স্বপ্নসন্ধানী বাবা
গৌতম বাড়ই
শহরটা ছিলো ত্রিভুজাকার।রাণা শহর বিশ্লেষণ করে নিজে নিজেই তৈরী করেছে একটা জ্যামিতি।এই জেলা শহরটা যদি ত্রিভুজের ভূমি ধরে এগোনো হয় তাহলে বিস্তৃত ভাবে শুরু হয়ে তিন চার কিলোমিটার পর একটা বিন্দুতে শেষ হয়ে যাচ্ছে।আবার কোন শহর আয়তাকার।কোন শহর বর্গাকার।একটা প্রধান রাস্তা পাঁচ ছয় সাত কিলোমিটার ধরে,সেই শহর লম্বা টানা শহর।আবার কোন শহর বৃত্তাকার।গোল।তো রাণার নিজের শহর ত্রিভুজাকার তার কাছে।সেই পরিবার পরিকল্পনার লাল ত্রিভুজ।এখন হয়তো সবুজ।রঙ নিয়ে তখন বাড়াবাড়ি ছিলো না।আসলে তখন তো ভবিষ্যতের সব রঙ ফিকে হয়ে যায়নি।স্বাধীনতার কচি বয়স।অনেক স্বপ্নদেখার স্বপ্নেভরা দিন।শহরের প্রান্তে মানে ত্রিভুজের বিন্দুতে জলপাইনদীর ধারে বুড়ো বটের তলে এক স্বপ্ন সন্ধানী বাবা এসেছেন।পিকু এসে চুপিচুপি রাণার কানে বললো।
কি করবেন তিনি?
তুই শেষ পনেরো দিনে যা যা স্বপ্ন দেখেছিস ওনাকে বলতে হবে।উনি তা শুনে তোর ভবিষ্যত বলে দেবেন।চাকরি বাকরি বিয়ে এইসব।
দক্ষিণা কতো?
বিনামূল্যে।তবে সামনে একটা দানপাত্র রাখা আছে।
ওটাই তো ঘুরিয়ে বিরাট চাপ রে!তবে চল দুজনেই তো এপাশ ওপাশ করে বসে আছি অনেকদিন।চাকরিটার জন্য কি বলে!
ভিড় বাড়ছে ক্রমে ক্রমে।এটুকু জানি।আমার আবার পিউয়ের সাথে বিয়ের ব্যাপারটাও আছে।নইলে আর একটা বছর পার হলে ফুড়ুৎ।
একটা সমস্যা আছে–রোজ রোজ আলুসেদ্ধ আর ভাত খেয়ে স্মৃতি শক্তি ভ্রষ্ট।বাবা নিজেই বেকার হয়ে পড়ে আছে ঘরে।কোম্পানীর ডাউন সাইজিং।বড়জোর দু তিনদিন আগের স্বপ্ন মনে আছে।দু সপ্তাহ ধরে টানা মনে রাখা!
বানিয়ে বলবি–রাণা বলে।সেই তো সব ঢপ বাবাজী ।সব বাবাজী একই।
তাহলে যাচ্ছিস কেনো?
সেই ঢপের রঙে কিছুদিন রাঙা হয়ে উঠতে।
এরপর রাণা পিকুকে বলে শনিবার বিকেলে ধোবীতলা সাড়ে তিনটের পর।
ধোবীতলায় দূর থেকে দেখলো বেশ জম জমাটি ভিড়।পুলিশের গাড়ি। পুলিশ।লোকজন।সব।
রাণা বলে পিকুকে- বাবাজী এরমধ্যেই খুব নাম কামিয়েছেন দেখছি।পুলিশ এসে ভিড় সামাল দিচ্ছে।
কাছে যেতেই থ হয়ে গেলো।পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে একমুখ দাড়িগোঁফের একজনকে নিয়ে যাচ্ছে আর বলছে তুই তাহলে নষ্টগুরুর কেষ্টচ্যালা ? তোকে এবার সাইজ করতে হবে চল!
@গৌতম বাড়ই