Spread the love

কবিতা : আমি বাংলাভাষা বলবো 
   ——————————- 
   — ঋদেনদিক মিত্রো 

বাংলাভাষায় কথা বলবো না —
     কার ইচ্ছেতে চলবো? 
আমি বাঙালি, বাংলায় কথা বলবো!

কোন দেশে এটা সরকারী ভাষা, 
     কোন দেশে সেটা নয়, 
এইসব নিয়ে আদৌ করিনা —
     সময়টা অপচয়,  

আমি জানি বন্ধু, 
      বাংলা আমার গর্ব, 
                   পৃথিবীর বিস্ময়, 
দুশ্চিন্তায় আদৌ করিনা — 
      সময়টা অপচয়!

যে-ভাষা দিয়েছে একুশে ফেব্রুয়ারী,  
     “বিশ্বমাতৃভাষা-দিবসে”-তে গণ্য,
সেই ভাষা জানি এগিয়ে চলবে —  
      ভাবিনা তো তার জন্য, 
সেই ইতিহাস সকলেই জানো —  
   বাংলাভাষার জন্য লাখো
                শিশু হতে নরনারী, 
   প্রতিবাদ দিয়ে ঝড়কে জাগিয়ে —
   অন্য রকম রূপকথা-দেশে পাড়ি :– 
সেখান থেকেই কবি লিখলেন —
      “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো 
            একুশে ফেব্রুয়ারী!” 

তোমরা কাঁদছো না?  
         তোমরা কাঁদবে না? 
ওই মৃত্যুঞ্জয়ী লাসগুলোকে 
         দুটি হাত দিয়ে আগলে বাঁধবে না?

হ্যাঁ তো সেটাই একুশে ফেব্রুয়ারী, 
বাঙালিরা জানে বাঁচতে, বাঁচাতে, 
বাঙালিরা জানে সাজতে, সাজাতে,
ধর্ম, জাত এর বাইরে যাদের 
               প্রমাণটা ছিল, 
                 এই ইতিহাস তারই, 
হ্যাঁ তো সেটাই একুশে ফেব্রুয়ারী, —

ছিল সে কী উদ্দাম —
উনিশ শ বাহান্ন,  
                     পূর্বপাকিস্তান,
মনে পড়ে না কি সেই ইতিহাস —
    ভাষার জন্য বিশ্বে প্রথম 
              জীবনকে বলীদান, 

বরকত, রফিক, জব্বর,
                    শফিউর ও সালাম, 
এদের সঙ্গে আছে আরো কত 
                        অপ্রকাশিত নাম,
ভাষার জন্য বিশ্বে প্রথম 
               জীবনকে বলীদান!

মৃত ও আহত, ওদের সঙ্গে — 
     লাখো নরনারী আকাশ-উড়িয়ে 
             দিচ্ছে জয়োধ্বনি —
“আমাদের ভাষা বাংলা, 
আমাদের জাতি বাংলা”, —

ওই দূরে দেখা যায়, 
         আর কান পেতে শোনো এখনি! 

ওদের জয়োধ্বনি!

আর এক কাহিনী — উনিশ শ একষট্টি,
যে-ভাষা দিয়েছে উনিশে মে-এর স্মৃতি, 
   ভাষার জন্য বিশ্বে প্রথম
      নারী শহীদের নাম,  
         ষোড়শী কমলা ভট্টাচার্য
           নামে কোনো এক নারী, 
তার সাথে আরো দশ বারোজন 
                 দুরন্ত উদ্দাম — 
বুলেটের মুখে বুক পেতে ছিল — 
   ভারতে বরাক উপত্যকায়,
    বুকের ভিতরে বাংলাভাষাকে নিয়ে — 
       বুলেটকে রোখা যায়,   

ওদের থেকেই আমরা জেনেছি,  
      বাংলাভাষাটা তাই, 
         এতো গর্বের উচ্চ! 
জীবনকে বাজি রেখে হেঁটে যাও 
         সামনে মৃত্যু তুচ্ছ, 

আমি সেই বাঙালি, 
      চাইনা তো আর কোনো পরিচয় 
                কোনো পদমর্যাদা,

বাংলা আমার ভাষা,  
আমার জন্ম,  আমার মৃত্যু, 
                শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা,  

