অচিনপুরের রুদ্র প্রতাপ নামে এক রাজা বাস করতেন। রাজা ছিলেন ভীষণ রাগী ও প্রচণ্ড শক্তিশালী। তার কথাই গ্রামে শেষ কথা।রাজার আদেশের বাইরে গ্রামের মানুষ টু শব্দ পযর্ন্ত করতে পারত না। ওনার আচরণ ছিল হিংস্র পশুর মতো। জঙ্গলে একটা হরিণকেও তিনি শান্তিতে বাস করতে দিতেন না। প্রতিদিন তিনি দুটো করে হরিণ শিকার করে একাই ভক্ষণ করতেন। একদিন একটি মা হরিণ তার ছোট বাচ্চাকে নিয়ে ঘাস খেতে বেরিয়েছে, ঠিক তখনই রাজাও শিকারের এসেছেন ওই জঙ্গলে। রাজা অনেক খুঁজে একটাও পুষ্টিওয়ালা হরিণের খোঁজ পেলেন না। হঠাৎ রাজার চোখে পড়লো সেই মা হরিণ টি, সঙ্গে সঙ্গেই বন্দুক দিয়ে গুলি করবে, ঠিক তখনই রাজার মন্ত্রী বললেন থামুন রাজা মশাই এটা আপনি কি করছেন। রাজা বললেন কেন কিসের সমস্যা, আমি তো প্রতিদিনই দুটো করে শিকার করি, তবে আজ কেন আপনি বাধা দিচ্ছেন । মন্ত্রী কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বললেন আচ্ছা রাজা মশাই আপনি যে হরিণটিকে হত্যা করতে চাইছেন, তার যে একটা ছোট বাচ্চা রয়েছে তার কি হবে? বাচ্চাটাকে দেখে মনে হচ্ছে, সে এখনো পযর্ন্ত তার মায়ের দুধ পান করে। তবে আপনি যদি ওর মাকে হত্যা করেন তাহলে বাচ্চাটি কি খেয়ে বাঁচবে। বা এই জঙ্গলে কঠিন কষ্টের মধ্যে কিভাবে বেঁচে থাকতে হয়, সেটা কে শিখিয়ে দেবে, বলুন তো রাজা মশাই? এই কথা শুনে রাজা প্রচণ্ড রেগে বললেন – তাহলে আমার শিকার কে হবে, আপনি? না আপনার পরিবার ? আপনি যদি আর একটা কথা বলেন তাহলে আপনার চোদ্দ বছরের কন্যাকে তুলে নিয়ে এসে আমার দাসী করে রাখব। আপনি সেটা দেখে সহ্য করতে পারবেন তো মন্ত্রী মশাই? এছাড়া আমি এটা পছন্দ করি না যে, আমার কোন কাজে কেউ বাধা দিক । এই বলে রাজা এক গুলিতেই মা হরিণটিকে হত্যা করে দিল। তারপর রাজার
হুকুমে হরিণটাকে রাজার বাড়ি নিয়ে আসে রাজার পেয়াদারা এবং রাজা সেটা ভক্ষণও করেন। অন্য দিকে মন্ত্রী মনের দুঃখে সেই বাচ্চাটিকে রাজার থেকে লুকিয়ে নিজের বাড়ি নিয়ে আসেন। এবং নিজের সন্তানের মতো যত্ন করেও বাচ্চাটিকে বাঁচাতে পারলেন না। মন্ত্রী গভীর কষ্টে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। কিছু দিন পর রাজা সভায় জিজ্ঞাসা করেন কি ব্যাপার মন্ত্রী মশাই সভায় আসছেন না কেন ? ওনার কি শরীর ঠিক নেই? এ কথা শুনে সভার সদস্যরা বললেন বাচ্চা হরিণের কথা। এই দুঃখের কথা শুনে রাজা একটুকুও কষ্ট অনুভব করলেন না। তারপর রাজা তার মহলে ঘটা করে মা দূর্গার মূর্তি নিয়ে এলেন এবং বড়ো করে পূজোর আয়োজনও করলেন। গ্রামের মানুষ সবাই ভয়ে ভয়ে পূজো দেখতে এলেন, এবং রাজার আদেশে সবাই মিলে একটু নাচ গানও করলো। এবার যে আশ্চর্য ঘটনাটা ঘটলো অষ্টমীর দিন সারা গ্রামের মানুষ হাজির হলো পূজোর মন্ডপে এবং রাজাও খুশি হয়ে মায়ের সামনে গুছিয়ে বসে পূজো দেখছেন, এবার ছাগল বলি করার সময় যখন ছাগলটাকে কিছুজন মিলে ধরে বলি দিচ্ছে,হঠাৎ তখন রাজা দেখতে পেলেন ছাগল নয়, তার নিজের পুত্রকে বলি দেওয়া হচ্ছে ।এই দেখে রাজা প্রচণ্ড চিৎকার করে জ্ঞান হারালেন। কিছুক্ষণ পরে রাজার যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন এই কথা শুনা যায় রাজার মুখে। এবং রাজা সময় নষ্ট না করে, তিনি মন্ত্রীর কাছে গিয়ে ক্ষমা চান, তার নিজের পাপের। এবং পরে রাজা আদেশ দেন যে এই গ্রামে কোন ব্যক্তি যেন জীব হত্যা না করে, আর এই কথা যদি কেউ অমান্য করে তাহলে তাকে মৃত্যু দন্ডে দন্ডিত করা হবে।
কয়েক মাস পরে রাজা তার রাজ্যভার তার পুত্রের হাতে তুলে দিয়ে, তিনি সন্ন্যাস নিয়ে বনে চলে যান। আর যাবার আগে একটাই কথা বলে যান
## জীব হত্যা মহাপাপ
এই পাপে ক্ষমা নেই ##
***********************
= সমাপ্ত