অগ্নিপথ প্রকল্প যুবসমাজকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া
বটু কৃষ্ণ হালদার
মাত্র কয়েকদিন আগেই নবী বিতর্ক কাণ্ডে নুপুর শর্মার বিরোধিতা করতে গিয়ে দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছিল। আন্দোলনের নামে একশ্রেণীর উন্মত্ত জনতা দেশের কয়েক শ’ কোটি সম্পত্তি নষ্ট করে দেয়। তার রেশ কাটতে না কাটতেই যুবসমাজের কথা ভেবে সেনাবাহিনীতে অগ্নিপথ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করার পরপুনরায় দেশ অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। আবারো কয়েকশ কোটি টাকার সম্পত্তি পুড়ে ছাই হয়ে গেল। নবী বিতর্ক কাণ্ডের কথা বাদ দিলাম, অগ্নিপথ প্রকল্প তো যুব সমাজকে নতুন করে বাঁচার, স্বপ্ন দেখার,ভাবার প্রকল্প।তাহলে এই প্রকল্প ঘোষণা করতেই দেশের যুবসমাজ চারিদিকে বিদ্রোহের আগুন লাগিয়ে দেয়। যারা কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে বিশেষ করে সেনাবাহিনীতে চাকরি করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছেন তাদের নিশ্চয়ই দেশীয় সম্পত্তি সম্পর্কে সম্যক ধারণা রয়েছে। বর্তমান সময়ে বেকারত্বে হাহাকার,সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের ক্ষতে মলম লাগানোর চেষ্টা করলে যুবসমাজ কেন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো তার কারণ আমাদের বের করতে হবে।তবুও বলবো নিয়মতান্ত্রিক পথে আন্দোলন করা দরকার ছিল। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সময় এমনভাবে দেশীয় সম্পত্তি ধ্বংস করার মূল্য সাধারণ জনগণকে দিতে হবে।
সর্বপ্রথম আমাদের জেনে রাখা ভালো দেশের সেনাবাহিনী হলো ভারতবর্ষের প্রতিরক্ষা র মূল স্তম্ভ। এই প্রতিরক্ষা বাহিনী হল খুবই স্পর্শকাতর বিষয় সেই সঙ্গে দেশের প্রতি যুবসমাজের আনুগত্যের কথা অস্বীকার করা যায় না। ভারতবর্ষের সীমান্ত সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ চাকরি যেখানে মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত জেনেও দেশের বহু যুবক সন্তানরা এই চাকরি করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে ও উদগ্রীব হয়ে থাকে।রাজনীতি হলো জনসেবা। সেই অর্থে দেশের সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব তাদের উপর বর্তায়।নেতা মন্ত্রী হতে গেলে তাদের পরিবারের একজনকে সেনাবাহিনীতে চাকরি করতে হবে, জনসেবার নামে যদি এমন আইন পাশ হয় তবে দেখবেন আর কেউ নেতা মন্ত্রী হতে চাইবে না। কিন্তু আমাদের দেশের বহু সন্তানরা নেতা মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেনা, তারা দেশ মাতাকে সেবা করার জন্য সেনাবাহিনীতে চাকরি করার কথা ভাবে।এই সমস্ত সন্তানদের পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া জেনে বুঝে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।কারণ দেশে আপৎকালীন বা জরুরি অবস্থার সময় এই সমস্ত অগ্নিপথ প্রকল্পের আওতাধীন সেনাবাহিনীকে সবার প্রথমে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে সরকার।তাতে সরকারের এক ঢিলে দুই পাখি মারার চক্রান্ত পুরোপুরি সাকসেস হবে। অগ্নিপথ প্রকল্পের আওতাধীন সেনাবাহিনী মারা গেলে তাদের এককালীন টাকা দিতে হবে।