মহাসঙ্গীতের ভিড়ে
সুপান্থ ডাঙ্গর
বিশালতা! সে তো দেখার ধরণ
সূক্ষ পর্যবেক্ষণ !
প্রতিটি কণা পৃথক ভাবে
চোখে পড়ে সর্বক্ষণ।
গ্ৰহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি, যেমন
মিলায় ছায়া পথে
অস্তিত্বহীন ধূলিকণা সম
মনে হয় দূর হতে !
যতো কাছে যাই ততো বড় হয়
হয়ে পড়ি আবিষ্ট
যত দূরে যাই ততো ছোট হয়
হারাতে থাকে অস্তিত্ব।
মায়ের চোখে সন্তান বড়
নিজের চোখে নিজে
বিশ্ব জোড়া মাথার ভিড়ে
নিজেকে পাইনা খুঁজে।
যেদিন নিজে পারবো যেতে
নিজ হতে বহু দূরে…
হারিয়ে যাবে একতারাটি
মহাসঙ্গীতের ভিড়ে!
।। ১লা মে, ২০২৪ ।।
*******************
কবি পরিচিতি:
সুপান্থ ডাঙ্গর।
বাড়ি বাঁকুড়া জেলার জঙ্গলমহল অন্তর্গত সিমলাপাল ব্লকের অড়রা গ্ৰামে। অফিসিয়াল জন্ম তারিখ ০৬/১০/১৯৮২ ।
তিনি গড়বেতা কলেজ থেকে ২০০৫ সালে রসায়ন বিষয়ে স্নাতক হয়ে ২০০৬ সালে এস এস সি এর মাধ্যমে বাঁকুড়ার দক্ষিণপ্রান্তের রাইপুর ব্লকের ঢেকো রজনীকান্ত হাইস্কুলে বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তী কালে ঝাড়গ্ৰাম সেবায়তন শিক্ষণ মহাবিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে বি.এড করেন। দূরশিক্ষার মাধ্যমে ২০১৪ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ বিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্ৰি অর্জন করেন।
২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে আজ পর্যন্ত বাঁকুড়া জেলার সারেঙ্গা ব্লকের জামবনী হাইস্কুলে সহশিক্ষক হিসেবে কর্মরত। মাঝে একবছর এই স্কুলে প্রধান শিক্ষক না থাকায়, টিচার ইন-চার্জ এর দায়ীত্ব পালন করেন।
১৯৯৯ সালে সারেঙ্গা মহাত্মাজী স্মৃতি বিদ্যাপীঠ থেকে মাধ্যমিকে স্কুলের প্রথম হয়ে স্টার মার্কস সহ মাধ্যমি পাশ করেন। ওই সময় সারেঙ্গা রামকৃষ্ণমিশনের পক্ষ থেকে কৃতি ছাত্রছাত্রীদের সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে রামকৃষ্ণ-বিবেকান্দ সম্পর্কিত গোটা কয়েক পুস্তিকা উপহার হিসেবে পান। ওই পুস্তিকা গুলি পড়ার পরেই তাঁর জীবনদর্শন পুরোপুরি বদলে যায়। বিবেকানন্দের ভাবধারর প্রতি আশক্তি জন্মে যায়। পরবর্তীকালে পড়াশুনোর বাইরে বিবেকানন্দের বই পড়াই তাঁর নেশার মতো হয়ে দাঁড়ায়। সেই থেকে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের চিন্তাধারা জীবনে প্রয়োগ করে যাওয়ার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন। নিজের সাধ্য মতো যথা সম্ভব সমাজ সেবার কাজে নিজেকে যুক্ত রাখার চেষ্টা করেন। তাঁর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিবেকানন্দের ভাবধারা ছড়িয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে আসছেন।
ছাত্রজীবন থেকে মাঝে মাঝেই তিনি কবিতা লেখার চেষ্টা করেন। দু’চারটে কবিতা স্থানীয় লিটিল ম্যাগাজিনে প্রকাশিতও হয়েছে। সাহিত্যের মধ্যে তাঁর সবচেয়ে আকর্ষণের বিষয় কবিতা ও প্রবন্ধ। কোন বিষয়ে গভীর ভাবে ভাবা তাঁর অন্যতম প্যাশন।
কর্মজীবনে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর সংস্পর্শে এসেছেন। তাদের পরিবারের জীবন সংগ্ৰামের ইতিহাস জানার চেষ্টা করেছেন। কর্মসূত্রে বা শিক্ষা গ্ৰহণের জন্য যেখানেই গেছেন, সেখানের মানুষের জীবন, জীবীকা ও ভাবনার ধরণ নিয়ে শেখার চেষ্টা করে এসেছেন। বর্তমানেও এই অভ্যাস জারি রেখেছেন।
জঙ্গলমহলে তীব্র মাওবাদী আন্দোলনের সময় নিজের কর্মক্ষেত্রে কাজ চালিয়ে গিয়ে সরসরি সেই আন্দোলন প্রত্যক্ষ করেছেন। রাস্তঘাট কাটা, দোকানপাট মাসের পর মাস বন্ধ , খাবার পাওয়ার গ্যারেন্টি নেই প্রভৃতি জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েও শিক্ষাদানের কাজ চালিয়ে গেছেন। ঢেকো হাইস্কুলে যেতে গেলে রাস্তার একটা অংশ পড়তো লালগড় ব্লক এলাকার মধ্যেই। এই সব অভিজ্ঞতা উনার জীবনকে অনেক সমৃদ্ধ করেছে, মানুষকে বুঝতে শিখিয়েছে এবং অন্তরে লড়াই চালিয়ে যাওর শক্তি জুগিয়েছে।
এখনো সাইকোলজি, ল অফ অ্যাট্রাকশন, মোটিভেশন প্রভৃতি নিয়ে নিয়মিত অনলাইনে কোর্স নিয়ে শেখার চেষ্টা করেন। তাঁর জীবনের মূল দর্শন, “If you think for others, the God will think for you.”