যার বলি এক কমরেড এর ছবি। সেখানেও কবিতার পংক্তি“পেটের কাছে উঁচিয়ে আছো চুরি/কাজেই এখন স্বাধীন মত ঘুরি”। প্রতিবাদ ও পাল্টা প্রতিবাদের ভাষায় সেইদিন দুটি পোস্টারে লেখা দিয়ে প্রতিবাদের ভাষায় প্রাণ যুগিয়েছিলেন যে কবি তার নাম শঙ্খ ঘোষ।বাবরি মসজিদ ধ্বংস হোক বা বামফ্রন্ট আমলে বন্দী মুক্তির দাবি,গুজরাট দাঙ্গা থেকে সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজের মিছিল-মিটিং সমাবেশের আয়োজন তালিকা একেবারে পহেলা নম্বরে তার নাম থাকত।২০১১ সালে সামিল হয়েছেন সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোল নে। এই সময় পরিবর্তনের অন্যতম উজ্জ্বল নাম ছিল শঙ্খ ঘোষ। পরিবর্তনের পরেও তার প্রতিবাদ থেমে যায়নি।পাক স্টিট,কামদুনি গণধর্ষণ থেকে ভোটের হিংসার বিরুদ্ধে মিছিলে সামিল হয়েছেন।পরে কালবুর্গি,গৌরী লঙ্কেশ হত্যা এবং এন আর সি,সি এ বিরুদ্ধে গেরুয়া শিবিরের সমালোচনায় মুখর ছিলেন কবি।২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে দাবিতে শঙ্খ ঘোষের নেতৃত্বে রাজ্যের বৃদ্ধ জনের একাংশ নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের নানা পদক্ষেপ এবং তাদের শাসনকালে বিভিন্ন ঘটনাতেও শঙ্খ ঘোষের প্রতিবাদী কলম সত্তা একইভাবে গর্জে উঠেছিল। বর্তমানে প্রতিবাদীদের প্রশ্ন এবার মিছিল ডাকবে কে? কবি শঙ্খ ঘোষের অকাল প্রয়াণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে যাওয়া কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে গেল। শুধু তাই নয় বাংলা সাহিত্যজগতে যা অভাবনীয় ক্ষতি হলো তা আর পূরণ হবার নয়। কবি লিখেছিলেন”এত বেশি কথা বলো কেন? চুপ করো শব্দহীন হও”। আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম স্তম্ভ শঙ্খ ঘোষ মোটেই আড়ম্বর পছন্দ করতেন না।তাই কোভিদ ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে বিদায় বেলায় কেউ সব দিন রাখার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য প্রশাসন। তার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য হলেও ছিলনা কোন গান স্যালুট বা তো প ধ্বনি।”শূন্যতায় জানো শুধু? শূন্যের ভিতর এত ঢেউ আছে/সে কথা জানো না?