আর পেনশনের দায়ভার সরকারে থাকবে না।২০০৩ সালের ৩১ শে ডিসেম্বরের পর থেকে কেন্দ্র সরকারের চাকরিতে পুরনো পেনশন স্কিম বাতিল করে নতুন পেনশন স্কিম চালু করা হয়েছে। শুধুমাত্র সেনাবাহিনী বাদ দিয়ে। সরকার প্রত্যক্ষভাবে পুরানো পেনশন স্কিম তুলতে না পারলে ও পরোক্ষভাবে অগ্নিপথ প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে তা বাস্তবায়িত করার চিন্তাভাবনা করেছেন।তবে পেনশন যদি বন্ধ করতে হয় তবে আগে মন্ত্রীদের বন্ধ করা উচিত।কারণ নেতা মন্ত্রীদের অনেকেই জনসেবার নামে সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আর বারবার দলত্যাগ করে একাধিক পেনশন তোলেন।এবার মূল আলোচ্য বিষয় নিয়োগ পদ্ধতির উপর আলোকপাত করা দরকার।এই প্রকল্পে ১৭ বছর বয়স থেকে পরীক্ষার্থী ফ্রম পূরণের সুযোগ পাবেন।কিন্তু চাকরি পেতে পেতে আরো দুই তিন বছর পার হয়ে যাবে নিশ্চিত।আর ১৭_১৮ বছরের পরীক্ষার্থীরা প্রথমে এই চাকরিতে আসবেন। ভবিষ্যৎ হীন চাকরিতে যাওয়ার আগে সে নিশ্চয়ই অন্য জায়গায় চেষ্টা করব। আর যাদের বয়স একুশ বাইশ এর মাঝামাঝি কিম্বা তেইশ তারা প্রাণপণে চেষ্টা করবেন।ধরা যাক একটা পরীক্ষার্থী যদি কুড়ি বছর বয়সে চাকরি পায় তাহলে তাহলে সে চার বছর চাকরি ২৪ বছরে অবসর গ্রহণ করবে। অবসরের পর এককালীন প্রায় সাড়ে এগার লক্ষ টাকা ও বাকি সরকারি সুযোগ সুবিধা পাবে।কিন্তু এর পর সেই ছেলেটা কি করবে?বলা হচ্ছে ২৫ শতাংশ স্থায়ী চাকরি পাবে বাকি ৭৫ শতাংশ অন্যান্য জায়গায় আগে সুযোগ পাবে।কিন্তু বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ইতিমধ্যে প্রাইভেট হয়ে গেছে।নতুন করে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বের হতে হতে অনেক বছর সময় লেগে যায়। তার উপর আছে রাজনীতির গাঁড়াকল।
পার্টির ক্যাডাররা আগে চাকরি পায়, তার উপর দুর্নীতি।তার উপর যারা অবসর নেন তাদের মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে নিতে আরো দুই তিন বছর সময় লেগে যায়। সে ক্ষেত্রে দেখা যায় সরকারি চাকরির ফর্ম ফিলাপ করতে গেলে অনেক র চাকরির বয়েস ফুরিয়ে যাবে।আবার আমাদের দেশে বহু প্রতিভাবান ছাত্র ছাত্রী চাকরির পরীক্ষা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে ,চাকরি না পেতে হতাশায় ভুগতে ভুগতে আত্মহত্যা করে।এমন নজির বহু আছে।তাহলে বহু শিক্ষিত পরীক্ষার্থীরা টাকার জন্য অগ্নি পথ বেছে নিলে ও তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে থাকছে ধোঁয়াশা। কেন্দ্র সরকার সেই ধোঁয়াশার জট এখনো পর্যন্ত কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সেই কারণে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত শিক্ষিত যুবকদের বুকে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি জেগে উঠেছে। সেই আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে গেলো দেশের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। মনে রাখবেন কিছু টাকা ও কয়েকটা ভাতা দিয়ে একজন যোগ্য প্রার্থীর ভবিষ্যৎ কখনোই উজ্জ্বল হতে পারেনা।তাই বলা যেতে পারে অগ্নিপথ প্রকল্প যুবসমাজকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।
বটু কৃষ্ণ হালদার, কবর ডাঙা,কলকাতা_১০৪