Spread the love

 

দু’টি সনেট

———————-

 

(১)

আমার শ্রাবণ দিন -এর সনেট

——————————-

উমাকিরণ শংকর ( ভারত )

 

মুক্ত শ্রাবণ ধারা অঝোরে ঝরে যায় —

সারারাত, সারাদিন ধরে অবিরাম…

সবুজের কোলে ময়ূরীর নৃত্যতায় —

কী আনন্দে ভরে ওঠে অধিলোক ধাম!

আমার বীণার সুর বাজে নিরালায়

বৃষ্টি ঝর্ণায় প্রেম যে ভাসিয়ে ছিলাম

অনন্ত সাগরের অসীম সীমানায়…

তাই কি এইভাবে আমি নিঃস্ব হলাম?

 

ঘনঘোর বর্ষা, পাই না ঋতুর ভাষা—

বনে-বনে পাখিরা বিলাপ ক’রে যায়,

আঁখিজল ঝরে, মনে কত কী যে আশা…

শ্রাবণ দিন যায় সাঁঝ নির্জনতায়!

 

আমার শ্রাবণ দিন জলছবি আঁকে,

ভূ-তে শুধু গোধূলির রঙ ভ’রে থাকে।

 

————————————

 

(২)

 

বটবৃক্ষ – এর সনেট

——————————–

উমাকিরণ শংকর (ভারত)

 

 

আমি সৃষ্টি থেকে আছি এই চরাচরে—

বিস্তীর্ণ ছায়ায় ঘেরা সভ্যতার শান্তি,

আমাকে নিয়ে সব জীবের ঘুচে ক্লান্তি,

আমি জাগি মাটি হতে কঠিন প্রস্তরে।

 

পাখিরা বেঁধেছে বাঁসা এ-কাণ্ড কোটরে,

হে মানুষ, তুমি এসে নাও ছায়া-সুখ,

কখনো বা তুমি এসে ঘুমাও অঘোরে,

আমারি তো ছায়া পেতে সকলে উন্মুখ।

 

অনন্ত যুগ থাকবে আমার অস্তিত্ব —

সুন্দর হয় যে প্রেম নিবিড় নির্জনে,

বাউল গাইবে গান ঝুরির মাহাত্ম্য,

সমাদৃত হই আমি স্বতন্ত্র স্মরণে।

 

বাতাস বহে চলে — মুক্ত আনন্দ ধারা,

পূজার দীপ জ্বেলে আকাশে পুণ্যতারা।

 

http://<script async src

কবি পরিচিতি :–

উমাকিরণ শংকর, কলকাতা, ভারত, স্বচ্ছল পরিবারে জন্মেও পারিবারিক নানা দুর্যোগে শৈশব থেকেই বিপন্নতা এতোটাই আসে যে, অকালে স্বামী হারা মা লোকের বাড়িতে কাঁথা কেচে একটাকা পঁচিশ পয়সা মজুরি নিয়ে সেই টাকায় বিদ্যাসাগরের “বর্ণ–পরিচয় ” কিনে দিলে সেইটা দিয়ে পড়াশুনার শুরু। এগারো মাস বয়সে পিতা-হারা, প্রায় ছয় বছর বয়সে মাতা হারা। তারপর অনাথ জীবন।

তারপর নিজে লোকের বাড়িতে বারমেসের কাজ।আই-এফ-এ ফোর্থ ডিভিশন খেলতে-খেলতে আরো বড় সুযোগ আসার সময়েই আবার পরিবারের বিপন্নতা। জোড়াতালি দেওয়া প্যান্ট পরে রেল স্টেশনে কতবার রাত কাটানো। এই পোষাকেই নানা কাজের পর কাজ করে একটা সময় ছেঁড়া পোষাক পরেই এল-আই-সি বা ভারতীয় জীবন বীমায় এজেন্ট হিসেবে কাজ শুরু ও অল্প সময়ের মধ্যে পুরস্কৃত এবং ভালো আয় শুরু। পরপর বড়-বড় পদ পেয়েও পরে সাহিত্যকে পেশা হিসেবে নিয়ে গভীরে মনোনিবেশ করার জন্য এল-আই-সি এর কাজে খাটুনি কমিয়ে ও সাধারণ এজেন্টের জায়গায় নেমে আসা হয়েছে। আবার সরল বিশ্বাসে চলতে গিয়ে কষ্টের অর্জিত স্থাবর অস্থাবর সম্পদ ও ক্যাশ লাখ-লাখ টাকা অন্যদের হাতে চলে গেছে, তারপর বিপন্ন জীবন, ও ফের চেষ্টা করে কোনো রকম ভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা।