বাংলা ভাষায় বই পড়তে — 
                কত সুগভীর  সুখ,
                  বাংলা বই তো পড়বোই,
               
ভোরের আলোয় কিংবা বিকেলে
      জানালার পাশে বই, 
       কখনো বা খাটে, চেয়ারে, টেবিলে,
          কিংবা মাদুরে বসে, শুয়ে পড়া
               কখনো নীরবে, কখনো গল্পে 
                  আলোচনা হৈচৈ, 
বাংলা ভাষায় বই পড়তে
                কত সুগভীর সুখ,
                   কখনো রাত্রি জাগা,
ছোট্ট আলোয় নিবিড়তা নিয়ে
                সে যে কত সুখ, 
                    সত্যি যায় না ভাবা, 

আমি তো বাঙলি, 
         চাইনা তো আর কোনো পরিচয়, 
               কোনো পদমর্যাদা!

যেই ভাষাটাকে পৃথিবী চিনেছে, 
         বলেছে প্রাণের আলো,  
আমি,  সেই ভাষাটাই বলতে পারি গো, 
প্রতিবাদ নিয়ে জ্বলতে পারি গো, 
       যে-ভাষার  ইতিহাস বারেবার
             পৃথিবীকে চমকালো! 

সে-ভাষা আমার বাংলাভাষা, 
            বিশ্ব-প্রাণের আলো! 


=================================

================================
  ( 23 ও 25 মার্চ,  রাত্রে,  2021, A bengali poem brings tears like “Ami Banglabhasa Bolbo”, i.e. “I Must Tell Bengali” by Ridendick Mitro, India)  

     আমি বাংলাভাষা বলবো — মুক্ত ঘূর্ণন ছন্দে মিশ্র পঙতির অন্তমিলে লেখা কবিতাটি wabesite পত্রিকায় দেবার জন্য ইমেইলে লিখিতে-লিখিতে 2021, মার্চ 23 তারিখের রাত্তিরে একেলা শুইয়া মশারির ভিতর নীরবতার গৌরবে কাঁদিতেছিলাম! 25 তারিখে আবার লেখাটার মধ্যিখানে কিছু জুড়িয়াছি! বাংলাভাষা, বাঙালি জাতি,  বাংলাদেশ,  পশ্চিমবঙ্গ, —  এদের লইয়া বাংলা অনুভূতির মোট প্রায় একশত বাংলা ও ইংরেজি মৌলিক কবিতা (অনুবাদ নহে) ও সংগীত রচনা করিয়াছিলাম! সেই কবিতা ও সংগীতগুলি বারেবারে সংশোধন বা উৎকৃষ্টতা সাধন করিবার পর বাছাই করিয়া সম্মিলিত করিয়া একটি গ্রন্থ বাহির হইবার দিকে আগাইয়া যাইলেও করোনা (Corona) অতিমারী ও নিজস্ব আরো নানা লেখায় ব্যাস্ত থাকিবার কারণে, ওই  গ্রন্থটি প্রকাশে আপাত স্থগিত রাখিয়া ওই লেখাগুলি কোনটা-কোনটা প্রকাশ হইতে থাকিল বিবিধ রকম  ইন্টারনেট ও মুদ্রিত পত্রিকায়! 

     যদি এই কবিতাটিও পাঠক-পাঠিকাদিগকে মনোযোগী করিয়া থাকে, আমার বহু অভ্যাসের শ্রম সার্থক!

     একটা কথা বলি, একুশে ফেব্রুয়ারীর ভাষা আন্দোলনে আমরা শহীদদের নাম জানতাম প্রথমে সালাম,  বরকত, রফিক, জব্বর,  সফিউর, এর পাঁচ জনের! এই কবিতাটি লিখতে গিয়ে তাঁদের নাম কী ভাবে ব্যবহার করবো,  বা শহীদ ও আহতদের সঠিক তালিকা আমার জানা না থাকার জন্য আমি কী করবো-না-করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না! কিন্তু বহু পরিচিত কয়জনের নাম ব্যবহার করতেই হবে,  এই ধরণের কবিতায়! তাই সেই অনিবার্যতা মেনে নিয়ে সেই ভাবেই নাম কয়টি ব্যবহার করলাম!

