Spread the love

প্রবন্ধ – ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ (প্রথম পর্ব)

✍️ শৌভিক

ঠাকুরের বাল্য লীলা 


প্রথমেই সশ্রদ্ধ মনে বলে রাখি যে, ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব পূর্ণ অবতার এবং শ্রী শ্রী মা সারদা হলেন স্বয়ং বিশ্ব জননী। সাধারণ মানুষের উদ্ধারের জন্যই তাঁরা আমাদের পৃথিবীতে আবির্ভূত এবং সেই প্রক্রিয়া আজও বিরাজমান। ঠাকুরের লীলা কাহিনীর অসীমতা স্পর্শ করার সাধ্য আমার কলমের নেই। তিনি অসীমতায় বিরাজমান চিরন্তন। প্রকৃত ভক্তরা ওনার জীবনের ঘটনাকে ঠাকুরের “ঐশ্বরিক লীলা” বলেই মনে করেন সবসময়, অনেকে আবার এইসব ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও করার চেষ্টা করেন।  আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ শ্রী রামকৃষ্ণের জীবনে অজস্র অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় ঠাকুরের জীবন কাহিনী গুলিতে।

শ্রী শ্রী ঠাকুরের জন্মের আগে তাঁর জন্ম সংক্রান্ত অলৌকিক বা ঐশ্বরিক সংকেত পেয়েছিলেন তাঁর বাবা এবং মা। রামকৃষ্ণের জননী চন্দ্রাদেবী একদিন শিব মন্দিরে গিয়েছিলেন পূজা দিতে। সেখানে এক দিব্য অলৌকিক অভিজ্ঞতা হয় তাঁর। তিনি অনুভব করেন, এক দিব্যজ্যোতি মহাদেবের শ্রীঅঙ্গ থেকে নির্গত হয়ে প্রবেশ করছে তাঁর শরী‌রে। এই ঘটনার কিছুদিন পরেই গর্ভবতী হন চন্দ্রা দেবী। ভগবান বিষ্ণুর অবতার – গদাধর স্বপ্নে জানিয়েছিলেন যে তিনি ক্ষু‌দিরামের সন্তান হিসাবে জন্মগ্রহণ করবেন এবং এর এক বছর পর জন্ম হয় শ্রী শ্রী ঠাকুরের। নাম রাখা হয় গদাধর।

গদাধরের বয়স যখন ছয় বছর, তখন বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে খেলাধুলার সময় তাঁর দৃষ্টি পথে আসে আকাশ। কৃষ্ণকায় মেঘের মাঝে এক ঝাঁক বকের উড়ে যাওয়া দেখে ভাবস্থ হয়ে মূ্র্চ্ছা যান তিনি। জ্ঞান ফেরার পর আবার স্বাভাবিক হন তিনি। এই ঘটনাকেই শ্রী শ্রী ঠাকুরের প্রথম ‘ভাবসমাধি’ হিসাবে স্মরণ করা হয়৷

ঠাকুরের বয়স যখন মাত্র আট বছর তখন গ্রামের মহিলাদের সঙ্গে কামার পুকুরের কাছ আনুড় গ্রামে বিশালাক্ষী দেবীর পুজো দিতে যাওয়ার সময়ে দেবীর নাম গান গাইতে গাইতে বালক গদাধর আবারও ভাবস্থ হয়ে‌ পড়েন। মহিলারা ভীত হয়ে দেবী বিশালাক্ষী স্মরণ করে তাঁর কৃপা প্রার্থনা করেন এবং কিছুপরে স্বাভাবিক হয়ে ওঠেন গদাধর।

বাল্যকালে একবার শিবরাত্রির সময়ে গ্রামের

সীতানাথ পাইনের বাড়িতে শিব সংক্রান্ত যাত্রা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা হয়েছিল কিন্তু অনুষ্ঠানে শিবের ভূমিকায় যাঁর অভিনয় করার কথা তিনি অনুপস্থিত হওয়ায় শিবের ভূমিকায় অভিনয় করেন বালক গদাধর এবং কিন্তু মঞ্চে উঠে আবার ভাবস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