কখনো বা এল-আই-সি এজেন্টের এজেন্সির পলিসি কম পক্ষে সংখ্যার কোটা পূরণ না হওয়ায় এজেন্সি নষ্ট করতে চাইলে সেটাকে অনুরোধ করে আবার টিকিয়ে রাখা হয়েছিল।

বাংলাদেশের উপর কবিতা ও সনেট গুচ্ছ দিয়ে ” সোনার বাংলা” বই বেরোয় কলকাতার ” Book Bengal Publisher ” ( Owner – Somindra Kumar, সোমিন্দ্র কুমার) , যেটি আনন্দ পাবলিসার্স প্রাইভেট লিমিটেড ( আনন্দবাজার গ্রুপ) এর ” বইয়ের দেশ ” পত্রিকাতে খুব প্রশংসিত হয়। এরপর প্রকাশকের সম্মতিতে বইটিকে আরো উন্নত করতে বেশ কিছু অদল বদল করা হয় নানা ভাবে, প্রায় সনেটগুলিকে অক্ষত রেখে। মূলত কবিতাগুলিকে আরো অন্য রকম করা হয়েছে। কিছু নতুন সংযোজন – বিয়োজন হয়েছে। ” বইয়ের দেশ ” এর প্রশংসা খুব অনুপ্রাণিত করেছিল। তাই আরো সুন্দর করার জন্য দায়বদ্ধতা চলে আসে।

বাল্যকালে ফুটবল খেলার প্রতি ঝোঁক। ক্লাস নাইন, টেন -এ এবং’ সুরেন্দ্রনাথ কলেজ ‘- এ পড়বার সময় থেকে ও বারুইপুর এ্যাসোসিয়েশন (দক্ষিণ ২৪ পরগণা) – এর অধীনে থাকা দ্বিতীয় ডিভিশন – এ নিয়মিত খেলবার সুযোগ আসে। তার বছর দুই পরে ১ম ডিভিশনে খেলার সুযোগ হয়।কিন্তু,অসম্ভব আর্থিক দূরাবস্থার জন্য সেই ফুটবল খেলা ও লেখাপড়া শৈশবে আর ধরে রাখতে পারেনি।

আবার অন্যদিকে, দু- দুবার ড্রাফ্টস্ ম্যান সিভিল ইন্জিনিয়ারিং- কোর্সে পড়বার সুযোগ পেয়েও টাকার অভাব ও অসুস্থতার জন্য পড়াশোনা চালানো সম্ভব হয়নি।

 

গীতিকার শ্যামল সেনগুপ্ত – এর সহযোগিতায় Sound Wing Recording Studio- তে, ও ঝাঁট দেওয়া, টেবিল, চেয়ার মোছার কাজ করেছে। কোলকাতার বিখ্যাত সুরকার ও গীতিকার – শ্রদ্ধেয় অজয় দাস নিজের ইচ্ছেতে ৬০ টাকা দিয়ে বাংলা অভিধান কিনতে সাহায্য করেন সেই সময়ে। এখন যে-গ্রন্থ প্রায় পাঁচ-ছয় শতটাকা দাম।

কখনো আবার, গুঁড়ো চা, এ্যাভারেডি ব্যাটারি- দোকানে দোকানে গিয়ে বিক্রি করতে হয়েছে।

 