     অন্যদিকে আমরা জানি,  এই 21 ফেব্রুয়ারী দিনটিকে 17 নভেম্বর 1999 সালে ইউনেস্কো (UNESCO)তাঁদের সম্মেলনে  “বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস” হিসেবে ঘোষণা করেন! এই দিবসের মানে হলো প্রতি বছর 21 ফেব্রুয়ারী দিনটিকে পৃথিবীর সব দেশ তাঁদের নিজস্ব দেশীয় ভাষাকে নিয়ে উৎসব করবে!

     এই প্রাপ্তির পেছনে ছিল বাংলাদেশ সরকার সহ বিদেশে প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশী ভাইদের চেষ্টা! তাঁদের নাম আমার জানা নেই,  কারণ,  ইতিহাস-পাঠে আমার অযোগ্যতা প্রখর!

     তাই আমি দুঃখ প্রকাশ করছি! তবে আপনাদের জানা দরকার তাঁদের নাম ও কী করে 21 শে ফেব্রুয়ারীকে “বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস” করা সম্ভব হলো,  তার পেছনের কাহিনী!

     ওইসব নাগরিকদের মেধাকে স্যালুট দিই,  কতটা প্রখর অনুভূতি দিয়ে তাঁরা বিষয়টাকে উপলব্ধি করেছিলেন,  আমরা যদি একটু গভীরে চিন্তা করি,  তাহলে চমকে উঠবোই!

     যাইহোক, শহীদের কাহিনীতে ফিরে যাই, আমার মনে হতো পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে মাত্র কি এই কজনের মৃত্যু হয়? বা মাত্র ওই কজন বিপন্ন হয়? 

     তাই এই জিজ্ঞাসা আমার মধ্যেই ছিল! পরে যেটুকু জেনেছি সেটা এই যে,  লেখক আহমদ রফিকের গ্রন্থ থেকে জানা যায় — আবদুল আওয়াল, কিশোর অহিউল্লাহ,  সিরাজুদ্দিনও শহীদ হয়েছেন!

     পরপর আরো জানা যায়, পুলিসের গুলিতে  অনেকেই নিহত হন,  যাঁদের সরিয়ে ফেলে পুলিশ, সেই সাথে আরো প্রায় একশত জন আহত হন,  তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাঁদের মধ্যে অনেকেই মারা যান,  যার কোনো তালিকা তখনকার শাসক পক্ষ রাখেনি!

     তাই তাঁদের সংখ্যা অনেক এবং অপ্রকাশিত!  তাই কবিতায় তাঁদের সকলের নাম আনা গেলো না! 

     21শে ফেব্রুয়ারীতে অনেকে মারা যান,  অনেকেই আহত হন, হাসপাতালে নিয়ে যাবার পর আহতদের দুর্গতি হয় নানা ভাবে, সে-কাহিনী আবার এক মর্মান্তিক ইতিহাস!

     আসলে ওই আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় পরের দিনগুলোতেও অনেকেই মারা যায়, আহত হয়!

     যেমন, একটি ছোট্ট উদাহরণ দিই, পরের দিন 22 শে ফেব্রুয়ারীতে সরকারের 144 ধারার বিরুদ্ধে আবার গনআন্দোলন হয়,  গত দিনে সরকারের নৃশংস আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে!

     সেই মিছিলকে গুঁড়িয়ে দিতে পুলিশ বাহিনী তাদের ট্রাক নিয়ে নৃশংসভাবে ওই মিছিল মাড়িয়ে যায়,  তখন সেখানে যারা মারা যায় — তাদের মধ্যে ছিল অজানা এক শিশু-বালক! সে তার আপন অনুভূতিতে নিজের ইচ্ছেতে মিছিলে যোগ দেয়! তাকেও পুলিশ ছাড়েনি! 

     আমরা কি ওই শিশুটির মন,  চিন্তা,  জ্ঞানের বিকাশ ও মহত্বকে পৃথিবীর কোনো দাঁড়ি-পাল্লায় পরিমাপ করতে পারবো?

     এখানেই পূর্ব পাকিস্তান,  মানে বর্তমান বাংলাদেশ-এর নাগরিকদের পরিচয়! কিংবা এমনটা ছড়িয়ে আছে সারা বাঙালি জাতির ভিতর! কে জানে! 