একদা দুর্গা পজোয় মায়ের চোখ এঁকে ছিলেন বালক গদাধর। কথিত আছে, জমি জায়গা নিয়ে বিবাদের কারণে মামলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন ধর্মদাস লাহা। সেই মামলারই শুনানিতে হাজিরা দিতে চুচুঁড়া আদালতে যাচ্ছিলেন ধর্মদাস লাহা৷ পথের ক্লান্তির কারণে গাছের নীচে বিশ্রাম নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি৷ মা দুর্গা তাঁকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেন, ‘মামলায় তোরই জয় হবে, বাড়ি গিয়ে আমার পুজো কর আর খানাকুল থেকে দু’জন পটুয়া যাচ্ছে, তারাই আমার মূর্তি গড়বে।’ ধর্মদাস লাহা সত্যিই সেই মামলায় জিতেছিলেন এবং আনন্দে স্বপ্নের কথা ভুলেও গিয়েছিলেন৷ কিন্তু বাড়ি ফিরে চমকে যান – যখন দেখেন বাড়িতে খানাকুল থেকে দুই প্রতিমা শিল্পী এসে হাজির হয়েছেন৷ তাঁরা ধর্মদাসকে বলেন, ‘একটি ছোট্ট মেয়ে এসে আমাদের বলল এখানে দুর্গা প্রতিমা গড়তে হবে৷ তাই আমরা এখানে এসেছি৷’ কামার পুকুরের লাহাবাড়িতে সেই থেকে শুরু হয়েছিল দূর্গা পুজো৷ লাহাবাড়ির দুর্গা পুজোর পুরোহিত ছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের বাবা শ্রী ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় মহাশয়৷ বেশ কয়েক বছর তিনিই পুজো করেছিলেন৷ আর ছোট্ট গদাধর ওখানে তখন লাহাদের পাঠশালায় পড়াশোনা করতেন৷ বালক গদাধর আঁকায় ভীষণ পটু ছিলেন এবং মায়ের মূর্তিতে যে চোখ এঁকেছিলেন, সেই চক্ষুদানে মুগ্ধ হয়েছিলেন তৎকালীন দিনের সকলেই ! মায়ের চোখ এত জীবন্ত যেন স্বয়ং মা দুর্গা স্নেহশীলা নয়নে তাকিয়ে আছেন। পুজোর কটা দিন আজও যাত্রাপালার আসরও বসে সেখানে৷ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেব নিজে যাত্রা দেখতে ভীষণ ভালবাসতেন৷ তাঁর আগ্রহেই পুজোর চার দিন সেখানে যাত্রাপালা শুরু হয়েছিল৷ আজও সেই ঐতিহ্য বজায় রয়েছে৷ যে আটচালায় প্রাচীন পাঠশালা বসত এবং শ্রীরামকৃষ্ণ দেব তথা বালক গদাধর যেখানে পড়াশোনা করতেন, সেই আটচালা এখনও অক্ষত রাখা হয়েছে৷ ওই আটচালা আজও ঠাকুরের বাল্য স্মৃতি বহন করে চলেছে৷ মহালয়ার পরের দিন ঘট তোলা হয় এবং সেদিন থেকেই পুজোর কাজ শুরু হয়ে যায়। ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেবের স্মৃতি বিজড়িত এই পুুুুজো, এপার বাংলার ঐতিহ্য মন্ডিত প্রাচীনতম পুজো গুলির মধ্যে প্রথম সারিতে অবস্থান করে। ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের জন্মস্থান কামার পুকুরের লাহাবাড়ির পুজোর বয়স এখন দুশো বছরেরও বেশী৷ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত এই পুজোয় যেন আজও মা জগৎ জননী দুর্গা চিন্ময়ী রূপে বিরাজ করেন !

 

ঠাকুরের বিবাহ –

ঠাকুরের বিয়ে দেবেন বলে মনস্থ করেছেন মা চন্দ্রাদেবী আর দাদা রামেশ্বর কিন্তু পছন্দমতো পাত্রীর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। শেষে ভাবাবিষ্ট ঠাকুর নিজেই একদিন বলে দিলেন, ‘‘জয়রামবাটী গ্রামের শ্রীরামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে যে পঞ্চম বর্ষীয়া কন্যা, সেই আমার উপযুক্ত।’’ ঠাকুরের নির্দেশিত বাড়িতে খোঁজ করতেই সন্ধান মিলেছিল সারদামণি দেবীর। ১৮৫৯ সালে পঞ্চমবর্ষীয়া বালিকা সারদা দেবীর সঙ্গে  শাস্ত্রমতে বিয়ে হয় ঠাকুরের। তাঁর বয়স তখন তেইশ। ১৮৬০ সালের ডিসেম্বরে ঠাকুর, মা সারদা দেবীকে কামারপুকুরে রেখে কলকাতায় ফিরে আসেন – দক্ষিণেশ্বরে।

(চলবে)

তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার-

উদ্বোধন পুস্তক ও পত্রিকা –
স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ মহারাজ
স্বামী জয়ানন্দ মহারাজ।
স্বামী বিশ্বনাথানন্দ মহারাজ
স্বামী ভূমানন্দ মহারাজ
শ্রী মহেন্দ্রলাল গুপ্ত
শ্রী সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

 

নূপূর বন্দ্যোপাধ্যায়
কৃষ্ণ কুমার দাস
নিউজ এইটটিন বাংলা
সংবাদ প্রতিদিন

***********

লেখকের প্রবন্ধ বই “আলো” থেকে নেওয়া ধারাবাহিক

লেখক: শৌভিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Contact for Advertisers, Readers and Writers : email: info@kabyapot.com Whatsapp: 8240042145