আবার কখনো ‘রাশিয়ান পাবলিকেশন -ভোস্তক’ – এর সঙ্গে যুক্ত থেকে বাড়ি-বাড়ি ও অফিসে-অফিসে গিয়ে বই বিক্রির কাজ করতে হয়েছে।

একটি কস্মেটিক্স অফিস থেকে কস্মেটিক্স এর বিভিন্ন রকম দ্রব্য নিয়ে Door to Door – Salesmanship, শেয়ার মার্কেটিং – এর সঙ্গে যুক্ত একটি ব্যাঙ্কের হয়ে ক্ল্যারিকাল পোস্টে কাজ, গ্রামে-গ্রামে, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে দুস্থ ছেলে, মেয়েদের স্বল্প মূল্যে ও বিনা মূল্যে পড়ানো, এসব কাজও করা হয়েছিল।

 

এছাড়া আরও মর্মান্তিক ঘটনা জীবনে ছড়িয়ে আছে, যা কখনো ভোলবার নয়!

 

আধুনিক সময়েও কবিতায় অপরিচিত আভিধানিক শব্দ ব্যবহার করে কবিতাকে তথা সাহিত্যকে প্রকরণ বদলানোর দিকে প্রবণতা। কারণ, আধুনিক সাহিত্য মানে কেবল সহজ শব্দের ব্যবহার থাকলে ভাষার মান তো নিচে নেমে যেতে থাকবে পরপর। তাই, সহজ শব্দ ব্যবহারের প্রবণতা থেকে কেউ না কেউ বেরুলে বাংলাভাষা সরে যাবে তার জায়গা থেকে, এমনটাই বিশ্বাস।

 

এখন মাঝে-মাঝে সরকারের দেওয়া দুস্থদের জন্য রাস্তায়-রাস্তায় ৫ (পাঁচ) টাকার ভাতের দোকান থেকে ভাত কিনে হাতে ধরে নিয়ে দুস্থ মানুষদের সাথে দাঁড়িয়ে খেতে হয়। এর মধ্য দিয়েও চলছে সাহিত্যের কাজ।

 

 

 

 

২০২২ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৬ টি

 

—————————————

 

১) কথা বাহার ( গান সংকলন), ১ম প্রকাশ -১ লা জানুয়ারি, ২০০১, (৬৪ পৃষ্ঠা)।

 

২) তৃতীয় পাণ্ডব ( কাব্য গ্রন্থ), ১ম প্রকাশ – কোলকাতা বইমেলা, ২০০৫,(৮২ পৃষ্ঠা)।

 

৩)ঞ্জানবীক্ষ্যের সনেট (কাব্য গ্রন্থ),১ম প্রকাশ -কোলকাতা বইমেলা, ২০০৭,(৭২পৃষ্ঠা)।

 

৪)অক্ষরবৃও ৩৬ মাএার ৫৬টি সনেট, (কাব্য গ্রন্থ), ১ম প্রকাশ -দুর্গা পুজো ১৪১৯/অক্টোবর -২০১২,(টাইটেল পেজ নিয়ে -৬৪পৃষ্ঠা)।

 

৫)জলতরঙ্গ (উপন্যাস-১ম খণ্ড), ১ম প্রকাশ -১৪২১/নভেম্বর -২০১৪,(১০৭পৃষ্ঠা)।

 

৬)সোনার বাংলা (কাব্য গ্রন্থ), ১ম প্রকাশ কোলকাতা বইমেলা, ২০১৮,(৭৮পৃষ্ঠা)।

 

 

 

 

এছাড়া বাংলা ও হিন্দি মিলে ১১টি গান রেকডিং হয়েছে। (বাংলা গান ৭টি এবং হিন্দি গান ৪টি)।

 

আরো একটি হিন্দি গান সুর করা হয়েছে এখন, পরে গীত হবে।অর্থাৎ এখন মোট ১২টি গান।

———————————

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Contact for Advertisers, Readers and Writers : email: info@kabyapot.com Whatsapp: 8240042145