     আবার, উনিশ শ একষট্টি সালে 19শে মে আসামের বরাক উপত্যকায় রেল লাইন অবরোধ করে ওখানে থাকা উদ্বাস্তু ও স্থায়ী বাঙালি নাগরিকরা!  তখনকার আসাম সরকার ওখানে বাংলাভাষাকে উপযুক্ত গুরুত্ব না দিতে চাওয়ায় হাজার-হাজার বাংলাভাষী আন্দোলন করে!

     সেখানে প্রথম শহীদ ও মহিলা শহীদ হন ষোলো বছরের কমলা ভট্টাচার্য্য!  একটি উদ্বাস্তু গরীব সাধারণ মেয়ে! একই সাথে প্রাণদিল পরপর মোট এগারো জন!

     পরে জানা যায়, বারো নম্বর শহীদ যিনি হয়েছিলেন তিনি সেই আন্দোলনের সময় থেকে পরে চব্বিশ বা চৌত্রিশ বছর ধরে  — শরীরে ঢুকে থাকা বুলেট নিয়ে বেঁচে ছিলেন, নির্ভয়ে! তারপর তিনি মারা যান!

     তাঁর নামটি এই মুহূর্তে ভুলে গেছি, এই অপদার্থতা কোথায় রাখি!

সত্যি,  এই রকমের সৎ প্রতিবাদী মানুষ,নরনারী, শিশু, যাঁরা সারা পৃথিবীতে আছেন,  যাঁরা অন্যায়ের প্রতিবাদে নেমে শহীদ হন, কেউ বা আহত হন,  কেউ বিকলাঙ্গ হন,  কেউ বা মরতে এসেও কোনো ভাবে বেঁচে গিয়ে সুস্থ ভাবে বাড়ি ফিরে যান, তিনি মরে যেতে পারতেন, আহত হতে পারতেন, কিন্তু কোনোভাবে আঘাত পান নি,  কিন্তু নিজের সৎ সাহসের কাছে খাঁটি,  এইসব মানুষদের জন্য পৃথিবী বেঁচে আছে,  এঁরা কে কবি, লেখক, বিজ্ঞানী,  শিক্ষক,  এটা প্রশ্ন নয়,  এঁরা মানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে পৃথিবীর যেকোনো পরিচয়ের প্রতিবাদী,  এবং এঁরাই হলেন মহান,  তিনি বিখ্যাত কেউ কিংবা অখ্যাত বস্তিবাসী, সাধারণ  গৃহস্থ, ফুটপাথবাসী বা রিকশাওয়ালা, — ” মহান ”  শব্দটাই তাঁর বা তাঁদের পরিচয়!

     তাঁরা আমাকে সাহস দেন,  আর আমি অন্তরে অনুভব করি,  তাঁদের সাপেক্ষে আমার অস্তিত্ব কত তুচ্ছ! এটাই সত্য!

     এই সত্যটা বারেবারে অনুভব করেছি বলেই এই কবিতাটি লিখতে গিয়ে আকুল হয়ে কেঁদেছি,  একেলা, কিংবা একেলা নয় — কবিতার সাথে! অনেক কবিতা, উপন্যাস লিখতে গিয়ে গভীরে প্রবেশ করলে চোখে জল ধরে রাখতে পারি না,  তখন মনে হয় — হয়তো চুপিচুপি অন্তরে মানুষ হয়ে উঠছি, কিন্তু তাঁদের মত হলাম কই,  যাঁরা আমাদেরকে শেখান অন্যায়ের বিরুদ্ধে কী করে প্রতিবাদী হতে হয়,  অন্ধকারের  মাঝে কী করে আলো হতে হয়!

    
                       — ঋদেনদিক মিত্রো

     বিঃদ্রঃ- ঋদেনদিক মিত্রো (Ridendick Mitro),  পেশায় ইংরেজি ও বাংলাভাষায় (পৃথকভাবে লেখা হয়,  অনুবাদ নহে) কবি-ঔপন্যাসিক-গীতিকার-নিবন্ধকার,  একটি বিশ্বজাতীয় সংগীত “World anthem — we are the citizen of the Earth, ”  ও  “Corona anthem 2020 official bengali song” (আগ্রাসনের নেশার সাথে হিংসা সীমাছাড়া),  প্রভৃতি বিশেষ ধরণের সংগীতের রচয়িতা! 2020 পর্যন্ত বিবিধ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় কুড়িটি!

                  — Editor,  kabyapot.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *